top of page

অথঃ গৌড়বঙ্গ কথা

গুটি গুটি পায়ে দশ দশটা বছর হয়ে গেল৷ নেই নেই থেকে কিছুটা আছে আছে’র বাতাসও বইছে৷ কিন্তু গায়ের গন্ধটা যেন পুরোনোই রয়ে গেছে৷ ১০ বছর আগে যেমন ছিল, এখনও তার তেমন কোনো পরিবর্তন নেই৷

গল্পটা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে৷ ২০০৮-এ যখন মুখ দেখিয়েছিল, উচ্ছ্বাসে কেঁপে উঠেছিল গৌড়বঙ্গের প্রাচীন ভূম৷ উত্তরের শিলিগুড়ি আর নয়, মহানন্দা পাড়ের কাছের এই শহর তখন আরও উজ্জ্বল দুই দিনাজপুর আর মালদা জেলার পড়ুয়াদের কাছে৷ হাত বাড়ালেই শিক্ষার জানালা৷ সময় যেমন বাঁচবে, অর্থও বাঁচবে৷ অর্থনৈতিক এবং শিক্ষার মানদণ্ডে রাজ্যের অন্যতম পিছিয়ে পড়া তিন জেলার শিক্ষার্থীদের কাছে সেটা ছিল সত্যিই সুসময়৷



সুসময় থেকে দুঃসময়ে পাড়ি দিতে বেশি সময় লাগেনি৷ সৃষ্টির প্রথম পর্যায় থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ও তার প্রকাশিত ফলে যেন নিজেদের বিনাশের বীজ খুঁজে পাচ্ছিলেন পড়ুয়ারা৷ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে তা স্থগিত করে দেওয়াটা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়৷ ১০ বছরেও সেই নিয়ম বহাল৷ জোরদার ছাত্র আন্দোলন কোনো প্রতিষ্ঠানের ভিত যে কতটা নড়িয়ে দিতে পারে, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সবাইকে সেটা আঙুলের মুখে দাঁড়িয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যেন৷


এই বেসামাল অবস্থা শুধুই কি ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে! প্রকাশ কি শুধুই তার বহিরঙ্গে! এর অন্দরমহলের হাওয়াটাও যে কত ঘোরালো, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত যে কেউ বলতে পারবেন৷

এই বেসামাল অবস্থা শুধুই কি ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে! প্রকাশ কি শুধুই তার বহিরঙ্গে! এর অন্দরমহলের হাওয়াটাও যে কত ঘোরালো, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত যে কেউ বলতে পারবেন৷ ক্ষমতার অলিন্দে থাকার স্বাদ পেতে কতজন যে জিভ চাটছেন, ক্ষমতাচ্যূত হয়ে কতজন যে ছোবল মারার সময় খুঁজছেন, সেসবের হিসাব রাখতে হয়তো চিত্রগুপ্তের মতো কাউকে রাখতে হতে পারে৷ আর সেসব কারণেই বৈঠকে কলকাতায় ডেকে নিয়ে গিয়ে সেখানেই নিষ্ক্রমণের রাস্তা দেখানো হতে পারে কোনো ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে, আবার সেই রেজিস্ট্রারের জমানাতেই জাল নথি পেশ করে চাকরি পাওয়া কোনো অধ্যাপককে সেই জায়গা থেকে বরখাস্ত করা যেতে পারে৷ কখনও ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করা হতে পারে, আবার কখনও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের স্বাক্ষর করা সাদা কাগজ পেশ করে নিয়মবহির্ভূতভাবে জিনিসপত্র কেনা হতে পারে৷ নিন্দুকরা সুযোগটা ছাড়তে নারাজ৷ তারা সাফ জানাচ্ছে, এটাই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়৷

কিন্তু বারবার বিশ্ববিদ্যালয় কেন এমন সব খবরের শিরোনামে উঠে আসছে? শিক্ষাবিদ্‍দের একাংশের মতে, এর প্রধান কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো স্থায়ী আধিকারিক না থাকা৷ বর্তমানে অধ্যাপকদেরই অস্থায়ীভাবে আধিকারিক মনোনীত করা হয়৷ এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’ভাবে ক্ষতি হচ্ছে৷ অতিরিক্ত কাজ করার জন্য অধ্যাপকরা যেমন বেশি পারিশ্রমিক পান না, তেমনই তাঁরা অধ্যাপনা না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হন পড়ুয়ারা৷ সবচেয়ে বড়ো বিষয়, আধিকারিকের চেয়ারে বসতে যখন যিনি উপাচার্য থাকেন, তাঁর গুড বুকে নাম তোলার জন্য অধ্যাপকদের একাংশের মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়৷ একই পরিস্থিতি হয় উপাচার্যেরও৷ কয়েকদিন আগে পর্যন্ত অস্থায়ী উপাচার্যরাই এই বিশ্ববিদ্যালয় চালিয়েছেন৷ ফলে তাঁরাও নিজেদের একটি চাটুকার গোষ্ঠী নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেন৷ এতে সার্বিকভাবে ক্ষতি হত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই৷

তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতির কিছুটা বদল হয়েছে৷ ১০ বছর পর অবশেষে স্থায়ী উপাচার্য পেয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়৷ যদিও এখনও রেজিস্ট্রার থেকে শুরু করে কনট্রোলার অফ এগজামিনেশন, ইনস্পেকটর অফ কলেজেস সহ সমস্ত আধিকারিক পদে অস্থায়ী নিয়োগ হয়ে রয়েছে৷ শিক্ষাবিদ্‍রা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পদে দ্রুত স্থায়ী নিয়োগ হওয়া প্রয়োজন৷ তবেই গৌড়ভূমের শিক্ষায় প্রকৃত আলোর পথযাত্রী হয়ে উঠবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ ঋদ্ধ হবে প্রায় দেড় লক্ষ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিনিধি৷


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

留言


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page