বিচারের দাবিতে ক্যানভাস হল নজরুল সরণী
আরও একটা প্রতিবাদের রাত৷ আরও একবার সুবিচারের দাবি৷ আরও একবার প্রতিবাদের স্লোগান প্রতি কণ্ঠে৷ আরও একবার রাতের দখল নিল নারীশক্তি৷
৯ থেকে ২৫ অগাস্ট৷ মধ্যের ১৬টা দিন শহর থেকে গ্রাম, রাজ্য থেকে দেশ, দেশ থেকে পৃথিবী কীভাবে একটা সুতোয় বেঁধেছে, তার প্রমাণ পেয়েছে অভয়া৷ সে দেখেছে, যারা তাকে ছিন্নভিন্ন করে সময়ের আগেই স্তব্ধ করে দিয়েছে, তাদের প্রতি মানুষের মনে ঠিক কতটা ঘৃণা জমে রয়েছে৷ অভয়া জানে, সে বিচার না পেলে কেউ থামবে না৷ যে চাহিদায় মুখিয়ে রয়েছে সবাই৷ সেখানে কোনও জাতপাত নেই, ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই, গরীব আর বড়লোকের দূরত্ব নেই৷
অভয়ার বিচার চাই৷ গর্জন উঠেছিল সেই প্রথম দিনই৷ মানব গর্জনে খানিকটা টলে গিয়েছিল রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের চিনের প্রাচীরের মতো মানসিক দৃঢ়তা৷ যা একদিন নয়, দু’দিন পথে নামতে বাধ্য করেছিল তাঁকে৷ প্রকাশ্যে দোষীদের ফাঁসি চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি৷ যদিও তাঁর দফতরেরই পুলিশের কাণ্ডকারখানা দেখে প্রশ্ন উঠেছিল, মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য দাবি কি শুধুই নিজের মসনদ ধরে রাখার জন্য? নইলে কেন তাঁর পুলিশ অভয়ার মৃতদেহের সৎকার করার পর আত্মহত্যার লিখিত অভিযোগ দায়ের করল? কেন পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি ছাড়াই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হল? কেন অভয়াকে শ্মশানে নিয়ে যেতে খাকি উর্দিধারীরা অত ব্যস্ত ছিল? এমন অনেক কেন জমে রয়েছে মানুষের মনে৷ সেসব একজোট হলে কিন্তু শাসকের বিদায় নিশ্চিত৷ অন্তত তেমনটাই বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের৷ উদাহরণ হিসাবে তাঁরা পাশের দেশের ‘দিদির’ প্রসঙ্গ সামনে টেনে আনছেন৷
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কি নিজে পথে নেমে রাজ্যের নারীশক্তিকে আলাদা শক্তি দিলেন? ১৪ অগাস্ট৷ কালিম্পং থেকে কাকদ্বীপ একজোট৷ রাতের দখল নেওয়ার সওয়াল নারীশক্তির৷ সেদিনের আন্দোলন বুঝিয়ে দিল, অভয়া নিজে নিভে গিয়েও একটা নতুন ভোরের জন্ম দিয়েছে৷ দফা এক, দাবি একে বেঁধে ফেলতে পেরেছে সবাইকে৷ যে দলে শুধু নারী নয়, রয়েছে পুরুষও৷ সুবিচারের দাবিতে আদপে এই বাংলাতেও এক জন আন্দোলন সংগঠিত হতে চলেছে৷ শুধু সময়ের অপেক্ষা৷
১৪ থেকে ২৫৷ এই ১১ দিনে তিনবার মালদা শহরে রাতের দখল নিয়েছে নারী৷ সঙ্গী পুরুষ৷ রবিবারও শহরের নজরুল সরণী চলে যায় প্রতিবাদীদের দখলে৷ রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সেই রাস্তার দখল নেয় ‘মানুষ’৷ শুরু হয় প্রতিবাদের গান৷ প্রতিবাদের রং পড়তে শুরু করে রাস্তায়, ক্যানভাসে৷ যে যেভাবে পেরেছেন, গলার শিরা ফুলিয়ে প্রতিবাদের ভাষা মুখ দিয়ে বের করছেন৷ দেখে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে রাজনীতির কারবারিরা৷ আগে মানুষ, তার জন্য রাজনীতি৷
শুধুই কি নারী-পুরুষ৷ গতকাল নজরুল সরণীতে ভবিষ্যতের রংও দেখেছে মালদা৷ রাত দেড়টায় তুলি হাতে রাস্তায় রং ঘষতে ঘষতে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছে ছ’বছরের অন্নিতা৷ রাত আড়াইটেয় তীক্ষ্ণকণ্ঠের ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে নিস্তব্ধতা ভেঙেছে সাত বছরের নারায়ণ৷ তাদের প্রতিবাদের ভাষা শিরা-ধমনী দিয়ে বয়ে গিয়েছে বড়দের৷ রাত আরও দীর্ঘ হয়েছে৷ দীর্ঘতর হয়েছে প্রতিবাদের ভাষা৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
コメント