রাস্তা আর জঞ্জালের জোড়া ফলায় বিদ্ধ শহর
top of page

রাস্তা আর জঞ্জালের জোড়া ফলায় বিদ্ধ শহর

এবড়োখেবড়ো কাদামাখা রাস্তাটা দেখলে মনে হতেই পারে, কোনো অজপাড়াগাঁয়ে আছেন৷কিন্তু না মশাই, গণ্ডগ্রাম নয়, এ রাস্তা দেড়শো বছরের ঐতিহ্যবাহী শহর ইংরেজবাজারের৷


আড়েবহরে চাকচিক্যে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে এই শহর৷বাড়ছে বহুতল৷শহরের বুকে তৈরি হচ্ছে ঝাঁ চকচকে শপিংমলও৷কিন্তু পরিসেবাপ্রাপ্তির ভাঁড়ারটা যেন ক্রমশ কপর্দকশূন্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷অন্তত শহরবাসীর অভিযোগ এমনটাই৷রাস্তা আছে, কিন্তু চলাচলের যো নেই৷জঞ্জাল আছে, কিন্তু ভাগাড় নেই৷গাড়ি আছে, কিন্তু পার্কিংজোন নেই৷ এমন আরও হাজারো সমস্যা চেপে বসেছে শহরের বুকে৷বছর গড়ালেই এ শহরে পুরভোট৷এখন থেকেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ভোটে এবার ইশ্যু হয়ে উঠবে পরিসেবাই৷আর এই ইশ্যুতেই ভরাডুবি হতে পারে রথীমহারথীদের৷চারশো বিশ মোড় থেকে শান্তিভারতীর সামনের রাস্তা এখন ভয়ংকর৷ঠিক যেন মালভূমি৷রাস্তায় যেন হড়পা বানের কাদা লেপে দেওয়া হয়েছে৷রাস্তার নাম শুনলেই অনেক টোটোর মুখ ঘুরে যায়৷হেঁটেচলে যাওয়াও দায়৷মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো চারশো বিশ মোড়ের নির্মীয়মাণ কালভার্ট যন্ত্রণা আরও বাড়াচ্ছে৷অভিযোগ, কালভার্ট তৈরিতে অযথা দেরি হচ্ছে৷রাস্তা সংস্কারেরও নামগন্ধ নেই৷



অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধানের বক্তব্য, আসলে ওখানের ড্রেনটাকে বড়ো করা হচ্ছে৷তাছাড়া ট্রান্সফরমার ছিল, সেটাকে সরাতে সময় লাগল৷একটা ট্রাফিক পুলিশের ঘরও সরাতে হয়েছে৷এসবের জন্য কিছুটা দেরি হয়েছে কাজে৷তবে আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যেই কালভার্ট তৈরি হয়ে যাবে৷তখন আর এই সমস্যা থাকবে না৷তবে শুধু এখানেই নয়, মনস্কামনা মন্দিরের কাছেও দীর্ঘদিন রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে৷ফলে যানজট বাড়ছে৷থাকছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও৷ পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ অবশ্য এসব সমস্যা সমাধানেরই আশ্বাস দিয়েছেন৷


শহরবাসীর আশঙ্কা অবশ্য অন্য৷পুজোর মুখে তাপ্পি দিয়ে রাস্তার ক্ষত সারানোর চেষ্টা চলবে বলে অনেকেই আশঙ্কা করেছেন৷রাস্তার পাশাপাশি জঞ্জাল যন্ত্রণাও মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে আমআদমির৷


রামকৃষ্ণপল্লিতে মোড়ের মাথায় আবর্জনার পাহাড় জমছে৷উইমেন্স কলেজের সামনেও তথৈবচ অবস্থা৷জঞ্জালের জ্বালায় নাকে রুমাল বেঁধে কলেজে যেতে হচ্ছে ছাত্রীদের৷কোথাও স্কুলের কাছে, কোথাও বাড়ির সামনে জঞ্জালের স্তূপ দূষণ ছড়াচ্ছে সাধের শহরে৷



এ নিয়ে মুখ খুলেছেন অধ্যাপিকা সুস্মিতা সোম৷তিনি বলেন, পুরসভার কয়েকটা প্রাথমিক শর্ত থাকে, যার অন্যতম শর্ত হল পরিচ্ছন্নতা৷অথচ আমরা দেখছি স্কুল-কলেজের সামনে জঞ্জাল জমে থাকছে৷যেমন অক্রুরমণি স্কুল, মালদা উইমেন্স কলেজের সামনে আর্বজনা জমে থাকছে৷এমনকি নদীতে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে৷পুরসভার পক্ষে এটা মর্যাদাহানিকর৷ এখন তো পুরসভা এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার বহু টাকা বরাদ্দ হচ্ছে৷আমরা নাগরিক হিসেবে চাইতেই পারি, শহরটা পরিচ্ছন্ন থাকুক৷রাস্তাঘাট হাঁটার উপযোগী হোক৷ নাগরিকরা কর দিচ্ছেন, তবু আবর্জনার দুর্গন্ধে শহরবাসীকে অসুস্থ হতে হবে কেন? জঞ্জালের মধ্যে মাঝেমধ্যে একটু ধোঁয়া ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে আর মশা মারতে নর্দমায় গাপ্পি ছাড়া নতুন ফ্যাশান হয়েছে৷কিন্ত এসবের মাঝে পরিসেবাটা কোথায় পাচ্ছে মানুষ!


পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ জঞ্জাল সমস্যা মেটানোরও আশ্বাস দিয়েছেন৷তাঁর বক্তব্য, ১৫০ বছরের একটা শহর৷ ভ্যাট তৈরি করতে পারেনি কেউ৷কিন্তু আমরা সেটা তৈরি করে দেখাব৷ জমি কিনেছি৷তবে বর্ষার জন্য ওখানে রাস্তাটা কাদাকাদা হয়ে গেছে৷ফলে জঞ্জালের গাড়িগুলো ঢুকতে পারছিল না৷আমাদের একটু তো সময় দিতেই হবে রাস্তাটা ঠিক করে ফেলেছি প্রায়৷কিছুদিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে৷


পুরপ্রধান আশ্বাস দিয়েছেন৷এখন দেখার, আশ্বাস বাস্তব রূপ নিতে কত সময় নেয়৷


ছবিঃ মিসবাহুল হক

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page