জনগর্জনে বোধন মোদীর
top of page

জনগর্জনে বোধন মোদীর

মালদার গৈরিক শিবির ভেবেছিল, ভেনি, ভিডি, ভিসি৷ অর্থাৎ তিনি আসবেন, দেখবেন, জয় করবেন৷ তিনি এসেছেন, দেখেছেন, কিন্তু সবার মন জয় করতে পারলেন কি? মানুষের উচ্ছ্বাস আপ্লুত করেছে তাঁকে৷ বাংলার কোনও মায়ের গর্ভ থেকে পুনর্জন্মের আকাঙ্খায় মা-মাটি-মানুষের সরকারকে ধুয়ে দিয়েছেন৷ তাঁর মুখে প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারার আর্তি৷ সব মিলিয়ে মালদায় শুক্রবার সকালের পুরোটাই ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর৷


মাথার উপর গনগনে সূর্য৷ অন্তত দেড় লাখ মানুষ৷ থার্মোমিটারের সূচকে ৪০ ডিগ্রির তাপ ছাউনির নীচে আরও বেশি৷ একুশের ভোটেই তাঁর আসার কথা ছিল৷ আসতে পারেননি৷ হতাশ ছিল পদ্ম শিবির৷ এদিন হতাশা বদলে গিয়েছিল উন্মাদনায়৷ ছাউনি থেকে গরম বাতাসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল মোদী ম্যানিয়া৷ তাই কিছুক্ষণ বক্তৃতা দেওয়ার পর তিনি থেমে যান৷ বলে ওঠেন, ‘আপনাদের এত ভালোবাসা দেখে মনে হচ্ছে পূর্বজন্মে আমি এই বাংলায় জন্মেছিলাম অথবা পরজন্মে বাংলার কোনও মায়ের গর্ভে জন্মাব৷’


পাশের দুই কেন্দ্রে যখন মানুষ নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করছে, তখন পুরাতন মালদার সাহাপুর অঞ্চলের নিত্যানন্দপুরে কার্যত জনসমুদ্র৷ বক্তব্য রাখতে গিয়ে মোদীর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে বাংলার চাকরিহারাদের কথা৷ তিনি বলেন, ‘তৃণমূল বাংলায় যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছে৷ তৃণমূল সরকারের জন্য বাংলার ২৬ হাজার পরিবারের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ যাঁরা ঋণ নিয়ে তৃণমূলের তোলাবাজদের চাকরির জন্য টাকা দিয়েছিলেন, এই দুর্নীতিবাজ দলের জন্য তাঁরা কাজ হারিয়েছেন৷ তাঁরা আজ দিশেহারা৷ আদালতের রায়ে তাঁদের বেতনও ফেরত দিতে হবে৷ মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের৷ সব তৃণমূলের দুর্নীতির জন্য৷’


বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জেলায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সতর্ক ছিলেন মোদী৷ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র সিএএ আইন লাগু করেছে৷ ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে সেই আইন বাতিলের পরিকল্পনা করেছে৷ দেশ ভাগাভাগিতে গঠিত অন্যান্য দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, জৈন ও বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার চলছে৷ সেখানে মন্দির, গুরুদ্বার, মঠ ভেঙে দেওয়া হচ্ছে৷ বাড়ির মেয়েদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ এই মানুষগুলো কোথায় যাবে? তাদের নাগরিকত্ব দিতেই এই আইন৷ নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে নয়৷ দেশের মুসলিম মহিলাদের অপমান, লাঞ্ছনা আর অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি দিতে বিজেপি সরকার তিন তালাক অবৈধ ঘোষণা করেছে৷ আইন লাগু করে মুসলিম মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত করেছে৷ এখন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা হচ্ছে৷ আর এই বাংলায় মা-মাটি-মানুষের সরকারই মহিলাদের উপর সবচেয়ে বেশি অত্যাচার করেছে৷’



মোদী এদিন মালদার আম আর মাখনার জন্য ফুড ইন্ডাস্ট্রি তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন৷ কিন্তু জেলার রেশম চাষ নিয়ে তাঁর মুখে কোনও কথা শোনা যায়নি৷ এনিয়ে হতাশ হয়েছেন রেশমচাষি থেকে শুরু করে এই শিল্পে জড়িয়ে থাকা মানুষজন৷ তাঁর অভিযোগ, ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি করার জন্যও তৃণমূল কাটমানি চাইছে৷ তবে এদিন প্রধানমন্ত্রীর মুখে জেলার অভিশাপ, গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ নিয়েও কোনও বার্তা পাওয়া যায়নি৷ এতেও মন ভেঙেছে জেলাবাসীর৷


আগামী ৭ মে তৃতীয় দফার নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এই জেলার দুই কেন্দ্রের মানুষ৷ এখনও বাকি বেশ কয়েকটা দিন৷ এই দিনগুলিতে মোদীর বক্তব্য নিয়ে নিশ্চিতভাবেই অনেক কাটাছেঁড়া চলবে৷ শেষ পর্যন্ত ফল কী হবে, তা জানতে অপেক্ষা আরও এক মাসের বেশি সময়ের৷


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page