কোভিডরোষে স্তব্ধ এবছর মালদার সুপ্রাচীন জহরাতলার মেলা
top of page

কোভিডরোষে স্তব্ধ এবছর মালদার সুপ্রাচীন জহরাতলার মেলা

রাত পোহালেই পয়লা বৈশাখ। এবছর বৈশাখের প্রথম দিন মঙ্গলবার। অর্থাৎ বাংলার ঘরে ঘরে মঙ্গলচণ্ডী এবং মালদা জেলার বিখ্যাত জহুরাদেবীর পুজো। তবে আগামীকাল জহুরাদেবীর পুজো ও মেলা ঘিরে জেলার মানুষের আবেগে বাধা দিয়েছে কোভিড ১৯ ভাইরাস। এবছর বন্ধ রাখা হয়েছে সাধারণ মানুষের পুজো করার অধিকার।



প্রতিবছর বৈশাখ মাসের মঙ্গল ও শনিবার এই জহুরাদেবীর পুজো হয় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রায়পুর গ্রামের এক মন্দিরে। জহুরাদেবীর মন্দির ঘিরে এসময় মেলা বসে। এই পুজোকে কেন্দ্র করে জেলার মানুষের মধ্যে জড়িয়ে থাকে আবেগ। এই জহুরাদেবীকে আদিবাসীদের দেবীরূপে বর্ণনা করেছেন অনেকে। আবার কেউ বলেন, গৌড়ের আফগানশাসক সোলেমান কারনানী’র সেনাপতি কালাপাহাড়, যিনি প্রথম জীবনে হিন্দু ছিলেন তার হাতেই এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা। একাংশের আবার অভিমত বিখ্যাত দস্যুসম্রাট তথা তন্ত্রসাধক ভবানী পাঠক এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।


তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে জহুরাদেবী ছিলেন হিন্দু আমলে রাজধানী গৌড়ের পূর্ব সীমানার দ্বার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। যদিও মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে কিন্তু তাসত্ত্বেও মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব যথেষ্ট অপরিসীম। এখানে দেবী মুখোশরূপে পূজিত হন।



দেবীর মুখোশ তৈরি করেন ইংরেজবাজার শহরের এক কুমোর পরিবার। তাঁরা বংশানুক্রমিক এই মুখোশ তৈরি করার দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমদিন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে শোভাযাত্রা করে কুমোরবাড়ি থেকে মুখোশগুলি মাথায় করে পদব্রজে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্থাপন করার পর নিষ্ঠাভাবে পূজার্চনা করা হয়। ইংরেজবাজার শহরের মাধবনগর নিবাসী তেওয়ারি পরিবার ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের সেবাইতের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এই সময়ে মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। অনেকে দেবীকে ছাগবলি উৎসর্গ করেন। ভক্তগণের বিশ্বাস, দেবী প্রচণ্ড জাগ্রত এবং তিনি মানুষের মনস্কামনা পূর্ণ করে থাকেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মন্দির প্রাঙ্গণে মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ জমায়েত হন। বৈশাখ মাসে জহুরাদেবীর পুজোকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত মেলাটি বর্তমানে মালদা জেলার এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।





তবে এবছর জহুরাদেবীর পুজো ও মেলা ঘিরে জেলার মানুষের আবেগকে বাধা দিয়েছে কোভিড ১৯ ভাইরাস, যা সারাবিশ্বে এই মুহূর্তে মহামারী সৃষ্টি করেছে। মন্দিরের সেবায়েতগণ জানিয়েছেন, এবছর বৈশাখের প্রথমদিন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে শোভাযাত্রায় দেবীর মুখোশ কুমোরবাড়ি থেকে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হবে না।


গুটিকয়েক ব্যক্তি অনাড়ম্বরভাবে সেই মুখোশ মন্দিরে নিয়ে যাবেন এবং মন্দিরে মুখোশগুলি স্থাপন করার পর নিষ্ঠাভাবে পুজো করা হবে। এরপরে মন্দির বন্ধ করে দেওয়া হবে অর্থাৎ এবছর জনসাধারণ আর পুজো দিতে পারছেন না।

মন্দিরের সেবাইত জানিয়েছেন, সারাদেশে এখন লকডাউন চলছে তাই সরকারি নিয়মমত জমায়েত করা যাবে না। এছাড়া ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসন মন্দির প্রাঙ্গণে মেলার করার অনুমতি দেননি। সেই সঙ্গে বন্ধ রাখা হয়েছে সাধারণ মানুষের পুজো করার অধিকার। এতে কিছুটা হলেও ভক্তদের মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে। কিন্তু মন্দিরের সেবায়েতগণ জানিয়েছেন তারা সরকারি নিয়মনীতি ভঙ্গ করতে পারবেন না। তবে ভক্তদের একাংশের অভিমত মানুষ সুস্থ থাকলে দেবীকে পুজো করার অধিকার পুনরায় পাওয়া যাবে, এই সময়ে সরকারি নিয়ম মেনে চলা উচিত।


মালদা জেলার খবর ও বিনোদনের লেটেস্ট ভিডিয়ো আপডেট পেতে ক্লিক করুন

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page