উপাচার্যের অপসারণের দাবি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভ এদিনও অব্যহত৷ নিজেদের ১০ দফা দাবিতে গতকাল বিকেল ৫টা থেকে শুরু হওয়া পড়ুয়াদের আন্দোলন এখনও চলছে৷ তবে পুলিশের সহযোগিতায় গতকাল রাত ১টা নাগাদ মুক্তি পেয়েছেন ঘেরাও হয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই আধিকারিক৷ শিক্ষা মহলের অনুমান, এই ইশ্যুতে আরও বড়ো সমস্যায় পড়তে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷
উল্লেখ্য, ১০ দফা দাবিতে গতকাল বিকেল থেকে পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শীর্ষ আধিকারিককে ঘেরাও করে রাখেন৷ ওই দুই কর্তা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট অফিসার তথা অস্থায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রাজীব পুততুন্ডি ও অডিট অফিসার তথা অস্থায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিনান্স অফিসার বিনয়কৃষ্ণ হালদার৷ দুই কর্তাকে ঘেরাও মুক্ত করতে গতকাল রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উপস্থিত হয় ইংরেজবাজার থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ পুলিশ আধিকারিকরা দফায় দফায় আন্দোলনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন৷ কিন্তু নিজেদের দাবিতে অনড় পড়ুয়ারা পুলিশের কোনও কথা শুনতে চাননি৷ অবশেষে রাত ১টা নাগাদ পুলিশ ঘেরাও হয়ে থাকা দুই আধিকারিককে তাঁদের দপ্তর থেকে বের করে নিয়ে যায়৷
শুরুটা হয়েছিল গত সোমবার থেকে৷ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির দ্রুত ফল প্রকাশ, সার্টিফিকেট ফি কমানো, বন্ধ হয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দ্রুত চালু করা সহ ১০ দফা দাবিতে সরব হন পড়ুয়ারা৷ পড়ুয়াদের বক্তব্য, নিজেদের দাবিগুলি তাঁরা এর আগেই উপাচার্যকে জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু উপাচার্য ১৪ দিন ধরে ছুটি নিয়ে কলকাতায় বসে রয়েছেন৷ এদিকে তাঁদের ভবিষ্যত সঙ্কটের মুখে পড়েছে৷ তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা গত সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের আন্দোলন শুরু করেন৷ এখন তাঁরা বুঝতে পারছেন, তাঁদের মুখোমুখি হতে না চেয়েই উপাচার্য কলকাতায় বসে রয়েছেন৷
পড়ুয়াদের আন্দোলনের অভিমুখ কিন্তু এবার পালটাতে শুরু করেছে৷ এদিন তাঁরা পরিষ্কারভাবে উপাচার্য গোপালচন্দ্র মিশ্রের অপসারণ দাবি করেছেন৷ এই দাবিতে তাঁরা শিক্ষামন্ত্রী ও খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানিয়ে বার্তা পাঠাচ্ছেন৷ পড়ুয়াদের অভিযোগ, উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন না৷ ফোন করলে ফোন কেটে দেন৷ এমন উপাচার্যের প্রয়োজন নেই তাঁদের৷ যে উপাচার্য পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেন না, তাঁর ওই পদে থাকার যোগ্যতা নেই বলেই মনে করেন তাঁরা৷ নিজেদের দাবিতে তাঁরা গতকাল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী রেজিস্ট্রার তথা ডেভেলপমেন্ট অফিসারের দ্বারস্থ হন৷ কিন্তু তিনিও তাঁদের ফেলে চলে গিয়েছেন৷ এই অবস্থায় যতক্ষণ না তাঁদের দাবি পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
শিক্ষা মহলের একাংশ মনে করছে, এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই দায়ী৷ এর আগে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আর্থিক, স্বজনপোষণ, ফল প্রকাশে দেরি সহ অনেক অভিযোগ উঠেছে৷ তার শেষ উদাহরণ, সম্প্রতি রুশার তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ৷ এতদিন ধরে এত অভিযোগ উঠলেও সেসব নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও উদ্যোগ নেয়নি৷ বরং পড়ুয়াদের সঙ্গে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ অবিলম্বে পড়ুয়াদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ না নেওয়া হলে এই ছাত্র বিক্ষোভ আরও বড়ো আকার ধারণ করতে পারে বলেই মনে করছেন বিদ্বজ্জনরা৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments