রাতভর বিনিদ্র হাট
top of page

রাতভর বিনিদ্র হাট

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ছড়াটি মনে আছে তো? ‘হাট বসেছে শুক্রবারে, বকসিগঞ্জের পদ্মা পাড়ে৷ জিনিসপত্র জুটিয়ে এনে, গ্রামের মানুষ বেচে কেনে’৷ এখানে অবশ্য হাট পদ্মা পাড়ে বসেনি, বসেছে পুরাতন মালদার সাহাপুর অঞ্চলের বেহুলা নদীর পাড়ে৷ আর বিশেষত্ব দিনরাত খোলা এই সাপ্তাহিক হাট, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে৷

প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে যে, বাংলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে গ্রামীণ সাপ্তাহিক হাটের গুরুত্ব অপরিসীম৷ বিভিন্ন কবিতা, গল্পে বা উপন্যাসে নানা জায়গার হাটের বর্ণনা পাওয়া যায়৷ মালদা জেলায় গাজোলের হাট, পুরাতন মালদার নবাবগঞ্জ হাট ও বাঁশহাট, পাকুয়াহাট, আলমপুর হাট, আইহো হাট, কালিয়াচকের গবাদিপশুর হাট -এরকম বেশ কয়েকটি হাটের অস্তিত্ব দেখা যায়৷ যেগুলি জেলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে৷



মঙ্গলবার রাত্রি আটটা থেকে পরেরদিন বুধবার রাত্রি আটটা পর্যন্ত এই হাটে লেনদেন চলে৷ এছাড়া এই হাটে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী ও বুধবার সকালে শাকসবজি, মাছ কেনাবেচা চলে৷



আজ আমরা যে হাটটি নিয়ে আলোচনা করছি এখানে সেটি একেবারে নতুন৷ এখনও এই হাট এক মাস বয়সও অতিক্রম করেনি৷ এই দিনরাত খোলা হাটের অবস্থান পুরাতন মালদা ব্লকের মালদা কোর্ট রেলস্টেশনের পূর্বদিকে বেহুলা নদীর তীরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস সংলগ্ন সুজাপুর বাইপাস মোড়৷ যে জমিতে বসছে এই হাট, তার মালিক মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলা থানার রানিতলা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় অ্যাডভোকেট মোহম্মদ শাহজাহান আলি৷ হাট মালিকের এক প্রতিনিধি কুমার ঘোষ জানালেন, এটি মূলত কাপড়ের পাইকারি হাট৷ এই হাটে বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা লেনদেন করেন৷ এর মধ্যে একদিকে যেমন আছে শাড়ি তেমনি বিভিন্ন রেডিমেড পোশাক ও শীতবস্ত্র৷ মূলত প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত্রি আটটা থেকে পরেরদিন বুধবার রাত্রি আটটা পর্যন্ত এই হাটে লেনদেন চলে৷ এছাড়া এই হাটে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী ও বুধবার সকালে শাকসবজি, মাছ কেনাবেচা চলে৷ হাটের প্রতিনিধি আরও জানান, ইতিমধ্যেই হাটে ২৫০ জন ব্যবসায়ী তাঁদের নাম নথিভুক্ত করেছেন৷ স্থানীয় লোকজন ছাড়াও কলকাতা, শান্তিপুর, মুর্শিদাবাদ ও বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এই হাটে তাঁদের পণ্য বিক্রি করতে আসেন৷ তবে বুধবার সকালে স্থানীয় বিক্রেতারা মূলত শাকসবজি ও মাছ বিক্রি করে থাকেন৷ মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই হাটে কেবলমাত্র পাইকারি কেনাবেচা চলে৷ তারপরে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে খুচরো কেনাবেচা৷


কালিয়াচকের জালালপুর নিবাসী ব্যবসায়ী মহঃ আইজুল জানালেন, তিনি হাটে শীতবস্ত্র পাইকারি দামে বিক্রি করেন৷ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুচরো ব্যবসায়ীরা এই হাটে তাঁর কাছে শীতবস্ত্র কেনেন৷ ওপর এক ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ দাস জানালেন, হাটটি নতুন হয়েছে, বর্তমানে এখানে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম৷ ঠিকমতো প্রচার হলে আগামীতে এখানে ব্যবসার উন্নতি হবে বলে তিনি আশাবাদী৷ হাটের ব্যবসায়ীরা জানালেন, হাট কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিক আলো ও ত্রিপলের ছাউনির ব্যবস্থা করেছেন৷ পরবর্তীতে স্থায়ী ছাউনি নির্মাণ করার আশ্বাস দিয়েছেন, যাতে বর্ষাকালে বৃষ্টির ও শীতকালে শীতের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷


হাট পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেল যে, রাত যত বাড়ে তত হাটে ব্যবসায়ীরা একের পর এক দোকান খুলছে৷ সেইসঙ্গে বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়ও৷ এই ক্রেতাদের অধিকাংশ আবার খুচরো ক্রেতা যারা নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দা৷ সাহাপুর গ্রাম নিবাসী শম্পা হালদার নিজের স্কুটি নিয়ে রাতে হাটে হাজির হয়েছেন মেয়ের জন্য শীতবস্ত্র কেনার তাগিদে৷ তিনি জানালেন, লোকমুখে এই হাটের কথা জানতে পেরে তিনি এখানে এসেছে৷ জিনিসের দাম প্রসঙ্গে তিনি জানান, গুণগতমানের সঙ্গে দামের সামঞ্জস্য আছে৷ পাকুয়াহাটে বস্ত্র ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, এই পাইকারি হাট চালু হওয়ার ফলে সস্তায় পাইকারি দামে এখানে কাপড় কেনা সম্ভব হচ্ছে৷ তা না হলে অন্য জেলার হাটে গিয়ে কাপড় কিনতে হত৷


এই হাট প্রসঙ্গে মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স-এর সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু জানান, মালদা বণিকসভা ও মঙ্গলবাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির কাছে এই হাটের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই, কারণ হাট কর্তৃপক্ষ তাঁদের এই বিষয়ে এখনও অবহিত করেননি৷ তবে তিনি জানান, মালদা বণিকসভার পক্ষ থেকে মালদা থানায় তাঁরা একটি আবেদন রাখবেন যাতে হাটের দিন ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়৷ এই প্রসঙ্গে মালদা থানার আইসি শান্তিরঞ্জন পাঁজা বলেন, এই হাট সম্পর্কে তাঁর কাছেও কোনো তথ্য নেই, তবে যদি কোনো অপরাধমূলক কাজকর্ম ঘটে সেই ব্যাপারে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷

একথা অনস্বীকার্য যে এই হাট সম্পূর্ণরূপে চালু হলে জেলার খুচরো বস্ত্র ব্যবসায়ীদের কলকাতার বড়োবাজার কিংবা হাওড়া জেলার মংলা হাটে ছুটতে হবে না ব্যবসার প্রয়োজনে৷ এর ফলে তাঁদের সময় ও অর্থ এই দুইয়ের সাশ্রয় হবে৷ এছাড়া এখানে বেশ কিছু স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান হবে৷ এই হাটকে কেন্দ্র করে জেলার বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এক পরিবর্তন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণ, যা জেলার অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করবে৷

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page