নেক্সট ইয়ার থেকে নো মোর
top of page

নেক্সট ইয়ার থেকে নো মোর

শীত এখনো জাঁকিয়ে পড়েনি৷ হালকা হাফ সোয়েটারেই বেশ আরাম লাগছে তারকবাবুর৷ মনটাও ফুরফুরে৷ অফিস ফেরত আর চায়ের আড্ডায় যাননি আজ৷ বসে আছেন বাড়িতেই৷ ফোনটা একবার বেজে বেজে থেমে গেল৷ ফোন ধরার ইচ্ছে নেই তারকবাবুর৷ বারবার চোখ চলে যাচ্ছে ঘড়ির দিকে৷ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে৷ শুরু হবে তাঁর প্রিয় সিরিয়াল৷ না, ঠিক প্রিয় নয়, কারণ যাকে বলে সিরিয়ালের পোকা, তা তিনি নন৷ বরং এতদিন তাঁর স্ত্রীর সিরিয়াল ‘গেলা’র বিরুদ্ধ অবস্থানই নিয়ে এসেছেন তিনি (গেলা শব্দটাও তাঁরই)৷ তবে আজকের ব্যাপারটা আলাদা৷ গত সপ্তাহে কাজের চাপ কম থাকায় দিন তিনেক প্রাইম টাইমে চোখ চলে গিয়েছিল টিভির দিকে৷ যে সময়টা তাঁদের টিভির ওপর তাঁর কোনো অধিকার থাকে না৷ নানা টানাপোড়েন, চড়াই উতরাই, নাচ-গানের আহ্বানে কখন যে তিনি চুপটি করে বসে পড়েছিলেন স্ত্রীর পাশে, খেয়াল করেননি৷ শেষ হতেই অবশ্য ভুল বুঝে ‘ছিঃ, এসব কেউ দেখে!’ জাতীয় মন্তব্য করছিলেন তবে তাঁর স্ত্রী ব্যঙ্গ আর অবজ্ঞার মাঝামাঝি একখানি মুচকি হাসি দিয়ে রান্নাঘরে পাড়ি দেন৷ তারকবাবুও আর কথা বাড়াননি৷


Mrinal Seal
নেক্সট ইয়ার থেকে নো মোর

গ্লোবাল বাঙালি যখন কুয়াশা মাখা সকাল, কড়াইশুঁটির কচুরি, নতুন গুড়ের সঙ্গে যোগ করে নিয়েছে সান্টাক্লস, ক্রিসমাস ট্রিকে, তখন স্যান্টা আর ইংরেজি নতুন বছরের কাছে ভালো থাকার একটু আবদার তো করাই যায়৷

আজ তারকবাবু বাড়িতে একা৷ সকাল থেকেই ভেবে রেখেছেন, সুযোগটা ছাড়া যাবে না৷ মাত্র আধঘণ্টার তো ব্যাপার! সিরিয়ালটা দেখতেই হবে৷ তাছাড়া আজ মূল পুরুষ চরিত্রটি দ্বিতীয়বার বিবাহ করতে চলেছে, সিঁদুর পরানোর মুহূর্তে দরজায় পা দেবে তাঁর প্রথম স্ত্রী৷ এটুকু প্রিভিউ দেখা হয়ে গেছে, এখন আসলটির অপেক্ষা৷ ঠিক সময়ে শুরু হয়ে গেল সিরিয়াল৷ প্রথম অর্ধে তেমন কিছু ঘটল না৷ তবে বিরতির পরেই ঘনিয়ে এল সেই মুহূর্ত৷ উৎসবের বাড়িতে দরজায় পা রাখল এক নারী৷ আবহ সহযোগে৷ উত্তেজনায় নখটা দাঁতে কাটতে যাচ্ছিলেন তারকবাবু, হঠাৎ পর্দা কালো হয়ে গেল৷ ভেসে উঠল লেখা, ‘যোগাযোগ করুন স্থানীয় কেবল অপারেটরের সাথে’৷ একরাশ বিরক্তি নিয়ে তারকবাবু তাই করলেন৷ ওপারে সুরেলা নারীকণ্ঠ বলল, লাইনের কাজ চলছে, আধঘণ্টায় ঠিক হয়ে যাবে৷ ধুত্তেরি, বলে ফোন কেটে দিলেন তারকবাবু৷ নাহ, এবারে একটা কড়া সংকল্প নিতেই হবে৷ নেক্সট ইয়ার থেকে নো মোর কেবল৷ হ্যাঁ, নতুন বছরে স্মার্ট হবেন তারকবাবু৷ নতুন বছরে নেটফ্লিক্স৷


গল্পটা হয়তো এইটুকুই৷ তবে এমনই হাজারো ইচ্ছা গল্প হয়ে ডানা মেলে ওঠে বছরের এই সময়ে৷ নতুন বছরে পা রাখার মুহূর্তে একটু আবেগপ্রবণ বা দার্শনিক হয়ে ওঠে না কোন মানুষ? নতুন বছর, নতুন সকাল, নতুন ভোর এগুলি সাহিত্যে, সিনেমায় চিরকালই স্বপ্ন, নতুন আশার প্রতীক৷ আর গ্লোবাল বাঙালি যখন কুয়াশা মাখা সকাল, কড়াইশুঁটির কচুরি, নতুন গুড়ের সঙ্গে যোগ করে নিয়েছে সান্টাক্লস, ক্রিসমাস ট্রিকে, তখন স্যান্টা আর ইংরেজি নতুন বছরের কাছে ভালো থাকার একটু আবদার তো করাই যায়৷ সঙ্গে বদভ্যাসগুলোকে ঝেড়ে ফেলার একটা সুযোগ পাওয়া যায়৷ যেমন নেক্সট ইয়ার থেকে নো মোর অকারণে মোবাইল খুটখাট, নো মোর তেল ঝাল মশলাদার খাবার, নো মোর পাবজি, নো মোর কুঁড়েমি করে বেলা অবধি ঘুমানো৷ কিংবা একটা কড়া রুটিন বানিয়ে ফেলব, যোগা ক্লাসে, জিমে ভরতি হব, মন দিয়ে পড়াশুনা করবো, রোজ ভোরে উঠে হাঁটতে বেরোব, আরও কতকি করবো! তবে কে না জানে, সুযোগ পেলেই তার সদ্ব্যবহার সবাই করতে পারে না৷ কাজেই নতুন বছর এলেও অচিরেই মালুম হয় যে পুরোনো বছরের থেকে এটা খুব একটা আলাদা নয়৷ সংকল্পগুলো বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আবার৷ তাহলে এই চক্রবত পরিক্রমার নিট ফল কি শূন্য? নাহ, কখনো না৷ কারণ এই নেক্সট ইয়ার থেকে নো মোর প্ল্যানের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অদম্য প্রাণশক্তি, বেঁচে থাকার ইচ্ছা, জীবনের প্রতি ভালোবাসা৷ সেটুকুই আমাদের চলার পথের পাথেয়৷ সেটুকু সম্বল করে আমরা কি চাইতে পারি না, নেক্সট ইয়ার থেকে নো মোর জেনোসাইড! নতুন বছরে যেন কোনো মানুষ শরণার্থী না হন, একটাও গাছ যেন কাটা না পড়ে! খুব বেশি চাওয়া হবে কী সেটা?


ইলাসট্রেশনঃ মৃণাল শীল

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page