সংগঠন নয়, বিকল্প দল হতে দলবদলেই ভরসা বিজেপি’র!
top of page

সংগঠন নয়, বিকল্প দল হতে দলবদলেই ভরসা বিজেপি’র!

বিরোধীকে সমর্থকে পরিণত করা রাজনীতি এবং কূটনীতির অন্যতম দায় এবং লক্ষ্য। রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং রাজনীতি উদ্ভবের সময় থেকে শত্রুকে মিত্র শিবিরে নিয়ে আনতে যে কোনো উপায়ই প্রয়োগ করতে দ্বিধা করেনি ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রশক্তি বা রাজনৈতিক দল। ভারতের মতো বহুধা বিভক্ত রাজনৈতিক বিন্যাসের দেশে এই ফর্মুলা’র প্রয়োগ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্যাপকতর। সাধারণ নৈতিকতার সঙ্গে রাজনৈতিকতার তফাত কমানোর উদ্দেশ্যেই সম্ভবত ১৯৮৫ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৫২ তম সংশোধনী এনে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রণীত ও দশম তফশিলে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু আইনের মাধ্যমে অন্য বিষয়গুলোর মতোই রাজনৈতিক বিশ্বস্ততা পরিবর্তন বন্ধ করা লক্ষণীয়ভাবে সম্ভব হয়নি এ দেশে।


BJP

এই বিষয়টির অবতারণার উদ্দেশ্য মূলত পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ’র ঘোষণার স্পষ্ট প্রতিধ্বনি করে ওই দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ একদিনের মালদা সফরে এসে জানিয়ে দিয়েছেন, অন্যান্য দল নেতা-কর্মীদের জন্য তাদের দরজা খোলা রয়েছে। আরো একটি বিষয় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন সম্প্রতি রাজ্যের নির্বাচনি রাজনীতিতে বিক্ষিপ্ত সাফল্য পেলেও এখনও এ’রাজ্যে তাদের দল প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। স্বভাবতই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে গেলে কংগ্রেস, বাম শিবির এবং অবশ্যই তৃণমূল কংগ্রেস থেকে রাজ্য এবং জেলাস্তরের প্রভাবশালী পরিচিত মুখগুলোকে যে দলে আনতে হবে, তা একরকম মেনেই নিয়েছে বিজেপি’র রাজ্য নেতৃত্ব।

‘বিধিসম্মত সতর্কীকরণ’ হিসাবে অবশ্য দিলীপবাবু জুড়ে দিয়েছেন – প্রথমত অন্য দল থেকে বিজেপি’তে যোগ দেওয়া নেতা-নেত্রীদের ভাবমূর্তি হতে হবে ‘স্বচ্ছ’ এবং ‘অনুকরণযোগ্য’ এবং দ্বিতীয়ত তাদের বিজেপি’র রাজনৈতিক আদর্শ এবং কর্মসূচির প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে হ’বে।

দ্বিতীয় শর্তটি বাহ্যিকভাবে মেনে নেওয়াটা বিজেপিতে যোগদানেচ্ছুক রাজনৈতিক মুখগুলোর পক্ষে কঠিন কিছু নয়। কিন্তু প্রথম শর্তটি রাজ্য বিজেপি নেতারা নিজেরাই ক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় কতটা মানবেন তার নিশ্চয়তা নিয়ে সম্ভবত নিজেরাও ঘোরতর সন্দিহান।

‘বদলে’ উদাহরণ হিসাবে রাজ্য বিজেপি সুপ্রিমো যে মুখগুলোর কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাদের পরিচিত ও অভিজ্ঞতা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ প্রায় নেই বললেই চলে। (১) এ রাজ্য থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয়মন্ত্রী সুরিন্দর সিংহ আলুওয়ালিয়া রাজীব গান্ধি’র প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় লোকসভায় কংগ্রেসের বিখ্যাত ‘হল্লা ব্রিগেড’ – এর অন্যতম সদস্য ছিলেন। (২) বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোবাসার জাভেদ আকবর বিহারের কিশানগঞ্জ থেকে কংগ্রেসের দু’বারের (১৯৮৯, ১৯৯১) নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন। (৩) উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রীসভায় নারী ও শিশুকল্যাণ এবং পর্যটন মন্ত্রী এবং একসময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হেমবতী নন্দন বহুগুণা’র মেয়ে রীতা বহুগুণা যোশী সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের সভানেত্রীও ছিলেন।


কিন্তু এ রাজ্যে যে মুখটিকে এখনও পর্যন্ত দলে টানতে পেরেছেন দিলীপবাবু সিপিএম’র সেই প্রাক্তন বহিষ্কৃত সাংসদ লক্ষণ শেঠের ‘স্বচ্ছ’ ও ‘অনুকরণযোগ্য ভাবমূর্তি’ নিয়ে আলোচনায় তিনিও হয়তো খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন না। ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছানোটাই যেখানে মূল লক্ষ্যে সেখানে অবশ্য ‘পাস্ট’ নয় ‘পারফরমেন্স’ই বিবেচ্য। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হল তৃণমূল কংগ্রেসের ‘উন্নয়ন যজ্ঞে’ শামিল করার লক্ষ্যে বিরোধীদলগুলো’র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দলে টানার যে প্রাত্যহিক প্রক্রিয়া নিয়ে নিয়ম করে তোপ দাগছেন দিলীপবাবুরা, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে বিজেপিও যে সেই রাস্তাতেই হাঁটতে কসুর করবে না, তা বুক বাজিয়েই জানিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ থেকে দিলীপ ঘোষরা।

দল ভারী করার মধ্যে ক্ষমতা দখল ছাড়াও একটি প্রবল আত্মতৃপ্তি কাজ করে। ৩৪ বছরের সিপিএম রাজত্বেও পঞ্চায়েতস্তর থেকে জেলাস্তর পর্যন্ত বিরোধী দলের পাশাপাশি এমনকি শরিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের দলে টানার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে সেই ট্রেন্ড জোরালো হয়েছে। নিজেদের ‘পার্টি উইথ ডিফারেন্স’ বলে দাবি করা বিজেপিও শেষ পর্যন্ত রাজ্যে রাজনৈতিক বদলানোর লক্ষ্যে (দল) বদলকেই হাতিয়ার করতে চাইছে তাতে নিজেদের সাংগঠনিক দৃঢ়তার প্রতি অনাস্থা স্পষ্ট। আর এতে নতুনত্ব তো নেই-ই।


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page