হিজাব বিতর্ক এবার মালদায়, স্বাস্থ্যকর্মীকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ
মালদার প্রত্যন্ত গ্রামেও হিজাব বিতর্কের ঝড় আছড়ে পড়েছে সুদূর কর্ণাটক থেকে। হিজাব পরে আসায় এক গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সের বিরুদ্ধে। এনিয়ে ওই নার্সের বিরুদ্ধে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মানসিকভাবে অত্যাচারিত ওই স্বাস্থ্যকর্মী। গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন বিডিও। তবে এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় রতুয়া।
অভিযোগকারী গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীর নাম আনোয়ারা খাতুন। তিনি রতুয়া-১ ব্লকের চাঁদমুনি-১ অঞ্চলের গোরক্ষা গ্রামের সাব-সেন্টারের এএনএম। তাঁর অভিযোগ, তিনি দফতর নির্ধারিত পোশাক পরেই ডিউটি করেন। তবে নির্ধারিত সেই পোশাকের রংয়ের হিজাব পরেন তিনি। তার জন্য তাঁর দায়িত্বে থাকা নার্স তাঁকে অপমান করেন। তাঁকে দফতরে ঢুকতে পর্যন্ত দেননি। নার্স তাঁকে জানিয়ে দেন, হিজাব খুলে না আসলে তাঁকে দফতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাই তিনি গোটা ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিএমওএইচ ও বিডিওকে অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি হিজাব পরেই কাজ করেন, ভবিষ্যতেও করতে চান।
আনোয়ারার বক্তব্য, ‘আমি প্রায় ১৫ বছর ধরে স্বাস্থ্য দফতরে কাজ করছি। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে গোরক্ষা গ্রামে কাজ করি। সরকারি নির্ধারিত পোশাক পরেই সবসময় ডিউটি করি। তবে সেই পোশাকের রংয়ের হিজাবও পরি। এনিয়ে আগে কখনও কোনও সমস্যা হয়নি। তবে হিজাব পরে কাজ করায় নার্স দিদি আমাকে এনিয়ে আগেও প্রশ্ন করেছেন। আমাকে অন্য আরও অনেকের মতো নানাবিধ পোশাক পরতে বলেছেন। আমি তাঁকে জানিয়ে দিই, নিজের রুচি অনুযায়ী পোশাক পরাটাই ভালো। কিন্তু সেই পোশাক যেন সরকার নির্ধারিত ইউনিফর্মের বাইরে না হয়। তারপর থেকে সব ঠিকমতোই চলছিল। সমস্যা দেখা দেয় মাস তিনেক আগে। আমাদের প্রতিমাসে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আমি হিজাব পরেই গিয়েছিলাম। সেখানে সবার সামনে দিদি আমাকে বলেন, আমি যেন হিজাব পরে বৈঠকে না আসি। শুধু তাই নয়, হিজাব পরে আমি যেন ডিউটি কিংবা তাঁর দফতরেও না যাই। আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি আমাকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। যাই হোক, তারপরেও এতদিন কেটে গিয়েছে। আমি হিজাব ছাড়িনি। তিনিও আমাকে আর কিছু বলেননি। কিন্তু ফের সমস্যা দেখা দেয় গতকাল। আমি মাসিক রিপোর্ট জমা দিতে দফতরে এসেছিলাম। আমাকে হিজাব পরে থাকতে দেখেই দিদি বলে দেন, তিনি আমার রিপোর্ট জমা নেবেন না। হিজাব পরে তিনি আমাকে তাঁর দফতরেও ঢুকতে দেবেন না। তিনি আমাকে দফতর থেকে বের করে গেট বন্ধ করে দেন। আমি তাঁকে জানাই, হিজাব পরে কাজ করার জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি নিয়েছি। কিন্তু তিনি আমার কথা না শুনে চিৎকার শুরু করে দেন। চিৎকার চ্যাঁচামেচির শব্দে বিএমওএইচ আমাকে ডেকে পাঠান। আমার কাছে গোটা ঘটনা শোনেন। তিনিও দিদিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দিদি তাঁর কোনও কথায় কান দিতে চাননি। বিএমওএইচের সঙ্গেও তিনি ঝামেলা শুরু করে দেন। অগত্যা রিপোর্ট জমা না দিয়েই আমাকে সেখান থেকে ফিরে আসতে হয়। তবে এনিয়ে আমি বিএমওএইচ ও বিডিওর কাছে অভিযোগ জমা করেছি।’
এনিয়ে অভিযুক্ত নার্স শম্পা প্রামাণিকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও কথাই বলতে চাননি। উলটে তাঁর ছবি তোলায় তিনি পুলিশ ডাকার হুমকি দেন। তবে বিডিও রাকেশ টোপ্পো জানান, এমন অভিযোগের কথা তিনি এখনও জানেন না। তিনি দফতরে গিয়ে এনিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। এমন অভিযোগ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
বিএমওএইচ মাসুদ রহমান জানান, ‘ওই স্বাস্থ্যকর্মী আমার কাছে লিখিত অভিযোগ জমা করেছেন। তবে ঠিক কী নিয়ে সমস্যা হয়েছে তা আমি ঠিকমতো জানি না। এনিয়ে আমি এখনও নার্সের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। অভিযোগের ভিত্তিতে আমি অবশ্যই এনিয়ে তদন্ত করব। যদি ছোটখাটো কোনও সমস্যা হয়ে থাকে, তবে আমি তা সমাধান করার চেষ্টা করব।
[ পরের খবরঃ হিজাব বিতর্ক রতুয়ায়, বরখাস্তের আবেদনে বিক্ষোভ ]
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments