আমাদের মালদা ডিজিট্যাল

Sep 30, 2019

একচালার দুর্গা পরিবারকে পাঁচ চালায় আনার কাহিনি

Updated: Feb 24, 2020

এবারে আর থিম পুজো হচ্ছে না উজ্জ্বল ক্লাবের পুজো মণ্ডপে। সেখানে থাকবে পুজোর জানা-অজানা একটি ইতিহাস। সালটা ১৯১৮, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে তখন। দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন তুঙ্গে, বন্দেমাতরম মন্ত্রকে স্মরণ করে দেশমাতার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত দেশের স্বদেশি বিপ্লবীরা। দুর্গাপুজোর মতো উৎসবেও সময় সুযোগ পেলেই ব্রিটিশকে বধের পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত বাংলার বীর সন্তানরা।

সেসময় কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলের এক ধনী ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্গাপুজো দেখতে গিয়ে অপমানিত হতে হয় কয়েকজন স্থানীয় যুবককে। তাই পরের বছরই তাঁদের উদ্যোগে শুরু হয় কলকাতার নেবু বাগানে বারোয়ারি শারদোৎসব। ১৯২৬ সালে হঠাৎ সেই পুজোর নাম বদলে করা হয় বাগবাজার সর্বজনীন। প্রথমদিকে সেখানে প্রতিমা গড়তেন মৃৎশিল্পী নিরঞ্জন পাল। তারপর সুদীর্ঘকাল এই দায়িত্বভার সামলেছেন প্রথিতযশা কৃষ্ণনগর-ঘূর্ণি ঘরানার কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী জিতেন পাল। ১৯৩৮ সালে দুইবছর বাগবাজার সর্বজনীনের সভাপতির পদ অলংকৃত করেছিলেন সকলের পরিচিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সেসময় কুমোরটুলি সর্বজনীনেরও সভাপতি ছিলেন স্বয়ং তিনি। সেখানে প্রতিমা গড়তেন গোপেশ্বর পাল। সেই বছর অর্থাৎ ১৯৩৮ সালে মহা পঞ্চমীর দিনে ঘটে যায় এক চরম বিপত্তি। অগ্নিকাণ্ডে নিমিষে পুড়ে ছাই হয়ে যায় দুর্গামণ্ডপ ও একচালার দেবীপ্রতিমা। বোধনের আগের দিনের এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন স্বয়ং নেতাজি। সুভাষচন্দ্রের ডাকে সাড়া দিয়ে সেদিন প্রতিমা গড়তে আসেন লণ্ডন ফেরত ভাস্কর গোপেশ্বর পাল। এক রাতের মধ্যেই নতুন প্রতিমা গড়ার অনুরোধে গড়ে ওঠে এক চালার পরিবর্তে পাঁচ চালার প্রতিমা। মা দুর্গার প্রতিমা তৈরি করেন স্বয়ং গোপেশ্বরবাবু। লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক গণেশ গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় অন্যান্য চার সহশিল্পীকে। এরপর ষষ্ঠীর দিন নতুন মণ্ডপে পূজিত হয় প্রথম পাঁচ চালার ঠাকুর।

থিমের প্রতিমার জনক হিসেবে তাই ইতিহাসে নাম উঠেছে গোপেশ্বর পালের। এবার সেই পাঁচচালার দেবী পূজিত হবে মালদার পিরোজপুর এলাকার উজ্জ্বল ক্লাবের পুজো মণ্ডপে। প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী সুশান্ত চৌধুরি। ক্লাব কমিটির সম্পাদক শুভ্র ঘোষ জানান যে, এবছর মহা চতুর্থীতে থাকছে বিশেষ আকর্ষণ। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা প্রতিমা শিল্পী ও সহকারী শিল্পীরাই থাকছে এই পুজো উদ্বোধনের দায়িত্বে। এছাড়া পুজোর চারটে দিন থাকছে জমজমাট নানা ধরণের অনুষ্ঠান। এই ক্লাবে নবমীর দিন সকলে মিলে প্রসাদ খাওয়ার রেওয়াজ।