top of page

মাধাইপুরের কালীমন্দির

ইংরেজবাজার শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মহানন্দা নদীর পূর্ব পাড়ে মোরগা ও মাধাইপুর নামে দু’টি গ্রামের পাশাপাশি অবস্থান৷ বহু প্রাচীন একটি কালীমন্দিরের জন্য সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন মাধাইপুর গ্রামের প্রসিদ্ধি৷ ‘গৌড়ের ইতিহাস’ গ্রন্থের রচয়িতা রজনীকান্ত চক্রবর্তী মহাশয় মাধাইপুর প্রসঙ্গে এই গ্রামটিকে অতি বিখ্যাত স্থান হিসাবে বর্ণনা করেছেন৷ কেউ কেউ আবার একে পাণ্ডুয়ার কোনো রাজার সামন্ত অথবা দুর্গপাল মাধাই সিংয়ের গড় বলে থাকেন৷ প্রাচীন এই জনপদটি সংসৃকত চর্চার কেন্দ্রস্থল হিসেবে একসময় সুপরিচিত ছিল৷


Madhaipur Kali Bari

বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানতে পারা যায় যে, গৌড় অধিপতি বল্লাল সেন রাজধানীর চারদিকে চারটি দ্বার অধিষ্ঠাত্রী দেবীর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ তাঁরা হলেন- জহুরাচণ্ডী, পাতালচণ্ডী, দ্বারবাসিনীচণ্ডী এবং এই মাধাইচণ্ডী৷ এই মাধাইপুরের মন্দিরে নিয়মিত প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পুজো হয়ে থাকে৷ বিশেষ করে বৈশাখ মাসের শনি ও মঙ্গলবারের পুজো হয় মহা ধুমধাম করে৷ এই সময় প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটে৷ পুজো উপলক্ষ্যে তখন এখানে একটি ছোটোখাটো মেলাও বসে৷ বর্তমান এই মন্দিরটি ১৯৪৭ সালে পুনর্নির্মিত করা হয়েছিল৷



বৈশাখ মাসের শনি ও মঙ্গলবারের পুজো হয় মহা ধুমধাম করে

মূল মন্দিরের অভ্যন্তরে একটি বাঁধানো সুন্দর বেদির উপর বিখ্যাত জহুরাচণ্ডীর মতো একটি ছোটো উঁচু ঢিবি দেখা যায়৷ আর ঢিবির উপর মায়ের মুখোশ এবং দুপাশে আরও দুটি মুখোশ দেখা যায়৷ তাছাড়া ভক্তদের মানত হিসাবে দেওয়া আরও কিছু মুখোশ ওই বেদির উপর রাখা আছে৷ মূল বেদির ওপর আরো আছে কার্তিক, সরস্বতী ছাড়াও ছোটো ছোটো কতকগুলি মূর্তি৷


মূল মন্দিরটির ডানদিকে খোলা আকাশে বেশ বড়ো আকারের চারটি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছে৷ মন্দিরের ঠিক উলটোদিকে ইট দিয়ে বাঁধানো বেদির উপর পরপর সাতটি অর্ধগোলাকার ঢিবি দেখা যায়৷ প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, মালদা জেলায় যেসব জাগ্রত দেব-দেবী বলে পরিচিত তার বেশিরভাগই মূর্তির বদলে প্রতীক চিহ্ণ হিসাবে কোনো উচুঁ ঢিবিকে উপাসনার রীতি প্রচলিত আছে৷ তাই এখানে সেই ঢিবিগুলিকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করা হয়৷ সাতটি বোনের প্রতীক চিহ্ণ হিসাবে এই সাতটি ঢিবি পূজিত হয়ে থাকে৷ এই সাত বোন হলেন - বুড়িমা, জহুরামা, ঝাঁপড়িমা, বুড়াবুড়ি, গোয়ালচণ্ডী, দুয়ারবাসিনি এবং বাঁশুলী৷ স্থানীয়রা এই বেদিটিকে কাঁচা-খাকির থান বলে থাকেন৷ মন্দিরের ডানদিকে কিছুটা তফাতে বাঁশুলীর থান নামে আরও একটি উঁচু বেদি আছে, যার উপর কিন্তু মাত্র তিনটি ছোটো ছোটো উঁচু ঢিবি দেখা যায়৷ কাঁচা-খাকির থানের পাশেই একটি বেদিতে শিবের ত্রিশূল স্থাপিত হয়েছে৷



এ বছর মন্দিরটিকে নব কলেবরে সাজানো হয়েছে৷ জেলার সদর শহর ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা পুরসভার নিকটে হলেও সরকারি উদাসীনতার কারণে জেলার পর্যটন মানচিত্রে এই সুপ্রাচীন মন্দিরটির বিষয়ে বিশেষ কোনো উল্লেখ নেই৷ তাছাড়া যথাযথ যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি৷ যদিও সম্প্রতি এই গ্রামের সঙ্গে পুরাতন মালদা পুরসভার বিভিন্ন অংশের টোটো যোগাযোগ চালু হয়েছে৷ এখানে মন্দির চত্বর ছাড়া অন্য কোথাও ভক্তদের বসার ব্যবস্থা নেই৷ নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা৷ মন্দির থেকে কিছুটা দূরে গ্রামের মধ্যে স্থানীয় পঞ্চায়েতের নির্মিত জলাধার থেকে ভক্তদের পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয়৷


অন্যদিকে জেলার এক প্রান্তে আছে জহুরা মায়ের মন্দির৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ও জেলার পর্যটন মানচিত্রে জহুরা মায়ের কথা লেখা থাকায়, প্রচুর ভক্তদের সমাগমে জহুরা মন্দির সারা ভারতবর্ষে পরিচিতি লাভ করেছে৷ আর এই মাধাইপুরের মন্দিরে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব, অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থা, সরকারি উদাসীনতা ইত্যাদি কারণে সকলের অলক্ষেই থেকে গেছে৷ সর্বোপরি এই প্রাচীন মন্দিরটি জেলার পর্যটন মানচিত্রে একপ্রকার বঞ্চিত হয়েই আছে৷ যা অবিলম্বে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হওয়া উচিত৷



Comments


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page