top of page

প্রশাসনের বাজারে বজ্র আঁটুনিতেও বিকোচ্ছে শব্দবাজি, অভিযোগ মালদায়

একুশের দীপাবলি৷ দুর্গাপুজোতেই আবেগের কাছে হার মেনেছিল করোনা৷ কালীপুজোয় তার অস্তিত্ব খুঁজতে আতশ কাচ লাগছিল যেন৷ ভাইরাসের প্রকোপে ঘরবন্দি মানুষ প্রাণ ভরে খোলা হাওয়ার গন্ধ শুঁকছিল৷ কালীপুজোর আগে আশির বুড়োও কার্যত ফিরে গিয়েছিলেন আঠারোয়৷ পুজোর ক’দিন আগে থেকেই আট থেকে আশি বাজি কিনতে শুরু করেছিল৷ একটু রোদে দিতে হবে যে! পাড়ার মোড়ের সাত্যকিদার দোকান খুলতে না খুলতেই সকালে বাজার ফেরত পলাশবাবু, রঘুবাবুদের মতো বয়স্করা দাঁড়িয়ে পড়তেন৷ দরদাম করে বাজি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন৷ আর ছোটোর দল! বেলা গড়াতেই ওই দোকানে শুধু তাদের মাথা৷ রাতে দোকান বন্ধ হওয়া পর্যন্ত৷ যারা পছন্দমতো বাজি পেত না, রাতে সাত্যকিদাকে ফরমাশ দিয়ে বাড়ি ফিরত৷ সেই তালিকায় ছিল শব্দবাজিও৷ হ্যাঁ, আদালত কিংবা সরকারি নির্দেশের বেড়া ডিঙিয়ে সেটাও মিলেছিল অল্পবিস্তর৷ প্রশাসন তা খেয়াল করেছিল৷ তাই এবার নতুন নির্দেশ, শুধুমাত্র প্রশাসনের বসানো অস্থায়ী বাজার থেকেই বাজি কিনতে হবে সব্বাইকে৷ পাড়ার মোড়, দোকান, এমনকি বাজারেও এবার বাজি বিক্রি করা যাবে না৷ শব্দবাজিতে লাগাম টানতে সরকারি সিদ্ধান্তে এবারের দীপাবলিতে প্রশাসনের অমোঘ নির্দেশ৷

গতকাল সন্ধেয় মালদা কলেজ মাঠে সেই বাজি বাজার চালু করেছেন জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া৷ মোট ২৮টি স্টল৷ এর মধ্যে ১০টি পাইকারি, ১৮টি খুচরো ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দ৷ সেখানে এবার নতুন শব্দ, সবুজ বাজি৷ সেটা খায় না মাথায় দেয়, এখনও কেউ বুঝতে পারছেন না৷ কিন্তু এতকিছু করেও শব্দবাজিতে লাগাম পরানো গিয়েছে কি? এবারও মনে হচ্ছে, ব্যর্থতাই প্রশাসনের সঙ্গী হতে চলেছে৷ অন্তত শনিবার দুপুরে বাজি বাজারের ছবি সেকথাই বলছে৷ প্রশাসনের বসানো বাজারেই সেসব বিক্রি হচ্ছে৷ অবশ্যই আড়ালে৷ পুলিশের সামনে দিয়েই সেই বাজি বগলদাবা করে ঘরে ফিরছেন বাজিপ্রেমীরা৷


প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের বাচ্চারা এবার কালীপুজোয় বাজি পোড়ানোর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেই৷ বলছিলেন জেলার সবচেয়ে পুরোনো বাজি ব্যবসায়ী, ৭৩ বছরের গণেশচন্দ্র সাহা৷ ১৯৭০ সাল থেকে তিনি এই ব্যবসা করছেন৷ তাঁর কথায়, “সাধারণত গ্রামগঞ্জের বাচ্চারা গ্রামের দোকান থেকেই বাজি কেনে৷ তাদের অভিভাবকরাও ২০০ টাকার বাজি কিনতে ১০০ টাকা খরচ করে শহরে আসেন না৷ কিন্তু প্রশাসন এবার এই অস্থায়ী বাজার ছাড়া কোথাও বাজির ব্যবসা করতে দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে৷ গ্রামে না পেলেও গরিব মানুষ ছেলেমেয়েদের জন্য সামান্য কটা টাকার বাজি কিনতে গাঁটের কড়ি খরচ করে শহরে কিছুতেই আসবেন না৷ ফলে ওই ছেলেমেয়েদের এবার বাজি পোড়ানোর আনন্দ থেকে দূরেই থাকতে হবে৷ এতে আমাদেরও ক্ষতি হল৷ এই ব্যবসায় গ্রামের অবদানও কম নয়৷”

নামেই প্রশাসনিক বাজার৷ মাঠের গেটে ফ্লেক্সে লেখা রয়েছে সাধারণ ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এই বাজি বাজার৷ কিন্তু বাজারের স্টল থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুর খরচাই হচ্ছে ব্যবসায়ীদের পকেট থেকে৷ ২১ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত এই বাজার চলবে৷ খুচরো ব্যবসায়ীদের ছোটো স্টলের জন্য গুনতে হয়েছে আট হাজার টাকা৷ আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের স্টলের খরচ সাড়ে ১৬ হাজার টাকা৷ শুধু স্টল নিলেই চলবে না৷ প্রতি স্টলে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ব্যবসায়ীদেরই করতে হয়েছে৷ ছোটো স্টলে অন্তত একটি ফায়ার এক্সটেনগুইজার রাখতে হয়েছে৷ বড়ো স্টলে একাধিক৷ সেসব কিনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদেরই৷ এর সঙ্গে দমকলকর্মী আর প্রশাসনের লোকজনের থাকার খরচও যাচ্ছে তাঁদের পকেট থেকে৷ সব মিলিয়ে খরচ অনেকটাই৷ জানালেন আরেক ব্যবসায়ী আনন্দকুমার পাল৷




ব্যবসায়ী অতুল ঘোষের কথায়,

“কম্পিটিশনের বাজার৷ ৫০ টাকার মাল ৫২ টাকায় ছেড়ে দিতে হচ্ছে৷ প্রতি হাজারে ১২-১৫ টাকার বেশি লাভ হয় না৷ আট মাস আগে মাল তুলতে হয়েছে৷ তার জন্য সরকারকে প্রতি বছরই ট্যাক্স দিয়ে থাকি৷ কিন্তু বাজি বিক্রির সময় সেই সরকারই বড্ড ঝামেলা করে৷ এবার যে এমন নির্দেশিকা জারি হবে, আগে বুঝতে পারিনি৷ তাহলে এত মাল তুলতাম না৷ এই অস্থায়ী বাজারে কতই বা ব্যবসা হবে! এর থেকে দোকানে ঢের ভালো ব্যবসা হত৷ প্রশাসনকে বলেছিলাম, এবার অন্তত আমাদের দোকানেই ব্যবসা করতে দেওয়া হোক৷ কিন্তু আমাদের কথায় কেউ কানই দেয়নি৷ আর এই ব্যবসা করব কিনা ভেবে দেখতে হবে৷”

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Comments


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page