মালদার পাঁচ বিখ্যাত কালীমন্দির সফর
top of page

অনন্ত মাতৃশক্তির আবাহন

ধন ত্রয়োদশীর রাত পোহালেই কালীপুজো৷ তার আগে মালদার পাঁচ বিখ্যাত কালীমন্দির সফর করলেন শুভাশিস সেন

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের অন্যতম হল কালীপুজো৷মালদা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী কালীপুজো হয়ে থাকে৷এই প্রতিবেদনে সেই সকল ঐতিহ্যবাহী কালীপুজো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল...


শোভানগরের কালীপুজো


ইংরেজবাজার শহর থেকে পশ্চিমে মানিকচকঘাটগামী রাস্তায় শোভানগর গ্রামে পঞ্চাশ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এক কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয়৷বর্তমানে স্থানীয় উল্কা ক্লাবের পরিচালনায় এই পুজো বিগত চল্লিশ বছর ধরে হচ্ছে৷স্থানীয় বাসিন্দা শশাঙ্কশেখর ঝা এই পুজোর প্রথম উদ্যোক্তা৷শশাঙ্কবাবু উল্কা নাট্যগোষ্ঠীর একজন সদস্য ছিলেন৷শোভানগর গ্রামের এই নাট্যগোষ্ঠীর সেসময় যথেষ্ট নামডাক ছিল৷পরবর্তীকালে এই নাট্যগোষ্ঠীর কলাকুশলীরা এই পুজোর সাথে যুক্ত হয়ে যান৷সেই থেকে উল্কা কালী নামে পরিচিতি লাভ করে এই পুজো৷প্রতিমা নির্মাণে ৮০ টি বাঁশ, এক ট্রাক পাটকাঠি, ৩৫ কেজি সুতলি, ৩০ পণ খড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷প্রতিমার বিশাল আকৃতির কারণে, স্থানীয় কালিন্দ্রী নদীতে ঘট বিসর্জনের মাধ্যমে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়ে থাকে৷



গোবরজনা কালী


জেলার রতুয়া ব্লকের কালিন্দ্রী নদী সংলগ্ন আমবাগানের মধ্যে অবস্থিত গোবরজনা কালী আবার ঐতিহাসিক কারণে বিখ্যাত৷জনশ্রুতি, ডাকাত রানি দেবী চৌধুরানি ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে স্থানীয় কালিন্দ্রী নদীর মাটি ও গোবর দিয়ে কালীমূর্তি নির্মাণ করে পুজো করেছিলেন৷সেই থেকে এই নামকরণের সার্থকতা৷বলিপ্রথা এখানে বর্তমান৷এই পুজোকে কেন্দ্র করে এলাকায় মেলা বসে৷অমাবস্যা শেষে কালিন্দ্রী নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়৷



বুলবুলচণ্ডীর বিশালাকৃতির কালী


হবিবপুর ব্লকের অন্তর্গত বুলবুলচণ্ডী বাজার এলাকার বিশালাকৃতির কালী জেলার অন্যতম একটি কালীপুজো হিসাবে পরিচিত৷বর্তমানে নির্মিত স্থায়ী মণ্ডপে প্রায় ৩৫ হাত উঁচু দেবী পূজিতা হন৷পুজো উপলক্ষ্যে এখানে মেলা বসে৷এখানে বলিদান প্রথা নেই৷প্রায় ১০ দিন দেবী এই স্থায়ী মণ্ডপে অবস্থান করেন৷এখান থেকে সামান্য কিছু দূরে বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালের নিকট আরও একটি কালীপুজো হয়৷স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এই দেবী কালী হলেন বুলবুলচণ্ডী বাজারে অবস্থিত কালীর ছোটো বোন৷এখানে অবশ্য বলিপ্রথা আছে৷পূর্বে ৭ দিন পরে নিরঞ্জনের দিন শোভাযাত্রা সহকারে ছোটো বোনকে বড়ো বোনের সঙ্গে দেখা করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হত, কিন্তু বাজারে স্থান সংকুলানের কারণে দুই বোনের দর্শন প্রথা বর্তমানে বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷



মানিকোড়া গ্রামের কালীপুজো


এই হবিবপুর ব্লকেরই অন্যতম এক প্রসিদ্ধ কালীপুজো হল মানিকোড়া গ্রামের কালীপুজো৷আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের কালীপুজোকে কেন্দ্র করে ৪ দিন ধরে এলাকায় মেলা বসে৷চলে সারারাত ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে আদিবাসী সাংস্কৃতিকর বিভিন্ন বিষয়ের উপলব্ধি লক্ষ করা যায়৷এখানে দেবী কৃষ্ণবর্ণা, আদিবাসী সাজে সজ্জিতা৷এখানে প্রচুর বলিদান হয়৷জনশ্রুতি আছে যে, বলির রক্ত দেখে দেবী নিজের আসন ছেড়ে এগিয়ে আসেন৷তাই বলিদানের সময় দেবীকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়৷মূলত এই পুজো মানিকোড়া সংলগ্ন বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দাদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে৷



রামনগর কাছারিবাড়ির কালী


জেলার অন্যতম আরেকটি কালীপুজো হল ইংরেজবাজার শহরের দক্ষিণে অবস্থিত চাঁচল রাজ এস্টেটের রামনগর কাছারিবাড়ির কালীপুজো৷রাজ পরিবারের রাজত্ব আর নেই, তাই এই পুজো বর্তমানে একেবারে গুরুত্বহীন অবস্থায়৷একসময় বেনারসি শাড়ি পরিহিতা দেবী মৃৎশিল্পীরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে হ্যাজাকের আলোয় শোভাযাত্রা সহকারে নিজ আসনে অধিষ্ঠান করতেন৷আজ সেই দেবীর জন্য বরাদ্দ একটা সাধারণ সুতির শাড়ি৷স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে এখনও এই পুজো করে চলেছেন৷ব্রিটিশ আমলে প্রকাশিত মালদা গেজেটিয়ারে এই কালীপুজোর উল্লেখ রয়েছে৷দুঃখের বিষয় বর্তমানে চাঁচল রাজ এস্টেটের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি এই পুজোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন না৷



বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page