জিএসটি ও বন্যার সাঁড়াশি চাপে, মৃৎশিল্পীরা আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায়
হাতেগোনা আর কয়েকদিন৷শারদোৎসবে মেতে উঠবে বাংলা৷বিশ্বের প্রতিটি বাঙালি যে দিনগুলির অপেক্ষায় কাটান সারা বছর৷পুজো মানে নতুন জামা-জুতো, পেট পুরে খাওয়াদাওয়া, আর সেজেগুজে পুজোমণ্ডপে জমাট আড্ডা৷তবে সব কিছুর মূলে রয়েছে মায়ের মৃণ্ময়ী মূর্তি৷যে মূর্তির কুশীলব মালদা শহরের সজল পণ্ডিত, হরিশ্চন্দ্রপুরের নারায়ণ পাল, গাজোলের মধুসূদন পালরা৷প্রকৃতি, কালোবাজারি আর গুডস্ অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্সের ধাক্কায় এখন বেসামাল তাঁরা সবাই৷
ত্র্যহস্পর্শে ত্রাহি রব উঠেছে মালদা জেলার মৃৎশিল্পীদের৷দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি তো ছিলই, তার সঙ্গে এবার জুড়ি বেঁধেছে বন্যা আর জিএসটি৷এই তিন ঠেলায় মৃৎশিল্পীরা সারা বছরের সংস্থান এবার আর করতে পারবেন না বলেই মনে করছেন৷মাতৃমূর্তি তৈরি করতে করতে এখন তাঁরা বিপন্মুক্ত হওয়ার আশীর্বাদ চাইছেন দুর্গতিনাশিনীর কাছে৷
মধুসূদন পাল, গাজোল
গাজোলের মধুসূদন পাল এলাকার নামজাদা মৃৎশিল্পী৷ প্রতিবারই একাধিক প্রতিমা তৈরি করেন৷এবারও গড়েছেন ১৪টি দুর্গাপ্রতিমা৷তাঁর প্রতিমা শুধু গাজোল নয়, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের একাধিক মণ্ডপেও যায় প্রতিবার৷এবার যেন এক আশঙ্কা নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি৷জানালেন, প্রতি বছরের মতো এবারও কয়েক মাস আগেই মূর্তির বরাত ধরেছিলেন৷তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিহ্নমাত্র ছিল না৷ কাজ শুরু করার পরেই বন্যা শুরু হল৷এমন বন্যা আগে কবে হয়েছে, তা কেউ মনে করতে পারছেন না৷বন্যায় দেখা দিল মাটি, খড়ের আকাল৷যাও বা মিলল, তা অগ্নিমূল্য৷তবুও পেশার কথা মাথায় রেখে সেই দামেই মাটি-খড় কিনতে হয়েছিল৷কিন্তু রং ও প্রতিমার সাজ কিনতে গিয়ে তাঁর মাথায় হাত পড়ে৷জিএসটি’র ধাক্কায় এসব জিনিসের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে৷যা পরিস্থিতি, তাতে এবার লাভের আশা দূরের কথা, প্রতিমা তৈরির খরচ উঠবে কিনা তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি৷
নারায়ণ পাল, হরিশ্চন্দ্রপুর
হরিশ্চন্দ্রপুরের নারায়ণ পালও এবার বেশ কয়েকটি মূর্তি তৈরি করেছেন৷তাঁর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ৷ বানের জলে মাটির মূর্তিগুলি গলে গিয়েছিল৷জল কমার পর ফের সেগুলি ঠিক করতে হয়েছে৷কারখানা থেকে জল এখন নামলেও এলাকার অনেক জায়গায় এখনও বন্যার জলের তলায়৷ তার উপর প্রতিমা তৈরির উপকরণের আগুন দাম৷এদিকে বন্যায় ভেসে যাওয়া পুজো উদ্যোক্তারাও এবার প্রতিমার দাম খানিকটা কম দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন৷মূর্তি তৈরির পর তা বিক্রি না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে৷তাই লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়েও তৈরি প্রতিমা বিক্রি করতে হবে তাঁকে৷জানেন না, সারা বছর কীভাবে সংসার চালাবেন৷
সজল পণ্ডিত, ইংরেজবাজার
মালদা শহরের প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী সজল পণ্ডিত জানালেন, বন্যা শহরের পুজোয় থাবা বসাতে না পারলেও জিএসটি’র ধাক্কায় তিনি সমস্যায়৷যখন প্রতিমার বরাত নিয়েছিলেন, তখন জিএসটি ছিল না৷পরে রং ও প্রতিমার সাজ কিনতে গিয়ে দেখেন, সেসব জিনিসে ২৮ শতাংশ জিএসটি লাগু হয়েছে৷জিএসটি’র ধাক্কায় এক বর্গফুটের একটি প্লাইবোর্ডের দাম ৩ টাকা বেড়ে গিয়েছে৷কিন্তু বায়নার থেকে প্রতিমার বেশি দাম কোনো উদ্যোক্তাই দেবে না৷তাই এবার জিএসটি’র বোঝা মাথায় নিয়েই কাজ করছেন তিনি৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Commentaires