কোথায় গেল পুর নির্বাচনের জমাটি থ্রিলার?
হাতে আর মাসখানেকের ক’দিন বেশি সময়। কিন্তু এখনও পুর নির্বাচন নিয়ে হেলদোলই নেই মালদার দুই পুরসভায়। শুধু শাসকই কেন, চুপচাপ বিরোধীরাও। হলটা কী!
কলকাতা পুর নির্বাচন শেষ। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের বাকি কর্পোরেশনগুলিতে নির্বাচন। তারপরেই রাজ্যের সমস্ত পুরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই ভোটপর্ব করা যেতে পারে। যদিও এনিয়ে এখনও কোনও নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হয়নি।
যদি সত্যিই ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের অন্যান্য পুরসভাগুলির সঙ্গে ইংরেজবাজার এবং পুরাতন মালদায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে হাতে যে আর সময় নেই তা বলতে কোনও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। অথচ এখনও অদ্ভুতভাবে চুপচাপ সমস্ত রাজনৈতিক দল। এমনকি দেওয়াল দখলের সেই লড়াইও এখনও দেখা যাচ্ছে না। পাড়ায় পাড়ায় কোনও নির্বাচনি কার্যালয় নেই। ভোটকে কেন্দ্র করে ছেলে-ছোকরাদের আড্ডা নেই। হলটা কী!
ঢুঁ দেওয়া যাক শাসকদলের অন্দরে। সেখানে এখন রীতিমতো ভয়ের আবহ। কারণ, পিকে। ইতিমধ্যে খবর এসেছে, এবার দুই পুরসভার অনেক পুরোনো কাউন্সিলরই টিকিট পাবেন না। কারণ, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের ফল। ওই দুই ভোটেই দুই শহরে বিজেপির থেকে কয়েক যোজন পিছিয়ে তৃণমূল। খোঁজখবর নিয়ে টিম পিকে নাকি জানতে পেরেছে, শাসকদলের কাউন্সিলরদের উপর আস্থা নেই দুই শহরের মানুষের। তাঁরা নাকি চোখের সামনে কাউন্সিলরদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখেছেন। দুর্নীতির সঙ্গে অভিযোগ রয়েছে দুর্বিনীত আচরণেরও। কাউন্সিলরদের শরীরে নাকি এখন ৪০ ভরির সোনার গয়না ঝোলে, দুই আঙুলের ফাঁকে থাকে বিদেশি সিগারেট। এসব জেনে টিম পিকে মালদায় এসে তদন্ত করেছে। তারই জেরে নাকি কোপ পড়তে চলেছে অনেক কাউন্সিলরের টিকিটে। তাই যখন প্রার্থীপদই নিশ্চিত নয়, তখন ভোটের জন্য আর খাটে কে? ফলে আপাতত শীতের কম্বলে ওম নিতেই ব্যস্ত নেতা-কর্মীরা।
গেরুয়া শিবিরের কাহিনি আবার অন্য। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ আড়ালে আবডালে বলছেন, গত দুটি নির্বাচনে ইংরেজবাজারে যেভাবে তাঁরা মানুষের সমর্থন পেয়েছিলেন, বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরির কল্যাণে তা প্রায় শেষ। শুধু সংবাদমাধ্যম আর সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া তাঁকে দেখাই যায় না। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর বলয় পেরিয়ে মানুষ তাঁর কাছে পৌঁছোতেই পারে না। তার উপর রাজ্য সভাপতি বদলের পর যে নাটক চলছে, তার প্রভাবও এই পুরসভায় পড়েছে। মানুষ আর দলের উপর বিশেষ ভরসা রাখতে পারছে না। এখনও পর্যন্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। সবকিছুই চলছে বিলম্বে। এই দেরিতে চলার অভিযোগ উঠছে পুরাতন মালদা বিজেপির অন্দরেও। তবে এখানে অন্তত দলীয় বিধায়ককে নিয়ে মানুষের খুব একটা ক্ষোভের কথা শোনা যায়নি।
[ আরও খবরঃ জামাইবাবুর বিরুদ্ধে গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ]
এবার আসা যাক বাম-কংগ্রেসের কথায়। একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই সময় পার করে দিচ্ছে দুই দল। দুই দলই বলছে, তারা দুই পুরসভার জন্য নিজেদের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে ফেলেছে। তবে এখনও নির্বাচনি জোট হতে পারে। তাই সেই তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে দুই শিবিরে খোঁজ নিয়ে একটি বিষয়ে নিশ্চিত, এবার পুর নির্বাচনে মালদা জেলায় বাম-কংগ্রেসের জোট হচ্ছে না। হয়তো চলতি সপ্তাহেই বামফ্রন্ট নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিতে পারে। কিন্তু জোট হোক কিংবা না হোক, লাল-হাতের সমন্বয় নির্বাচনে কেমন ফল করবে, তা নিয়ে খুব একটা আশান্বিত নন দুই শিবিরের নেতৃত্বই।
তবে যাই হোক না কেন, মানুষ চাইছে নির্বাচনি দামামা অন্তত বেজে যাক। করোনা আবহে একঘেয়ে জীবনে তাতে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। তাই যতটা সময় লড়াই দেখা যায়, ততটাই মন ভালো রাখার খোরাক…
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments