মেয়ের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করে খেসারত দিচ্ছে পরিবার
top of page

মেয়ের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করে খেসারত দিচ্ছে পরিবার

নাবালিকা মেয়ের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করেছিলেন মা। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে গোটা পরিবারকে। পরিবারের সকলে এখন বাড়ি ছাড়া। তাঁরা গ্রেফতারি ও প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মালদা শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত।



নির্যাতিতা মেয়েটির মা, মহিলা ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসের প্যারা লিগ্যাল ভলান্টিয়ার৷ মালদা জেলা সংশোধনাগারে কর্মরত৷ স্বামী ও একমাত্র মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকেন ইংরেজবাজার পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে৷ ১০ বছরের মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে৷ গত ২৩ অক্টোবর তাঁদের মেয়ে সকালে গিয়েছিল নাচের ক্লাসে৷ ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক মুদির দোকানের মালিক, স্বপন সরকার তাকে ডাকেন৷ স্বপনবাবুর বয়স ৬০। কেন ওই কিশোরী এখন আর দোকানে আসে না, তা তিনি জানতে চান৷ অভিযোগ, সেই সময় চকোলেট ও বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে কিশোরীর শ্লীলতাহানি করেন স্বপনবাবু৷ কিশোরীকে নাকি তিনি ধর্ষণের চেষ্টাও করেন৷ কোনওরকমে কিশোরী সেখান থেকে পালিয়ে নিজের বাড়ি গিয়ে মা’কে সমস্ত ঘটনা জানায়।

কিশোরীর মা বলেন, মেয়ের মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন৷ স্বপনবাবুর কাছে গোটা ঘটনার কৈফিয়ত চান৷ স্বপনবাবু প্রথমে গোটা ঘটনা অস্বীকার করেন৷ উলটে তিনি তাঁর নাবালিকা মেয়েকে কটু কথা বলতে থাকেন৷ সেই সময় রাগে তিনি স্বপনবাবুকে দু’এক চড় কষিয়ে দেন৷ এই বাদানুবাদের মধ্যে সেখানে ভিড় জমে যায়৷ সবার চাপে স্বপনবাবু নিজের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন৷ তখনই উত্তেজিত জনতা তাঁকে মারধর করতে শুরু করে৷ স্বপনবাবু প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবস করেন৷ পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে দেখে তিনি মেয়েকে বাড়িতে রেখে নিজের কাজে সংশোধনাগারে চলে যান৷ জেল সুপারকেও তিনি সব কথা খুলে বলেন৷ সুপার তাঁকে থানায় অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন৷ তিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাকলি চৌধুরিকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান৷ গোটা ঘটনা জানিয়ে ইংরেজবাজার থানায় স্বপনবাবুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷

নির্যাতিতার মা আরও বলেন, থানায় অভিযোগ জানিয়ে বেরিয়ে আসার সময় তাঁরা খবর পান, স্বপনবাবুকে তখনও মারধর করা হচ্ছে৷ সেকথা শুনে কাকলীদেবীর সঙ্গে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷ উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে কাকলিদেবী, আহত স্বপনবাবুকে নিজের কয়েকজন কর্মী সহ মালদা মেডিকেল কলেজে পাঠান৷ এর পরের দিন থেকেই তাঁকে ক্রমাগত অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়৷ কখনও ফোনে, কখনও বা প্রকাশ্যে। তাঁকে বাড়িছাড়া করা, এমনকি খুনের হুমকিও দেওয়া হয়৷ স্বপনবাবুর ছেলে সুমন সরকার প্রকাশ্যেই তাঁকে এবং তাঁর মেয়েকে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেন৷ কিন্তু এসব করেও তাঁকে ভয় দেখানো যায় নি৷ তিনি নিজের অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করেননি৷ তাঁর উপর রাজনৈতিক চাপ আসলেও তিনি তা গ্রাহ্য করেননি৷ শেষ পর্যন্ত ২৯ অক্টোবর তাঁরা জানতে পারেন, সেদিনই ইংরেজবাজার থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে স্বপনবাবুকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁদের পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজুও করেছে৷ এরই মধ্যে ৩০ অক্টোবর জেলা আদালতে তাঁর মেয়ে বিচারকের সামনে নিজের জবানবন্দি দিয়েছে৷ এরপর থেকেই তাঁরা আতঙ্কে বাড়িছাড়া৷ নিজে কিংবা তাঁর স্বামী কাজে যেতে পারছেন না৷ মেয়ের স্কুল বন্ধ থাকলেও তার পড়াশোনা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ তবে যাই হোক, যে তাঁর মেয়ের এমন ক্ষতি করেছে তিনি তার শাস্তি চান৷


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রতীকী ছবি। সৌজন্যে পিক্স অ্যাবে।

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page