বৃদ্ধ মা-বাবা’র সংসারে বোঝা হয়ে থাকতে চায় না এই মেয়ে। ছোটোবেলার এক দুর্ঘটনায় দুই চোখ হারিয়েছিলেন। কোনোদিন জোটে নি কোনোধরণের সরকারি সাহায্য। চরম হতাশার শিকার মমতা দাস এদিন হরিচন্দ্রপুর ব্লক অফিসে গিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেন। স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন ঘিরে চরম উত্তেজনা জেলায়। সরকারের তরফে মমতার জন্য কিছু সাহায্য করা যায় কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন জয়েন্ট বিডিও মধুরিমা চক্রবর্তী।
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ১ নং ব্লকের বারোডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মমতা দাসের বাড়িতে ছয় ভাইবোন। তিনি বাড়িতে সবচাইতে বড়ো। তাঁর তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে বড়ো দুই ভাই আলাদা সংসার করে। দুই ভাই টোটো চালায়। বাবা নিধির দাস ও মা নমিতা দাস দুজনেই দিনমজুর। এখন অসহায় মমতার একমাত্র সম্বল তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা।
সুনিতা দাস, মমতা দাসের মা
কুড়ি বছর বয়সে মমতার পায়ে শিঙি মাছের কাটা ঢুকে যায় সেই কাটার বিষে তাঁর মেয়ের দুই চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সে সময় অনেক জায়গায় চিকিৎসা করা হয়েছিল কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এরপর অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনকারী মমতা দাস জানালেন তিনি কোনো ধরণেরই সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। তার প্রতিবন্ধী শংসাপত্র রয়েছে। আগের পঞ্চায়েত থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু সেটিও এখন অনিয়মিত হয়ে গেছে। এখন বৃদ্ধ বাবা-মার কাছে আর বোঝা হতে চান না, তাই প্রশাসনের দরবারে আত্মহত্যার জন্য আবেদন করছেন।
মমতা দাসের গ্রামের এক বাসিন্দা মধুসূদন মন্ডল জানালেন, তিনি ছোটো থেকেই মমতা দাসকে এভাবেই দেখছেন। পুকুর থেকে তোলা মাছ খেতে গিয়ে কাটা ঢুকে বিষক্রিয়ায় চোখ দুটি মমতার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সে সময় তার বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় চিকিৎসা করা হয় কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। প্রশাসনের উচিত এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।
শুক্রবার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের জয়েন্ট বিডিও মধুরিমা চক্রবর্তীর কাছে তিনি তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য আবেদন জানান। এ প্রসঙ্গে জয়েন্ট বিডিও জানালেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কোনধরনের সাহায্য সরকার থেকে মমতার জন্য করা যায় কিনা সে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
Comments