সড়কে অন্তহীন বিড়ম্বনা
যানজট এখন শুধু কালিয়াচকের নয়, সমগ্র জেলাবাসীর জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম৷ কিছু দিন প্রশাসনের তৎপরতার জন্য ৩৪ নং জাতীয় সড়ক যানজটমুক্ত হয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনের ঢিলেমিতে তা পুনরায় স্বমহিমায়৷ জাতীয় সড়কের ৪টি লেনের মধ্যে দুটি লেনই বিভিন্ন ধরনের পরিবহণের সৌজন্যে দখলীকৃত৷ কী নেই এই পরিবহণ ব্যবস্থায়- ট্রাক, বাস, মিনিবাস, ম্যাক্সিট্যাক্সি এমনকি প্রাচীনকালের গোরু ও ঘোড়ার গাড়িও৷ মানসিকতা এমনটা যেন সরকার তাদের গাড়ি রাখার জন্য রাস্তাটা তৈরি করেছে৷ কিছু প্রতিবাদ করলেই একটাই কথা- পিডব্লিউডি-র জায়গায় গাড়ি রেখেছি অর্থাৎ অন্যের সুবিধা অসুবিধা কী হল তা দেখার কোনো প্রয়োজন নেই৷
আর এই কারণে নিত্য যানজটে নাকাল হচ্ছে সাধারণ নিত্যযাত্রীরা৷ অধিকাংশ অফিসযাত্রী বা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রী ঠিক সময়ে তাঁদের গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে পারেন না৷ অসুবিধা হয় অ্যাম্বুলেন্স ও দমকল বিভাগের মতো জরুরি পরিসেবার ক্ষেত্রেও৷ ঠিকমতো হিসাব ধরলে মালদা থেকে ফরাক্কা এই ৩৯ কিলোমিটার রাস্তা যেতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগে, সেখানে সেই রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা৷ বৈষ্ণবনগর থেকে আমনুর বিবি তাঁর কন্যা হালিমা খাতুনকে নিয়ে মালদা শহরে একটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সুকলে আসেন৷ তিনি অভিযোগ করেন যে, কালিয়াচকের নিত্যদিনের যানজটের ফলে স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়৷ বাড়ি ফেরার পথেও একই অবস্থা হয়৷ একই অভিযোগ সুনীল দাস নামে এক শিক্ষকেরও৷
কেন এই যানজট বা এর সমাধানই বা কী? সাধারণ মানুষের বিশেষ করে নিত্যযাত্রীদের মতে, অধিকাংশ অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত পরিবহণ কর্মীদের বেপরোয়া মানসিকতা এর জন্য দায়ী৷ ভুক্তভোগী নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ অবশ্য প্রশাসনের দিকেও৷
তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন ঠিকমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই অচলাবস্থা চলতে পারে না৷ কারণ কিছুদিন আগে কালিয়াচকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (গ্রামীণ) কার্যালয় স্থাপন হওয়ার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)-এর উদ্যোগে এলাকা যানজটমুক্ত করা হয়৷ বর্তমানে পুলিশের কাজের ঢিলেমিতে আবার যানজট শুরু হয়েছে৷
এই প্রসঙ্গে কালিয়াচক থানার বক্তব্য যে, তাদের থানায় লোকবল কম৷ তবে তারা মাঝেমধ্যেই যানজট মুক্ত করার চেষ্টা করে, প্রয়োজনে রাস্তায় গাড়ি রাখলে জরিমানা করা হয়৷ কিন্তু তাদের আক্ষেপ যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের দরুন তাদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকে৷ তবে জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন যে, এই যানজটের বিষয়ে তাঁর কাছে অনেক অভিযোগ এসেছে৷ খুব শীঘ্রই এই যানজটমুক্ত করতে পরিবহণ কর্মী ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একসাথে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবেন৷ প্রয়োজনে এর জন্য কঠোর আইন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন৷ এখন সময়ের অপেক্ষা কবে এই এলাকার মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হয় আর কালিয়াচকের যানজট সমস্যার সমাধান হয়৷
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
ছবিঃ মিসবাহুল হক
Comments