দিন পনেরোর মধ্যে চার-চারটি ধর্ষণ, চলছে যেন ধর্ষণের সিকুয়েন্স
একের পর এক ধর্ষণ, কালিয়াচক, মানিকচক, ইংরেজবাজার এবার ছিল রতুয়ার পালা। ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া ১ ব্লকের একটি গ্রামে। নিজের খুড়তুতো দাদার হাতেই ধর্ষিতা হল বোন। শুধু ধর্ষণ করাই নয়, ধর্ষণের পর বোনকে বিহারে পাচার করারও চেষ্টা করে কীর্তিমান দাদা। তবে এলাকার মাঝিদের তৎপরতায় এযাত্রা বেঁচে গিয়েছে ওই কিশোরী। রতুয়া থানায় ভ্রাতুষ্পুত্র সহ মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কিশোরীর বাবা। তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ধর্ষিতা কিশোরীর বউদি। এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে অভিযুক্তরা। তদন্ত শুরুর পাশাপাশি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। শারীরিক পরীক্ষার জন্য কিশোরীকে পাঠানো হয়েছে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এই ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে রতুয়া জুড়ে।
ওই কিশোরীর বাবা পেশায় দিনমজুর। মা সাধারণ গৃহবধূ। তাঁদের পাঁচ ছেলেমেয়ে। এই মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। কিশোরীর মা জানিয়েছেন, গত রবিবার বিকেল থেকে তাঁরা মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সেদিন সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ করেও মেয়ের সন্ধান পাননি। তাই সোমবার তাঁরা রতুয়া থানায় মেয়ের নামে মিসিং ডায়ারি দায়ের করেন। সোমবার সন্ধেয় তাঁরা খবর পান, হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের গোবরাঘাটে ফুলহার নদীর ধার থেকে তাঁদের মেয়েকে উদ্ধার করেছেন কয়েকজন মাঝি। তাকে তাঁরা গোবরাঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে জমা দিয়েছেন। সেই খবর পেয়েই তাঁরা গোবরাঘাট ফাঁড়িতে ছুটে যান। মেয়েকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। কিন্তু তার মুখে সব ঘটনা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান।
ধর্ষণের পর বোনকে বিহারে পাচার করারও চেষ্টা করে কীর্তিমান দাদা। তবে এলাকার মাঝিদের তৎপরতায় এযাত্রা বেঁচে গিয়েছে ওই কিশোরী।
ওই কিশোরীকে সোমবার রাতেই রতুয়া থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় গোবরাঘাট ফাঁড়ির পুলিশ। পুলিশি জেরায় ওই কিশোরী জানায়, সোমবার তার কাকার ছেলে জাকির রায় তাকে মাসির বাড়ি নিয়ে যাবে বলে। দাদার কথা অবিশ্বাস করতে পারেনি সে। সামসীতে তার মাসির বাড়ি। সে দাদার সঙ্গে সামসী যায়। কিন্তু মাসির বাড়িতে নিয়ে না গিয়ে তার দাদা তাকে সামসী স্টেশনে নিয়ে যায়। এব্যাপারে সে জানতে চাইলে দাদা তাকে খুন করার হুমকি দেয়। সেদিন বিকেলে তাকে ট্রেনে মালদা শহরে নিয়ে যায় তার দাদা। সেখানে একজনের বাড়িতে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে তাকে ফের সামসীতে নিয়ে আসে। সেখানে দাদার শ্যালক, মানিকচকের নুরপুর বামনগ্রামের বাসিন্দা শেখ সাকির সহ আরও তিন জন ছিল। তাদের মধ্যে একজনকে সে চেনে। তার নাম শেখ রানা। তার বাড়ি স্থানীয় বাহারাল গ্রামে। বাকি দুজন তার অচেনা। সোমবার দুপুরে এই পাঁচ জন সামসী থেকে তাকে নিয়ে গোবরাঘাটের দিকে রওয়ানা দেয়। মাঝরাস্তায় তার দাদা তাকে জোর করে একটি পাটের খেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। তারপর তারা তাকে নিয়ে যায় গোবরাঘাটে ফুলহার নদীর ঘাটে। সে বুঝতে পেরেছিল, তার দাদা তাকে বিহারে পাচার করে দেবে। ফুলহারের ওপারেই বিহারের আমদাবাদ থানা এলাকা। সেখানেই তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দাদাদের কথাবার্তা শুনে তার ধারণা নিশ্চিত হয়। সে কান্নাকাটি শুরু করে। তাকে কাঁদতে দেখেই ঘাটের কয়েকজন মাঝি তার দিকে এগিয়ে আসেন। তখনই সেখান থেকে চম্পট দেয় তার দাদারা। ওই মাঝিরাই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এর আগেও জাকির বেশ কয়েকজন কিশোরীকে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছিল। কিন্তু দু'একদিন পর সেই কিশোরীদের আর দেখা যেত না। গ্রামবাসীদের সন্দেহ, জাকির মেয়ে পাচারে জড়িত। কিন্তু এতদিন কোনও প্রমাণ ছিল না। এবার নিজের বোনকে ধর্ষণ করে পাচার করার চেষ্টা করে সে। গ্রামবাসীরা জাকিরের কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
রতুয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় এদিন দুপুরেই ওই কিশোরীর বাবা পাঁচ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পলাতক জাকিরদের খোঁজে চিরুণি তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষার জন্য ওই ছাত্রীকে মালদা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments