পাগলামি, নাকি বর্ন কিলার৷ আসিফে ঘাম ঝরছে পুলিশের
top of page

পাগলামি, নাকি বর্ন কিলার৷ আসিফে ঘাম ঝরছে পুলিশের

জট পাকানো সুতোগুলো খুলতে শুরু করেছে৷ তবে এখনও সম্পূর্ণ জট খোলা যায়নি৷ সেই কাজ চলছে৷ তবে কালিয়াচকের পুরোনো ১৬ মাইলে খুনকাণ্ডের কিনারা করতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হচ্ছে পুলিশকে৷ মূল অভিযুক্ত আসিফ মোহম্মদ নিজের দোষ স্বীকার করে নিলেও এই ঘটনায় এত প্রশ্ন মিশে রয়েছে, তার উত্তর খুঁজে বের করতে নাজেহাল পুলিশ৷


Police-have-to-work-hard-to-put-an-end-Kaliachak-murder

তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সিআইডি কিংবা এসটিএফ সংক্রান্ত যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা ভ্রান্ত বলেই জানাচ্ছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ৷ তাঁদের দাবি, গোটা ঘটনার তদন্ত পুলিশই করছে৷ বড়ো খবর বলে সিআইডির একটি প্রতিনিধি দল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মালদায় এসেছিল৷ পুলিশের তরফে তদন্তের প্রক্রিয়া শেষ হতে আর হাতে গোনা কয়েকদিন বাকি৷ এদিকে বৃহস্পতিবার আসিফ মোহম্মদের দাদা আরিফ মোহম্মদ ও তার মামার গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করতে তাদের মালদা জেলা আদালত চত্বরে নিয়ে আসা হয়েছে।

আপাতত তদন্তরত পুলিশের সামনে যে প্রশ্নগুলি বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে সেগুলি হল, আসিফ মানসিকভাবে সুস্থ কিনা, সে তার বাবা জাওয়াদ আলিকে কোনও কারণে ব্ল্যাক মেইল করত কিনা, সম্পত্তি হাতাতেই তার খুনের ছক কিনা, বাবাকে ব্ল্যাক মেইল করে টাকা আদায় করে গেলেও কী কারণে পরিবারের সবাইকে খুনের ছক কষেছিল, জাওয়াদ সাহেব ছোটো ছেলেকে কেন ভয় পেতেন, তাঁর ক্ষতি হতে পারে এমন কোনও অজানা তথ্য আসিফ জেনে ফেলেছিল কিনা, চোরাচালানে জড়িত জাওয়াদ সাহেবের সঙ্গে পুরোনো গ্যাং-এর কোনও বিরোধ তৈরি হয়েছিল কিনা, সেই গ্যাং-এর মগজধোলাইয়ে আসিফ বাড়ির সবাইকে নিকেশ করার ছক কষেছিল কিনা, অদ্ভুতুড়ে এমন গুদামঘর কোন রাজমিস্ত্রি তৈরি করেছিল, গুদামঘরের পূর্ণাঙ্গ নকশা কী ছিল, আসিফ ডিপ ওয়েবে ঢোকার মতো বিষয় জানলেও ডার্ক ওয়েবে পারদর্শী কিনা, কোনও ইংরেজি ক্রাইম সিরিজ বা মুভি দেখে সে খুনের পরিকল্পনা করেছিল কিনা, এই ঘটনায় কোনও মহিলা যোগ রয়েছে কিনা, এত আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ সে কোথায় থেকে সংগ্রহ করেছিল, কত টাকায় সে অস্ত্রগুলি কিনেছিল, এত অস্ত্রের প্রয়োজনটাই বা কেন ছিল, অস্ত্র কারবারিদের সঙ্গে তার পরিচয় কে করিয়ে দিয়েছিল, খুনের পর দেহগুলির পচন এড়াতে বা দুর্গন্ধ ঢাকতে সে কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করেছিল কিনা, এমন অনেক প্রশ্ন ভিড় করছে তদন্তকারীদের৷

এই ঘটনার তদন্তে নেমে দুঁদে পুলিশ অফিসাররাও আসিফের ইস্পাতকঠিন স্নায়ু দেখে বিস্মিত৷ ১৯ বছরের একটি ছেলে খুনের এমন ছক কীভাবে তৈরি করল তা বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা৷ পুলিশসুপার জানিয়েছেন, নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেশা করত আসিফ৷ জানা যাচ্ছে, সেই ওষুধ পেতে সে জাল প্রেসক্রিপশনও বানিয়েছিল৷ কিন্তু সে বাড়ির বাইরে বেরোত না বলেই জানাচ্ছেন আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীরা৷ তাহলে তাকে সেই ওষুধ কে কিনে দিত? সেটাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ৷ আসিফের ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন ঘেঁটে তদন্তকারীরা দেখেছেন, তাতে কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়েই বেশি সার্চ করা হয়েছে৷ ইংরেজি মুভি ও ক্রাইম সিরিজও দেখার অভ্যেস ছিল আসিফের৷ কিন্তু গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ একটি ছেলে ইংরেজি মুভি কিংবা সিরিজের ভাষা কি সম্পূর্ণ বুঝতে পারত? বোঝার চেষ্টা চলছে৷



তবে এখনও তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আসিফ৷ একই প্রশ্নের উত্তরে একেকবার একেক রকম জবাব দিচ্ছে সে৷ এর আগে গত ১০ মার্চ গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ৷ ততদিনে সে পরিবারের চারজনকে খুন করে ফেলেছে৷ গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, আসিফের গতিবিধি তাঁদের ভালো ঠেকছে না৷ সে জঙ্গি দলের সদস্য হতে পারে৷ কিন্তু থানায় নিয়ে গিয়ে তাকে জেরা করে এবং তার ল্যাপটপ ও ফোন পরীক্ষা করে সেই সময় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে দাবি পুলিশের৷ তাই পরদিনই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল৷ জানা যাচ্ছে, সেই ঘটনার পর নিজেকে আরও গুটিয়ে নেয় আসিফ৷ ঘর থেকে প্রায় বেরোতই না সে৷ হাতে গোনা দু’চারজন বন্ধু ছাড়া বাড়িতেও কাউকে ঢুকতে দিত না৷ তবে পুলিশসুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়ে দিয়েছেন, খুনকাণ্ডের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর তাঁরা প্রায় পেয়ে গিয়েছেন৷ তবে অস্ত্র ইশ্যুতে এখনও কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তাঁরা৷ তাঁর আশা, এক মাসের আগেই তাঁরা দুটি মামলারই চার্জশিট পেশ করতে পারবেন৷


এদিকে শেষ পাওয়া খবরে, কালিয়াচক খুনকাণ্ডে অভিযুক্ত আসিফ মোহম্মদের দাদা আরিফ মোহম্মদ ও তার মামাকে মালদা জেলা আদালত চত্বরে নিয়ে আসা হয়েছে। আজ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারায় গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে।


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page