উত্তরবঙ্গে প্রথম, ট্রান্সজেন্ডার অস্ত্রোপচার মালদায়
মালদা মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মলয় সরকারের নেতৃত্বাধীন ৮ চিকিৎসকের একটি দল শনিবার তিন ঘন্টার সফল অস্ত্রোপচার করে এক কিশোরীর পুরুষাঙ্গ মহিলা যৌনাঙ্গে রূপান্তরিত করে। চিকিৎসকদের দাবি, শুধুমাত্র মালদা নয়, উত্তরবঙ্গে এমন অস্ত্রোপচার প্রথম হল।
জিন ও ক্রোমজোমের গঠন অনুযায়ী সে ছিল মেয়ে, বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সে আবার ছেলে। কিশোরীর যৌনাঙ্গটি ছিল পুরুষদের মতো। স্বাভাবিকভাবেই এতে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন তার বাড়ির লোকজন। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি। শেষ পর্যন্ত তঁদের মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং সেই কিশোরীর সফল অস্ত্রোপচার করে নজির তৈরি করল মালদা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পুরুষাঙ্গের মতো একটি উপবৃদ্ধি ওই কিশোরীর স্ত্রী যৌনাঙ্গটিকে ঢেকে দিচ্ছিল। যোনিপথটি ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল ওই উপবৃদ্ধির মতো প্রত্যঙ্গটিতে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে অ্যাম্বিগুয়াস জেনিটেলিয়া অর্থাৎ সন্দেহজনক যৌনাঙ্গ বলা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্ত্রী যৌনাঙ্গের উত্তেজনার কেন্দ্র ক্লাইটোরিস অর্থাৎ ভগাঙ্কুরের দৈর্ঘ্য থাকার কথা ২.৫ সেন্টিমিটার। কিন্তু ১০ বছর বয়সী এই কিশোরীর তা ছিল প্রায় ৮ সেন্টিমিটার। শুধু তাই নয়, তার ভগাঙ্কুরটি ক্রমশঃ বাড়ছিল।
মালদা মেডিক্যাল কলেজে আসার পরেই ওই কিশোরীকে নিয়ে কার্যত মেতে ওঠেন চিকিৎসকরা। গঠিত হয় ৮ জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি বোর্ড। তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মলয় সরকার। মলয়বাবু ছাড়াও ইউনিট সি দলটিতে ছিলেন জয়দেব মণ্ডল, রাজমোহন ঘোষ, দিব্যেন্দু রায়, সুনীত সরকার, নয়না দাস, দীপিকা মন্ডল ও অজ্ঞান বিশেষজ্ঞ সুবীর ব্রহ্ম। মলয়বাবু জানান, এটি একটি জন্মগত ত্রুটি। চিকিৎসা পরিভাষায় একে ফিমেল সিউডো হারমোন ফ্রোডিটও বলা হয়। এদেরই মানুষ হিজড়ে হিসেবে চেনে। এই কিশোরীর ক্ষেত্রে কোনও যোনিপথ ছিল না। বাইরের যৌনাঙ্গটি দেখতে ছিল পুরুষাঙ্গের মতো। মূত্রপথের ছিদ্রটাও পরিষ্কার ছিল না। তার আচরণ ছিল মেয়েদের মতোই। আমরা তার জিন ও ক্রোমজোম স্টাডি করেছি। পরীক্ষা করে জানতে পারি, ওই কিশোরীর জরায়ু সহ সব স্ত্রী প্রত্যঙ্গই বর্তমান। নিশ্চিত হয়েই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই আমরা। ভগাঙ্কুরটি কেটে ছোটো করে দেওয়া হয়। কৃত্রিমভাবে যোনিপথ তৈরি করা হয়। এবার তার যৌনাঙ্গটি পরিপূর্ণতা পেয়েছে। তবে আরও কিছুদিন তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
জানা গিয়েছে, কিশোরীর জন্মের পর থেকেই বাড়ির লোকেরা তার পুরুষাঙ্গের মতো উপবৃদ্ধিটি দেখতে পান। তাই ওই কিশোরী ছেলে না মেয়ে, সে ব্যাপারে কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারছিলেন তাঁরা। পুকুরিয়া থানা এলাকায় তার বাড়ি। বাবা পেশায় শ্রমিক। আর্থিক অভাবে ছোট বয়সে মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারেননি। তবে এখন খুশি কিশোরীর বাড়ির লোকজন। তার জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
যদিও সে ভবিষ্যতে মাতৃত্বের স্বাদ পাবে না কিন্তু সে একজন নারী হয়ে সুন্দর ও সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ অধ্যক্ষ ডা. জ্যোতিষ দাস বলেন যে শুধু মালদা নয় সমগ্র উত্তরবঙ্গে এই প্রথম এই ধরণের জটিল অস্ত্রোপচার করা হলো। কোনো বেসরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করতে গেলে কমপক্ষে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হত, সেখানে মালদা মেডিক্যাল কলেজে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই জটিল অস্ত্রোপচার সফল করেছেন চিকিৎসকেরা।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
टिप्पणियां