top of page

আমআদমির মুখের হাসি কেড়ে নিচ্ছে এনআরসি

এনআরসি৷ আপাতনিরীহ একটি শব্দবন্ধ৷ কিন্তু এই নিরীহ শব্দবন্ধটাই এই মুহূর্তে যেন ঝাঁকিয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে৷ ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন বা রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি আদপে কী, জানে না অনেকেই৷ সাধারণ মানুষের মনে এখন একটাই আতঙ্ক, যদি সেই পঞ্জিতে নিজেদের নাম না থাকে, তবে হয়তো ছেলেমেয়ে নিয়ে বিতাড়িত হতে হবে এই দেশ থেকে৷ মানুষ জেনে ফেলেছে, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চের আগে পরিবারের কারোর নামে থাকা সরকারি নথি থাকলেই দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার ভয় নেই৷ তার সঙ্গে অবশ্যই বর্তমান সরকারি নথিপত্র ঠিক থাকতে হবে৷ তাই সেই নথিতে থাকা ভুল সংশোধন কিংবা নতুন নথি তৈরিতে এখন ভিড়ে ভিড়াক্কার সরকারি দপ্তরগুলি৷ বিশেষত যেসব দপ্তরে এই সব নথি তৈরি কিংবা তাতে থাকা ভুল সংশোধন করা হচ্ছে, সেই দপ্তরগুলিতে পা ফেলার জায়গা থাকছে না৷ শুধু দিন নয়, নথির জন্য এখন রাতের পর রাতও জেগে থাকছে মানুষ৷ রাজ্যের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে সেই ছবি ধরা পড়েছে মালদাতেও৷ ভাদ্র-আশ্বিনের ভ্যাপসা গরমে প্রবল রোদের মধ্যে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে৷ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও ‘জীবনের থেকে স্বস্তি ভালো’ আপ্তবাক্য মাথায় রেখে হাজারো মানুষের স্রোত বয়ে যাচ্ছে সরকারি দপ্তরে তৈরি বিশেষ শিবিরগুলিতে৷


আঁধার কার্ড সংশোধন কেন্দ্র সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কের সামনে সকাল থেকেই লম্বা লাইন



কিন্তু এনআরসি কী? ১৯৫১ সালে এই শব্দবন্ধ প্রথম শোনা যায় অসমে৷ সেবছরই ওই রাজ্যে প্রথম এনআরসি তালিকা তৈরি হয়৷ দীর্ঘদিন আগে থেকেই অসম উদ্বাস্তু সমস্যায় ভুগছে৷ শুধু বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুরা নয়, ব্রহ্মদেশ থেকে আসা রোহিঙ্গা উপজাতির মানুষও ওই রাজ্যে উদ্বাস্তু সমস্যা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়৷ তাই বেআইনিভাবে আসা উদ্বাস্তু ও ভারতীয় নাগরিকদের চিহ্ণিত করতে ১৯৫১ সালে সেই রাজ্যে রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি করা হয়৷ কিন্তু তাতেও তেমন কোনও লাভ হয়নি৷ ১৯৫১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আরও অনেক উদ্বাস্তু সেই রাজ্যে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করে৷ প্রশাসনের একাংশের লোভকে কাজে লাগিয়ে তারা এদেশের ভোটার, আধার সহ অন্যান্য নথিতেও নিজেদের নাম তুলে নেয়৷ এতে রাজ্যের সঙ্গে বাড়তে শুরু করে রাষ্ট্রের সমস্যাও৷ তাই সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ওই রাজ্যে ফের রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি করা হবে৷ সেই তালিকা তৈরি হয়ে গেছে৷ প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেছে, ওই রাজ্যের প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষের কাছে ১৯৭১ সালের আগে এদেশের কোনও নথি নেই৷ এরপরেই কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশে এনআরসি তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ তাতে প্রবল বাধা এসেছে বিরোধীদের তরফে৷ বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার এই রাজ্যে এনআরসি করতে দেবে না বলে পণ করেছে৷ সেই বাধা যে রাজনৈতিক কারণেই, তা নিয়ে কারোর কোনও সন্দেহ নেই৷ কিন্তু রাজনীতি মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর করতে পারেনি৷ সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে, যে মুহূর্তে রাজ্যসভায় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, সেই মুহূর্তে এনআরসি বিল পাস করিয়ে এই রাজ্যে তা প্রয়োগ করা হবে৷ তৃণমূল কিংবা অন্য কোনও রাজনৈতিক দল এক্ষেত্রে বিজেপিকে ঠেকাতে পারবে না৷ কারণ, অসমের ক্ষেত্রেও একই বাধা এসেছিল৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আদেশে সেই রাজ্যে এনআরসি ঠেকানো যায়নি৷ অর্থাৎ আদালত এই ইশ্যুতে যে কেন্দ্রের পাশেই থাকবে, সেই বার্তা ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে৷ কিন্তু এনআরসি তালিকায় যাদের নাম থাকবে না, তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনও কেউ জানায়নি৷

দেশ ছাড়ার ভয়ে রাত জাগার পালা


তাই এখন সব ছেড়ে মানুষ দৌড়োচ্ছে নিজেদের সমস্ত নথিপত্র ঠিক করতে৷ ইতিমধ্যে কেন্দ্রের তরফে ভোটার ও আধার কার্ড তৈরি ও সংশোধনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে এই আতঙ্ক প্রবল আকার নিয়েছে৷ কারণ, কেন্দ্রে রয়েছে বিজেপি সরকার৷ যাদের গায়ে লেপটে রয়েছে হিন্দুত্বের তকমা৷ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের বক্তব্যও সেই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তুলেছে৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যতই এনআরসি লাগু না হওয়ার আশ্বাস দেওয়া হোক না কেন, মানুষ তাতে কান দিতে রাজি নয়৷ এদিকে প্রবল গরমে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য দুর্ঘটনাও ঘটছে৷ ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের৷ আতঙ্কে আত্মহত্যার কথাও শোনা গেছে৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ এতে দেখা দিয়েছে আরেক সমস্যা৷ যে কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনেই এনআরসি শব্দবন্ধ জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ সব মিলিয়ে রাজ্য জুড়েই এখন দেখা দিয়েছে এনআরসি বিশৃঙ্খলা৷ সেই পরিস্থিতি থেকে কবে রাজ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, এখন সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন৷


প্রতীকী ছবি।

Kommentit


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page