বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি মালদায়, জল ঢুকল গাজোলেও
top of page

বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি মালদায়, জল ঢুকল গাজোলেও

জল বাড়ছে গঙ্গা ও মহানন্দার৷ তবে গঙ্গার জল বৃদ্ধির পরিমাণ ততটা বিপজ্জনক এখনও হয়নি৷ কিন্তু মহানন্দার জল বাড়ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে৷ এদিন গঙ্গার জলস্তর রয়েছে ২৪.৪০ মিটার৷ সর্বোচ্চ বিপদসীমা থেকে এখনও ০.৯০ মিটার নীচ দিয়ে বইছে গঙ্গা৷ এদিন বেলা ১২টা মহানন্দার জলস্তর ছিল ২১.৫৩ মিটার৷ আর মাত্র ২২ সেন্টিমিটার জল বাড়লেই সর্বোচ্চ বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলবে মহানন্দা৷ বর্তমানে মহানন্দা বিপদসীমার থেকে ০.৫৩ মিটার উচ্চতায় বইছে৷ এদিন সকাল থেকে ফুলহরের জল স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে বলে সেচ দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে৷ বেলা ১২টায় ফুলহরের জলস্তর ছিল ২৮.৩৫ মিটার৷ যা সর্বোচ্চ বিপদসীমা৷


ফুলহরের জলস্তর কমতে শুরু করলেও হরিশ্চন্দ্রপুরের বারদুয়ারিতে নদীর রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে৷ এর ফলে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ও ২, চাঁচল ১ ও ২ এবং রতুয়া ১ ব্লকের বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে৷ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ৷ এদিন সকাল থেকে ভালুকা-তুলসিহাটা রাজ্য সড়কে ব্রিজের উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করায় ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ এদিকে দুর্গত এলাকাগুলিতে এখনও সরকারি ত্রাণ পৌঁছোয়নি বলে অভিযোগ৷ তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের মধ্যে৷ ভালুকা এলাকার জলবন্দিরা জানান, বন্যায় বাড়িঘর সব ভেঙে গিয়েছে তাঁদের৷ পরিবার নিয়ে রাস্তায় থাকছেন৷ এখনও পর্যন্ত ত্রাণ কিছুই পাননি তাঁরা৷ পেটে খাবার নেই৷ গবাদি পশুকেও খাবার দিতে পারছেন না৷ চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন সবাই৷ এদিকে এদিন রতুয়া ২ ব্লকের পরাণপুরে নদীতে দাগ দেওয়া পাট বাঁচাতে গিয়ে জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন আসরাফুল হক (৪৩) নামে এক কৃষক৷ এখনও তাঁর দেহ উদ্ধার করা যায়নি৷

বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি মালদায়

বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে বামনগোলা ব্লকেও৷ বেশ কিছু রাস্তার উপর দিয়ে বইছে জল৷ এখানে পুনর্ভবা, টাঙন ও ব্রাহ্মণী মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে৷ এদিন সকাল থেকে মালদা থেকে বালুরঘাট যাওয়ার বিকল্প রাস্তার উপর দিয়েও জলের স্রোত৷ ফলে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে নেমে আসা জলেই ওই ব্লক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ প্রায় ২৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দি৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এই মুহূর্তে সেখানে গিয়েছেন জেলাশাসক৷

গতকাল রাত থেকে টাঙন নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে গাজোলের চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামেও৷ গতকাল রাতে ওই এলাকার ডোবা খোকসান গ্রামে টাঙনের বাঁধ ভাঙে৷ বিপন্ন হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ৷ তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রওয়ানা দিচ্ছেন৷ এদিন সকালে ওই এলাকা পরিদর্শনে যান বিডিও বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী ও বিদায়ক দীপালি বিশ্বাস৷ দীপালিদেবী বলেন, গতকাল রাতেই তিনি খবর পান, টাঙনের জলে চাকনগর এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকে পড়েছে৷ খবর পেয়ে এদিন তিনি এলাকা পরিদর্শনে যান৷ দেখেন, সত্যিই দুর্বিষহ পরিস্থিতি৷ বাড়িঘর সহ চাষের জমি ভেসে গিয়েছে৷ ধান সহ শাক সবজির জমিও জলের তলায়৷ তিনি গোটা পরিস্থিতি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাচ্ছেন৷


জল ঢুকল গাজোলেও

মহানন্দার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছে ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা পৌরসভার নীচু ওয়ার্ডগুলি৷ এই দুই এলাকাতেও বেশ কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন৷ পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ বলেন, সকাল থেকে তাঁরা জলবন্দি মানুষজনকে এলাকার স্কুলগুলিতে সরিয়ে নিচ্ছেন৷ বন্যার জন্য রাজ্য সরকার আগামী ১৯ অগাস্ট পর্যন্ত স্কুলগুলিতে ছুটি ঘোষণা করেছে৷ ফলে বন্যার্ত মানুষদের স্কুলে রাখার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই৷ দুর্গত মানুষজন যাতে যথাযথ ত্রাণ পান, তাও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা৷

জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য এদিন জানান, আপাতত জেলার ১৫টি ব্লকের মধ্যে ৬টি ব্লক বন্যা কবলিত৷ ব্লকগুলি হল হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ও ২, চাঁচল ১ ও ২, রতুয়া ২ এবং বামনগোলা৷ মোট ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ৬০৩ জন মানুষ বন্যা দুর্গত৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত ২৪ হাজার ৯৫৭ জন দুর্গত মানুষকে সরকারি ২৯টি ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ প্রতিটি দুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠানো হয়েছে৷ ত্রাণের কোনও সমস্যা নেই৷ তবে গাজোলের বন্যা নিয়ে এখনও তাঁদের কিছু জানা নেই৷ জেলাশাসক আরও জানান, মহানন্দার জলোচ্ছ্বাসে ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা পৌরসভার মোট ১৪টি ওয়ার্ডের নীচু এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে৷ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে৷


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page