বোধনের আগেই বিসর্জনের সুর বেজে উঠল চাঁচলে
top of page

বোধনের আগেই বিসর্জনের সুর বেজে উঠল চাঁচলে

চাঁচল ২ ব্লকের রামপুর গ্রামের রব্বুল সাহেবের মেয়ে নাজাদ বানু, বয়স ২৩। বছর পাঁচেক আগে দেখাশোনা করেই তাঁরা মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন চাঁচল থানার দেবীগঞ্জ গ্রামের যুবক ফজলুর হকের সঙ্গে। ফজলুর পেশায় শ্রমিক। রব্বুল জানান, বিয়ের সময় তিনি জামাইকে যথাসাধ্য পণ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই ফজলুর ও তার মা সাহানুর বিবি অতিরিক্ত পণের জন্য নাজাদকে চাপ দিতে শুরু করে। নাজাদ তাদের কথা মানবে না বলে জানিয়ে দিলে শুরু হয় অত্যাচার।


মারধরের পাশাপাশি তাকে না খাইয়েও রাখা হত। এনিয়ে দেবীগঞ্জ গ্রামে একাধিকবার সালিশি সভা বসে। সেই সব সভায় মাতব্বররা নাজাদের উপর যাতে কোনও অত্যাচার না চালানো হয়, তার জন্য ফজলুরদের নির্দেশ দেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং পুত্রবধূকে মারধরে হাত লাগাতে শুরু করে ফজলুরের বাবা ইলিয়াস আলিও। এরই মধ্যে বছর তিনেক আগে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় নাজাদ। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ফজলুররা। নাজাদের উপর অত্যাচারের মাত্রাও বেড়ে যায়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নাজাদ মাঝেমধ্যেই তাঁদের কাছে চলে আসত। বছর দেড়েক আগে সে চাঁচল মহকুমা আদালতে ফজলুর সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগও দায়ের করে। কিন্তু মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁরাই সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে বলেন মেয়েকে। তাঁদের কথা শুনে নাজাদ অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেই। সেটাই তাঁদের কাল হয়ে দাঁড়াল।



বোধনের আগেই বিসর্জনের সুর বেজে উঠল চাঁচল ২ ব্লকের রামপুর গ্রামে। গতকাল সকালে ওই গ্রামের বাসিন্দা রব্বুল হোসেনের মেয়ে নাজাদ বানুর মৃতদেহ উদ্ধার হল তাঁর শ্বশুরবাড়ির বারান্দা থেকে। দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হল বিষের খালি শিশিও।

রব্বুল সাহেব জানান, এদিন সকালে নাজাদের পড়শিরা তাঁদের ফোন করে জানান, গতকাল রাতে নাজাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছে ফজলুররা। সকাল থেকে তাদের বাড়ির কাউকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। সেই খবর শুনেই আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেন তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান দেবীগঞ্জে। ফজলুরদের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, বারান্দায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে তাঁর মেয়ে। পাশেই পড়ে রয়েছে বিষের একটি খালি শিশি। ফজলুর কিংবা তার বাড়ির কেউ সেখানে নেই। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে নাজাদকে চাঁচল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ নাজাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় তিনি ফজলুর, তার বাবা-মা সহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে চাঁচল থানায় নাজাদকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন।

চাঁচল থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মৃতদেহটি মালদা মেডিক্যালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page