বানভাসি আশঙ্কায় মালদা
এবার পুজোয় আর নতুন জামাকাপড় হবে না ওদের৷ আগ্রাসী গঙ্গা যে সব কিছুই গিলে নিয়েছে৷ কারও ভিটেমাটি তলিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভে, কারও মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটাও জলের তোড়ে ভেসে যাওয়ার প্রহর গুনছে৷ কয়েক দিন আগেও যেখানে কালভার্টটা কালিয়াচক-৩ নম্বর ব্লকের সঙ্গে ধুলিয়ানের সংযোগ রক্ষা করছিল, এখন সেখান দিয়েই প্রবল স্রোতে বয়ে চলেছে গঙ্গা৷ জল ঢুকছে একের পর এক গ্রামে৷ স্কুল, বাড়ি জলের তলায় প্রায় সব কিছুই৷ আর কটা দিনই বা বাকি পুজোর, ঠিক এই সময় এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা শুধু কালিয়াচক নয় মানিকচক ও রতুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষও৷
উৎসবের মরশুমে এমন বিপর্যয় কল্পনাতেও আসেনি কারও৷ মানিকচকের জোতপাট্টার অসংরক্ষিত এলাকায় হাজার হাজার পরিবার জলবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন৷ গঙ্গা চরম বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে৷ ফুঁসছে কালিন্দ্রী, ফুলহর, মহানন্দাও৷ আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িতে আকাশ কালো করে এসেছে৷ গ্রাম মালদার বিশাল এলাকা তো ডুবেইছে, এবার পুজোয় শহরও ভাসবে না তো? পুজো উদ্যোক্তাদের এখন এই চিন্তাই কুরে কুরে খাচ্ছে৷ শেষ মুহূর্তের কাজ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন মৃৎশিল্পীরাও৷ স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় মূর্তি শোকাবার নয়! আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে মহানন্দার দুই পাড়েই৷ পুরাতন মালদার সাহাপুরে নদী ঘেঁষে বাস ডলি মণ্ডলের৷ লোকের বাড়ি খেটে সংসার চলে কোনোরকমে৷ মহানন্দায় আবার জল বাড়ছে৷ যে কোনো সময় বাড়ি ডুবতে পারে৷ তাই মালপত্র নিয়ে আপাতত অস্থায়ী আস্তানাই ঠিকানা৷ একই অবস্থা এপারের বালুচরে৷
গত কয়েকদিন ক্রমাগত বেড়েছে গঙ্গার জল৷ গোপালপুরের কামালতিপুরে নদীবাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক৷ দ্রুত বাঁধ মেরামত না করলে বড়োসড়ো অঘটন ঘটতে পারে যে কোনো সময়৷ তবে জেলা সেচদপ্তরের নির্বাহী বাস্তুকার প্রণবকুমার সামন্ত কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছেন৷ তিনি বলেন আপাতত স্থির রয়েছে গঙ্গা৷ এবার জল কমতে পারে৷ তবে জল কমার অর্থ আবার ভাঙনের আশঙ্কা৷ ফলে হাজার হাজার দুর্গত পরিবার উদ্বেগে সময় কাটাচ্ছেন৷ এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকা নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন জেলা সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল৷ মানিকচকে দুর্গত এলাকায় গিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক মোত্তাকিন আলম৷ আবার রতুয়ার দুর্গত এলাকায় গিয়েছেন সাংসদ খগেন মুর্মু৷
গঙ্গা যখন কালিয়াচক মানিকচকের বিশাল এলাকাকে ভাসিয়েছে, তখন বিধ্বংসী অবস্থা ফুলহরেরও৷ ফুলহরের জল প্লাবিত হয়েছে মহানন্দাটোলা ও বিলাইমরার বেশ কিছু এলাকাও৷ মানিকচকের রামনগর প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার রাস্তার ওপর দিয়ে জল বইছে৷ এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের স্কুলে না নিয়ে যাওয়াই ভালো বলে মনে করছেন প্রশাসন৷ তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল আপাতত বন্ধ৷
চলতি মরশুমে দু’দুবার বন্যার কবলে পড়ল কালিয়াচক ও রতুয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা৷ বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ ও নৌকা নিয়ে কিছুটা হলেও ক্ষোভ রয়েছে৷ তবে পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রয়েছে জেলা প্রশাসনের৷ বিহারের নদীতে জল বাড়লে বা আরও বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠতে পারে৷ পুজোর মরশুমে এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরাও৷
Comments