বৈশাখী দহনে নজর কৃষ্ণচূড়া থেকে পদ্মে
২০১৯৷বাঙালির ১৪ পার্বণ৷হবিবপুরে সেই সংখ্যাটা আবার ১৫৷উৎসবের বাদ্যি বেজেছে সেই ১০ মার্চ৷সেটা নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো উৎসব৷ভোট উৎসব৷পাশ থেকে উঁকি মেরেছে আরেকটা ছোটো উৎসবও৷সেটাও ভোট৷হবিবপুরের উপনির্বাচন৷
রং চিনে নেওয়ার অকাল পার্বণ হবিবপুরে
হাওয়া গরম৷বৈশাখের দহন শুরু হয়ে গেছে৷লালমাটির হবিবপুর রাঙা হয়ে রয়েছে কৃষ্ণচূড়ার আগুনে৷মাথার খোঁপায় আগুন গুঁজে ঘুরছে কালো মেয়ের দল৷গরম হাওয়ার তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ভোট৷সকাল থেকে রাত, প্রার্থীদের চিল চিৎকার৷এ বলে আমায়, ও বলে আমায়৷ত্রাহি দশা ভোটারদের৷কে কোথায় ভিড়বে, কারোর সেই দিশা ঠিক হয়েছে কি?
রাজনীতির ইতিহাসে হবিবপুরের মাটি যেন চিরদিনই লাল৷একমাত্র ১৯৬৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী৷আর ১৯৭১-এর ভোটে সেখানে জয় পান নির্দল প্রার্থী৷এছাড়া এই কেন্দ্রের ইতিহাসে একটাই নাম৷লাল পার্টি৷সেই লাল ফৌজের দাপট যে কতটা, ২০১১ কিংবা ২০১৬ তে তার প্রমাণ পেয়ে গেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷গোটা রাজ্যে তাঁর ঘাসফুলের চাষ, এখানে এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে বারবার৷এমনকি ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও৷হবিবপুরে পা রাখতে এই কেন্দ্র থেকে রাজ্যে প্রচার শুরু করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ফল বেরোনোর পর শুকনো মুখেই থাকতে হয়েছে তাঁকে৷
সময়ের সঙ্গে সব রংই ফিকে হয়৷হবিবপুরের লাল রংও সেই সূত্র মেনেই ফিকে হয়েছে৷লাল থেকে গেরুয়া৷গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীরা যখন শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে গেল গেল চিৎকার জুড়েছে, তখনও যেন স্থিতধী হবিবপুর নিজের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছে৷ফিকে হোক লাল, নীল কিংবা সবুজ কখনও নয়৷সেই লক্ষ্যেই হবিবপুরের দখল নিয়েছে গেরুয়া শিবির৷পদ্মের প্রভাব কতটা, তার প্রমাণ মেলে যখন তিন তিনবারের লাল বিধায়ক গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন এবং বিধানসভায় পদত্যাগ করে লোকসভা নির্বাচনে নতুন দলের প্রার্থী হন৷মূলত তাঁর এই পদত্যাগের জন্যই একটি অকাল উপনির্বাচন, থুড়ি, ছোটো উৎসবে শামিল হচ্ছে হবিবপুর৷
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, এই বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৭১৷এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ২১ হাজার ৪৫৯ জন, মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৬০৫ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৭ জন৷আদিবাসী অধ্যুষিত এই বিধানসভা কেন্দ্রে হিন্দু ভোটারের সংখ্যা অনেকটাই বেশি৷২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী এই বিধানসভা কেন্দ্রে মোট জনসংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৭২ হাজার ৬৬৭ জন৷এর মধ্যে হিন্দু ৮৯.৬৭ শতাংশ ও মুসলিম ৪.৮০ শতাংশ৷মধ্যের ১৭ বছরে জনসংখ্যা বাড়লেও হিন্দু ও মুসলিমের অনুপাত প্রায় একই রয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে৷আগামী ১৯ মে এই কেন্দ্রের ২৪৭টি বুথে আরও একবার উৎসব পালন করবেন এখানকার ভোটাররা৷
মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ৷এলাকায় হাতের অনুপ্রবেশে বেজায় খাপ্পা কাস্তে৷তাদের বক্তব্য, ভালোমানুষি দেখিয়ে তারা লোকসভা ভোটে দক্ষিণ মালদায় প্রার্থী দেয়নি৷হাতকে ভোট দেওয়ার প্রচার চালিয়েছে৷হবিবপুরে বরাবর কাস্তে সব
কেটে সাফ করে৷তাহলে এখানে আবার হাত দেওয়ার কী ছিল! এটাই কি বন্ধুত্বের প্রতিদান? কাস্তে-হাতের অভিমানের পালায় দুই ফুলও যেন বৈশাখী হাওয়ায় উৎফুল্ল৷গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল বুঝিয়ে দিয়েছে, এলাকার লাল রং এখন প্রবল গেরুয়া৷তাহলে শেষ পর্যন্ত কী হবে! সব উত্তর মিলবে ১৯ মে পেরিয়ে ২৩ তারিখে৷
ছবিঃ মিসবাহুল হক
Comments