গৌড়ের পূণ্যভূমেও করোনার থাবা, এবছর বন্ধ রামকেলি মেলা
মালদা জেলার গৌড়ে অবস্থান প্রসিদ্ধ বৈষ্ণবতীর্থ রামকেলি গ্রামের। প্রায় ৫০৬ বছর আগে ১৫১৫ সালে ১৫ জুন জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে চৈতন্য মহাপ্রভু গৌড় রাজ্যের রামকেলি গ্রামে পদার্পণ করেছিলেন। তাঁর এই পদার্পণ উপলক্ষে চার দিন ব্যাপী রামকেলি উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর। তবে এবছর করোনার প্রভাব পড়েছে রামকেলি মেলাতেও। করোনা সংক্রমণ রুখতেই স্থগিত রাখা হচ্ছে রামকেলি মেলা। কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মেলা কমিটির সম্পাদক।
প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কথা মেলা কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ মেলা কমিটির সম্পাদক সুনীল ঘোষ বলেন, জেলাপরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের জন্য এবার আর মেলা করা হবে না৷ তার নোটিসও জারি হয়ে গিয়েছে৷ গত ৫০৫ বছরে এই মেলা কোনোদিনও বন্ধ হয়নি৷ প্রতিবছর এই মেলায় প্রায় সাত লাখ পুণ্যার্থী আসেন৷ মেলার সাতদিনে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয়৷
[ আরও খবরঃ মালদায় অপরাজিত ট্রিপল সেঞ্চুরি করোনার ]
জেলার অন্যতম ব্যবসায়ী ও রামকেলি শ্রীশ্রী রূপ-সনাতন মিলন মন্দির ও বৈষ্ণব শাস্ত্রচর্চা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, রামকেলি মেলা বন্ধ হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা৷ প্রায় দুই হাজার ব্যবসায়ী নিজেদের সামগ্রী নিয়ে মেলায় আসেন। মেলার কয়েকদিনে প্রায় ১০ কোটি টাকার ব্যবসা করেন তাঁরা৷ এই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর একাংশের সারা বছরের অর্থনীতি নির্ভর করে। মেলাকে কেন্দ্র করে পরিবহণ ও পর্যটন শিল্পেও আরও ১০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়৷
রবিবার ইংরেজবাজারের বৃন্দাবনী ময়দান এলাকায় চৈতন্যদেবের মূর্তিতে মাল্যদান করেন ইংরেজবাজার পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য দুলাল সরকার। গবেষকদের মতে রামকেলি ধামে যাওয়ার পথে এই বৃন্দাবনী ময়দানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সনাতন ধর্মের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্যদেব। উল্লেখ্য, এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। কথিত রয়েছে, তৎকালীন গৌড়ের বাদশাহ হোসেন শাহর আমলে মন্ত্রীসভায় ছিলেন মহাবৈষ্ণব বলে পরিচিত রূপ ও সনাতন গোস্বামী। তাঁরা ১৫০৯ খ্রিষ্টাব্দে রামকেলিতে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁরা বৃন্দাবনের আদলে রামকেলিতে আটটি কুণ্ড অর্থাৎ পুকুর খনন করেন। রূপ ও সনাতন রামকেলিকে কার্যত বৃন্দাবনের রূপ দিতে চেয়েছিলেন।
Comments