গুপ্ত বৃন্দাবনে মাতৃ পিণ্ডদান
৯২১ বঙ্গাব্দের ৩১ শে জ্যৈষ্ঠ, আজ থেকে পাঁচশো বছরের আগের কথা। গৌড় নগরীর রামকেলিতে পৌঁছান মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব। মহা বৈষ্ণব রূপ ও সনাতনের সঙ্গে দেখা করাই ছিল তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য। চৈতন্যদেব রূপ ও সনাতনের সঙ্গে দেখা করার সময় রামকেলির পরিবেশ দেখে এই জনপদকে গুপ্ত বৃন্দাবন আখ্যা দিয়েছিলেন।
১৫১৫ সালের ১৫ই জুন রামকেলিতে পদার্পণ করেন মহাপ্রভু। সেসময়ে গৌড়ের শাসক ছিলেন সুলতান হুসেন শাহ। সুলতানের দুই দরবারি সাকর মল্লিক আর দবির খাসই আদপে রূপ ও সনাতন। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে পাঁচশো বছরেরও বেশি সময় ধরে রামকেলিতে মেলা বসে। মেলায় ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই শুধু নয়, প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকেও বৈষ্ণব ভক্তরা আসেন। অনেকে আজও এখানে আসেন মনের মানুষের খোঁজে।
দিন কয়েকের জন্য রামকেলি যেন প্রাচীনকালে ফিরে যায়। মদনমোহনের মন্দিরের সামনে রাস্তার দুইধারে বৈষ্ণবদের আখড়াগুলো কীর্তন, গানে মুখরিত হয়ে ওঠে। খোল, করতাল, ঢোল সহ নানা বাদ্যযন্ত্রের দোকান বসে মেলায়। বসে খাবার ও গেরস্থালীর দোকানও। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। করোনাতে দূরে ঠেলে এবার মেলা শুরু হয়ে গেছে রামকেলিতে।
রামকেলি মেলার একটি বিশেষত্ব হল, বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে এই সময়ে মাতৃ পিণ্ডদান হয়। এককালে এখান দিয়ে বয়ে যেত জাহ্নবী নদী। লুপ্ত সেই নদীর কাছেই মাতৃ পিণ্ডদান করা হয়। বঙ্গদেশ ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে অনেকে রামকেলি মেলার সময়ে মায়ের পিণ্ডদানের উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। ভবপারে পিণ্ড পাঠানোর জন্য প্রতীকী নৌকাও আছে।
ইতিহাসের সঙ্গে মিশে রামকেলির নাম। তবে দীর্ঘ দিন এই জনপদ অবহেলিত থেকেছে। বর্তমান রাজ্য সরকার রামকেলিকে পর্যটন মানচিত্রে নিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়। ২০১৪ সালে রামকেলিতে মদনমোহন মন্দিরের সামনে মহাপ্রভুর বিশালাকার মূর্তি স্থাপন করা হয় কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির উদ্যোগে। সেই থেকে মেলার দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছে সরকার।
এবছরও ধূমধামের সঙ্গে রামকেলিতে মেলার সূচনা হয়েছে। তবে রামকেলিকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অধ্যাপক পুষ্পজিত রায়ও সেই আশাই দেখতেন। তাঁর আশা ছিল, রামকেলিতে হোমস্টে করা যেতে পারে। তাতে স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশ হবে। তবে পুষ্পজিতবাবুর স্বপ্নপূরণে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।
[ আরও খবরঃ সাতদিন ধরে নিখোঁজ সিভিক ভলান্টিয়ার, অপহরণের আশঙ্কা ]
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Opmerkingen