হাওয়াই যাত্রার কাঁটা রেলমন্ত্রক, স্বপ্নের উড়ান অধরা
শহরের পশ্চিম দিকে বাগবাড়ি এলাকায় ১৪০ একর জমির উপরে রয়েছে মালদা বিমানবন্দর৷ ১৯৮০ সালের দিকে এই বিমানবন্দর থেকে ছোটো বিমান পরিসেবা চালু ছিল৷ পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়৷ তবে রাজ্যের পালাবদলের পর রাজ্যের ছোটো বিমানবন্দরগুলি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ কিন্তু বিমান পরিসেবা চালু করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়৷ বিমানবন্দর নির্মাণের সময় এই অঞ্চলটি ইংরেজবাজার পুরসভার অন্তর্ভুক্ত ছিল না৷ শহরের বর্ধিতকরণের ফলে বর্তমানে বিমানবন্দর পুরসভার ২৮ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত যেখানে আশেপাশে অনেক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যা বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ৷
২০১২ সালে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের মহানির্দেশক গৌতম মুখোপাধ্যায় মালদা বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয় যে, এই বিমানবন্দরের পরিবর্তে পুরাতন মালদা ব্লকের নলডুবি এলাকায় ৩৪ নং জাতীয় সড়কের পাশে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য প্রায় ৩৫০ একর জমি দিতে প্রস্তুত রাজ্য সরকার৷ যেখানে যাত্রীবাহী বিমানের পাশাপাশি মালবাহী বিমান ওঠানামা করতে পারবে৷ মূলত জেলার আম ও লিচু রপ্তানি করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়, পরিবর্তে বর্তমান বিমানবন্দরের জমি কেন্দ্রীয় বিমানপত্তন সংস্থা রাজ্য সরকারকে হস্তান্তর করবে৷ অভিযোগ ওঠে যে, দক্ষিণ মালদা কেন্দ্রের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি এক্ষেত্রে জমি কেলেঙ্কারির আশঙ্কা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অভিযোগ করে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন৷
২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি রাজ্য সরকার কলকাতা-বালুরঘাট ভায়া মালদা সাত আসনের সাপ্তাহিক হেলিকপ্টার পরিসেবা চালু করেন৷ হেলিকপ্টারের পর ১৯ আসনের ছোটো বিমান চালানোর উদ্যোগ নেয় রাজ্য সরকার৷ কেন্দ্রীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মালদা ও বালুরঘাট বিমানবন্দর অধিগ্রহণ করা হয়৷ তারপরেই বিমানবন্দরগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জোর দেওয়া হয়৷
পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৪৫০ মিটার লম্বা ও ৩০ মিটার চওড়া রানওয়ে তৈরি করা হবে৷ এ ছাড়া যাত্রীদের জন্য বিশ্রামাগার, প্রতীক্ষালয় প্রভৃতি তৈরি করা হবে৷এর জন্য ১৭ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷
বিগত বছরে দু’বার মালদা বিমানবন্দরের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে গিয়েছেন পরিবহণ দপ্তরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও হেলিকপ্টার বিভাগের রাজ্য অধিকর্তা দীপক গুপ্ত৷ সেই সময়ই তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, খুব শীঘ্রই মালদা বিমানবন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে৷ গত ২০১৮ অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বিমানবন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে৷ ইতিমধ্যে বিমানবন্দরের ঝোপঝাড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে৷ রানওয়ের জন্য জমি মাপার কাজও শুরু হয়েছে৷ পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা-বালুরঘাট ভায়া মালদা হয়ে বিমানটি চলাচল করবে৷ প্রথম দিকে ১৯ আসনের বিমান চলবে৷ চাহিদা বাড়লে পরবর্তীতে ৪২ আসনের বিমানও চালানো যাবে মালদা বিমানবন্দর থেকে৷ অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবতোষ মণ্ডল বলেন, বিমানবন্দরে ঢোকার জন্য মানিকচক এবং ইংরেজবাজার শহরের ঢোকার রাস্তা চওড়া করা হবে৷ এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে টার্মিনাল তৈরি হবে৷
পূর্তদপ্তরের এক কর্তা জানিয়েছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিমানবন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ দ্রুত কাজ শেষ করে তা পরিবহণ দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ কিন্তু ইতিমধ্যে রেলমন্ত্রকের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানোর ফলে বর্তমানে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে৷ রেলমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, রেলট্র্যাক সংলগ্ন এই বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা করলে রেলের বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যা হবে বিশেষ করে বিমান ওঠানামার শব্দের প্রতিঘাতে রেলের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷
রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগে খুশি হয়েছিল জেলাবাসী৷ মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, আশির দশকে মালদায় বিমান পরিসেবা চালু ছিল৷ তারপরে ফের বিমান পরিসেবা চালুর জন্য আমরা রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারের কাছে বহুবার দরবার করেছিলাম৷ রাজ্য সরকার উদ্যোগী হওয়ায় আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম৷ কারণ বিমান পরিসেবা চালু হলে জেলার অর্থনীতিতেও বদল ঘটবে৷ সেই সঙ্গে বাইরের ব্যবসায়ীরাও জেলাতে এসে লগ্নি করবে, সেই সঙ্গে কোনো মুমূর্ষু রুগীকে জরুরিভিত্তিতে কলকাতায় নিয়ে যেতে সুবিধা হবে৷ কিন্তু বিভিন্ন কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে জেলার মানুষ আশাহত হয়েছেন’৷
পরিশেষে বলা যেতে পারে, জেলাবাসীর মনে যে স্বপ্নের উড়ানের সাধ হয়েছিল বিভিন্ন কারণে তা পূরণের লক্ষ্য এখন বিশ বাঁও জলে৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments