রহস্যময়ী কালীর বিচিত্র রূপায়ণ
top of page

রহস্যময়ী কালীর বিচিত্র রূপায়ণ

শক্তি আরাধনার পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত আসমুদ্রহিমাচল৷ উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, সারা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন শক্তিপীঠ৷ এই বাংলায় শক্তি আরাধনা হিসেবে সবাই কালীপুজোকেই বুঝে থাকেন৷ এই দেবীকে ঘিরে সব জায়গাতেই জন্ম নিয়েছে বাস্তব-অবাস্তব, নানা উপকথা৷ অনেক জায়গায় বংশপরম্পরায় দেবীর পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন মৃৎশিল্পী ও পুরোহিতদের বংশও৷ দেবীর পুজোও নানা জায়গায় নানা উপাচারে করা হয়৷ কোথাও শ্মশানকালী, কোথাও ডাকাতকালী, কোথাও কালী পূজিত হন চামুণ্ডা রূপে, কোথাও কালী ভয়ংকরী, কোথাও বামা, কোথাও দক্ষিণা, কোথাও বা বরাভয়া৷ আর ক’দিন পরেই কালীপুজোয় মাতবে বাংলা৷ সেই স্রোতে গা ভাসাবে মালদা জেলার সাত থেকে সত্তরও৷



দশ মাথার কালীপুজো


মালদা শহরের মধ্যে যে কালীপুজোগুলি মৌলিকত্বে মানুষের মনে বিশেষ জায়গা নিয়ে রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গঙ্গাবাগ এলাকার মহাকালী৷ বর্তমানে গঙ্গাবাগে মহাকালীর মন্দির থাকলেও ১৯৩০ সালে এই পুজো শুরু হয়েছিল পুড়াটুলি এলাকায়৷ অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকদের মোকাবিলা করতে এলাকার কিছু যুবক নিজেদের মানসিকভাবে দৃঢ় করে তুলতে শুরু করেন মহাকালীর আরাধনা৷ সারা জেলায় সেই পুজো দশ মাথার কালীপুজো হিসেবেই খ্যাত৷ এখানে দেবীর দশ মাথা, দশ হাত ও দশ পা৷ প্রতিমায় শিবের কোনও অস্তিত্ব নেই৷ দেবীর পায়ের তলায় রয়েছে অসুরের কাটা মুণ্ড৷ প্রতি হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র৷ পুজো উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থের বৈকৃতিক রহস্যে এই মূর্তির উল্লেখ পাওয়া যায়৷ বিহারের বিন্দুবাসিনীতে পাহাড়ের গায়েও প্রাচীন যুগে খোদাই করা রয়েছে এই মূর্তি৷ গঙ্গাবাগ এলাকায় মায়ের মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে ১৯৮৫ সালে৷ বলিপ্রথা চালু রয়েছে৷


এক রাতের কালী


শহরের আরেকটি প্রাচীন পুজো সর্বমঙ্গলাপল্লির এক রাতের কালী৷ স্থানীয় প্রবীণদের দাবি, এই পুজো অন্তত সাড়ে তিনশো বছরের পুরোনো৷ তখন এই এলাকা জঙ্গলে ঢাকা ছিল৷ সেই জঙ্গলে ছিল ডাকাতদের আড্ডা৷ ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে তারা শক্তির আরাধনা করত৷ লোকচক্ষুর অন্তরালে সন্ধে নামলে মায়ের মূর্তি গড়ে পুজো করা হত৷ পুজো শেষে ডাকাতি করতে বেরোত তারা৷ ডাকাতি শেষে অন্ধকার থাকতেই ফের মায়ের কাছে এসে প্রণাম জানিয়ে পাশেই একটি জলাশয়ে মূর্তিকে বিসর্জন দিত৷ এখনও সেই পুজো চালু রয়েছে৷ এখানে অবশ্য বলিপ্রথা নেই৷


কালীদের পাঁচ বোন


মালদা শহরের কালীতলা এলাকার কালীদের পাঁচ বোন এখনও পূজিত হন৷ এঁরা হলেন বুড়িকালী, ডাকাত কালী, কাঁচাখাওকি কালী, তারাকালী ও মশানকালী৷ এর মধ্যে কালীতলা প্রথম লেনে বুড়িকালী, দ্বিতীয় লেনে ডাকাতকালী, চিত্তরঞ্জন পুরবাজারের ভিতরে কাঁচাখাওকি ও মশানকালীর মন্দির রয়েছে৷ তারাকালীর মন্দির রয়েছে চিত্তরঞ্জন পুরবাজারের সবজিপট্টি এলাকায়৷ শোনা যায়, প্রায় ৪০০ বছর আগে কালীতলা এলাকায় রাজত্ব করতেন ৫ ডাকাত৷ তাঁরাই এই পুজোগুলির প্রবর্তন করেন৷ মহানন্দা নদীতে বণিকদের নৌকায় ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা শক্তির উপাসনা করতেন৷ এখনও কালীপুজোর দিন চার বোন মৃৎশিল্পীর ঘর থেকে একসঙ্গেই মন্দিরে যাত্রা শুরু করেন৷ তবে বর্তমানে বুড়িকালীর স্থায়ী মূর্তিতেই পুজো হয়৷


পুরাতন মালদা শহরের বেশ কয়েকটি কালীপুজো অতি প্রাচীন৷ তার মধ্যে অন্যতম ডাকাতকালীর পুজো৷ পুরাতন মালদা স্টেশন থেকে অনতিদূরে একটি পিতরিঙ্গা গাছের নীচে এই পুজো হয়ে থাকে৷ ডাকাতদের প্রবর্তিত এই পুজোর বয়সও অন্তত সাড়ে তিনশো বছর বলে স্থানীয়দের দাবি৷ এই পুজোতেও বর্তমানে বলিপ্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷

শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, মালদা জেলার গ্রামেগঞ্জেও অনেক প্রাচীন কালীপুজো হয়ে থাকে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সামসীর লস্করপুর সংলগ্ন পলাশতলা গ্রামের পুজো৷ ১১৮০ বঙ্গাব্দে এই পুজোর সূচনা হয়৷ এই পুজোর প্রবর্তন করেন তৎকালীন শ্রীপুরের জমিদার মহসিন আলি হোসেন চৌধুরি৷ প্রতিবছর এখানে শতাধিক পাঁঠা ও পায়রা বলি দেওয়া হয়৷ এছাড়া রয়েছে রতুয়া ২ ব্লকের গোবরজনা গ্রামের বিখ্যাত কালীপুজো৷ এই পুজোর সঙ্গে দেবী চৌধুরানি ও ভবানী পাঠকের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে৷ এখানকার কালীমূর্তি ভয়ংকরী৷ প্রতিবছর কয়েক হাজার ছাগবলি দেওয়া হয়৷ চাঁচল কালীবাড়ির ৩২৯ বছরের পুরোনো পুজোও গোটা জেলার মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে৷ মালতিপুর গ্রামে এই পুজোর প্রবর্তন করেন তৎকালীন চাঁচলরাজ রায়বাহাদুর ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরি৷ এখানে দেবী পাথরকালী নামে পরিচিত৷ আগে বলিপ্রথা চালু থাকলেও এখন তা বন্ধ৷

শুধু উপরের এই ক’টিই নয়, গোটা জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন অনেক প্রাচীন কালীপুজো৷


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page