মালদা ভেঙেও চাঁচল জেলা হোক
top of page

মালদা ভেঙেও চাঁচল জেলা হোক

রাজ্যটা বাড়ছে। আরে বছরে নয়, জেলার সংখ্যায়। নতুন জেলা গড়ে, বরং বলা ভালো পুরোনো সাবেক জেলা ভাঙতে ভাঙতে এখন রাজ্যের জেলার সংখ্যা তেইশ।

প্রশাসনের স্বার্থে বড়ো এলাকার চেয়ে ছোটো এলাকা সবসময়েই শ্রেয়। প্রাক ব্রিটিশ শাসন আমলে দেখা গিয়েছে এদেশে রাজ্য এবং রাজার সংখ্যা বহু ছিল। কিন্তু বড়ো রাজ্যকে বেশি দিন অটুট রাখা যায়নি। ভারতের সেই রাজাদের তুলনায় ব্রিটিশ শাসকরা অবশ্যই অনেক উন্নতমানের রাজনীতিক, প্রশাসক ছিলেন। এখানে উন্নত রাজ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। উন্নত শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কূট, কৌশলের দিক থেকে তৎকালীন ভারতীয় রাজন্যবর্গের চেয়ে এগিয়ে থাকা অর্থে। স্বাধীনতা উত্তর ভারতেও একাধিকবার রাজ্য ভাগ হয়েছে। সেই পথ ধরে বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গের জেলার সংখ্যাও। প্রশাসকরাই জানিয়েছেন, সুশাসনের স্বার্থেই এই ভাগের পদক্ষেপ।


Chanchal Rajbari
মালদা ভেঙেও চাঁচল জেলা হোক

মালদা এবং উত্তর মালদা এখনই তো দুটি আলাদাভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে প্রশাসনের কাছেই। সেক্ষেত্রে চাঁচলকে সদর করে মালদা জেলাকে ভেঙে উত্তর মালদা জেলা কিংবা চাঁচল মহকুমাকেই পৃথক জেলা করা যেতে পারে। এতে উত্তর মালদা অঞ্চলের মানুষেরই সুবিধা হবে। তাদের স্বার্থেই প্রশাসন বিষয়টিকে বিচ্ছিন্নতাবাদ হিসাবে বিষয়টিকে না দেখে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতেই পারেন।

একেবারে সাম্প্রতিককালে নতুন যে সব জেলা হয়েছে সেগুলির সবই যে প্রশাসনের সু-স্বার্থে তা নয়। অন্তত একটির ক্ষেত্রে নতুন জেলার সিদ্ধান্তের সঙ্গে যে রাজনীতি পুরোপুরি জড়িয়ে আছে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। সেই নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। সাম্প্রতিককালে দক্ষিণবঙ্গে ভাগ হয়েছে মেদিনীপুর জেলা। সাবেক জেলা ভাগ পূর্ব ও পশ্চিমে। পরে ফের পশ্চিমকেও ভাগ করা হয়েছে। ভাগ হয়েছে বর্ধমান জেলা। আর উত্তরে ভাগ হয়েছে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং। এতগুলি ভাগ বাঁটোয়ারার মধ্যে দার্জিলিং ভাগ করে কালিম্পং জেলা গঠন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত যত না প্রশাসনিক স্বার্থে তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে।

দার্জিলিং পাহাড়ের সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক ঘটনা যথেষ্টই স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। দার্জিলিং জেলার তিনটি পার্বত্য মহকুমাকে নিয়ে নতুন একটি রাজ্যগঠনের অবাস্তব দাবিকে কেন্দ্র করে বারে বারে পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠেছে। রাজ্যের একসময়ের বামফ্রন্ট সরকার সেই সমস্যা যে ঠিকমতো নাড়াচাড়া করতে পারেনি এটা বাস্তব। ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের নতুন রাজ্যপন্থী আন্দোলনকারীদের দমাতে সরাসরি ব্রিটিশ শাসকদের 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল' নীতিকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। তারই একটা হল দার্জিলিং জেলাকেই ভাগ করে দেওয়া। এমনিতে জেলার পার্বত্য এই মহকুমায় জনসংখ্যা খুব কম। সেই অর্থে জেলা হওয়ার যোগ্যতা বলতে প্রায় কিছুই নেই। পুরসভার সংখ্যাও মাত্র এক। কালিম্পং থেকে জেলা সদর দার্জিলিঙে প্রশাসনিক কাজের জন্য যাতায়াতে যে সমস্যা হয়, সমতল শিলিগুড়ি মহকুমার একাধিক জায়গা থেকেও সদর দার্জিলিং যেতে তার চেয়েও বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়। বস্তুত, দার্জিলিং জেলা যদি ভাগ করতেই হত তাহলে আগে সমতল এলাকাকে আলাদা করে দেওয়ার দরকার ছিল। যে কারণে, কালিম্পংকে জেলা করা হল সেখানকার গোটা জনমুক্তি মোর্চা নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রীকে কাছে টানতে সেভাবে আরও অনেকেই উৎসাহিত হতে পারেন।

গত বিধানসভার নির্বাচনে খুব ভালো ফলের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের খুব খারাপ ফল হয়েছে মালদা জেলায়। নির্বাচনের নিরীখে বলাই যায় জেলা থেকে এই দল ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। একাধিকবার, একাধিক জায়গায় রাজ্য মন্ত্রীসভার শীর্ষ সদস্যরা জানিয়েছেন, মালদা কোনো বিধায়ক, সাংসদ দেয়নি, সেখান থেকে কোনো মন্ত্রী নেই, তাই সেখানকার উন্নয়নের গতিও যে আশাপ্রদ হবে না, তা তো বলাই বাহুল্য। বাস্তবিকই মালদায় উন্নয়নে প্রশাসনিকস্তরে অনেক খামতি রয়ে গিয়েছে। এই জেলারও পরিধি অনেকটাই। আয়ের রাস্তা বলতে কৃষি ছাড়া আম, লিচু এবং পর্যটন। এমনিতেই মালদায় এমন বহু প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে সেখান থেকে জেলা সদরে যাতায়াতে একটা প্রায় গোটা দিনই বরবাদ হয়ে যায়। অর্থাৎ যে কারণ দেখিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা ভেঙে আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং ভেঙে কালিম্পং, বর্ধমান ভেঙে বর্ধমান পশ্চিম জেলা করা হয়েছে, প্রশাসনিক সুবিধার জন্য, সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য একইভাবে দার্জিলিংকে ফের ভেঙে শিলিগুড়ি পৃথক জেলা মালদাকেও ভেঙে আরও একটি জেলা করা যেতেই পারে। মালদা এবং উত্তর মালদা এখনই তো দুটি আলাদাভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে প্রশাসনের কাছেই। সেক্ষেত্রে চাঁচলকে সদর করে মালদা জেলাকে ভেঙে উত্তর মালদা জেলা কিংবা চাঁচল মহকুমাকেই পৃথক জেলা করা যেতে পারে। এতে উত্তর মালদা অঞ্চলের মানুষেরই সুবিধা হবে। তাদের স্বার্থেই প্রশাসন বিষয়টিকে বিচ্ছিন্নতাবাদ হিসাবে বিষয়টিকে না দেখে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতেই পারেন।


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page