ইংরেজির বানে ভাসবে মালদাও
top of page

ইংরেজির বানে ভাসবে মালদাও

শীতের ভোর৷ শরীরে লেপের ওম৷ ওমে স্বপ্ন যে কখন গ্রাস করেছে, বুঝতে পারেনি পল্টু৷ হঠাৎ লেপটা সরে গেল৷ গায়ে একটা শীতল ছ্যাঁকা৷ লেপটা আরও একবার গায়ে টানার চেষ্টা করল সে৷ পারল না৷ মা যে কখন লেপটা তার নাগাল থেকে সরিয়ে নিয়েছে বুঝতে পারেনি৷ ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা সবে জমে উঠেছিল৷ কাঁদো কাঁদো মুখে বিছানা থেকে উঠে পড়ে পল্টু৷ স্কুল যেতে হবে যে! তাকে তৈরি করে স্কুল পাঠিয়ে তবে তো মা কাজের বাড়ি যাবে৷ যাই হোক, তৈরি হয়ে বইয়ের আধছেঁড়া ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে পল্টু হাঁটা দিল স্কুলের পথে৷ রাস্তায় হুশহুশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে গাড়িগুলো৷ সেগুলোতে পরিপাটি ছেলেমেয়েদের দঙ্গল৷ ওরা সব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে৷ ওকে মা বলেছিল৷ সেসব স্কুলে পড়ার নাকি অনেক খরচ৷ পল্টুরও ইচ্ছে ছিল, ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়বে৷ মাকেও বলেছিল সেকথা৷ বলেছিল, তাদের স্কুলে ইংরেজি খুব বেশি পড়ানো হয় না৷ ডাক্তার হতে গেলে ইংরেজিটা ভালো জানতে হবে যে! কিন্তু মা সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, ওইসব স্কুলে তাকে পড়ানোর খরচ জোগাড় করতে পারবেন না তিনি।



রাজ্য শিক্ষাদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ১০০টি সরকার প্রেষিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল চালু করা হবে

উপরের অংশটা একটা উপমা মাত্র৷ কিন্তু শুধুমাত্র অল্প ইংরেজি জানা বা না জানার জন্য এই মালদা জেলায় পল্টুর মতো অনেক ছেলেমেয়েই একটা অংশের পর পড়াশোনার গণ্ডি পেরোতে পারে না৷ স্বপ্ন তাদের মরে যায় শুরুতেই৷ অর্থনৈতিক মানদণ্ডে রাজ্যের মধ্যে এই জেলা পিছনের সারিতে৷ স্বাভাবিকভাবে এই জেলায় শিক্ষিতের হারও ততটা বলার মতো নয়৷ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন জেলার আনাচেকানাচে গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল৷ অবশ্য ছবিটা শুধু এই জেলাতেই নয়, ছড়িয়ে রয়েছে রাজ্য জুড়ে৷ শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার৷ সম্প্রতি রাজ্য শিক্ষাদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ১০০টি সরকার প্রেষিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল চালু করা হবে৷ সেসব স্কুলের পঠনপাঠন শুরু হবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই৷ মূলত যেসব স্কুলের পরিকাঠামো রয়েছে, কিন্তু পড়ুয়া তেমন নেই, সেই স্কুলগুলিতেই চালু করা হচ্ছে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন৷ এই জেলার তিনটি স্কুলও সেই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে৷

শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে মালদার দুটি নামি স্কুলকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়৷ স্কুল দুটি হল মালদা রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির ও বার্লো গার্লস হাইস্কুল৷ কিন্তু এই দু’টি স্কুলেও মূলত উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরাই পড়াশোনা করে৷ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক স্তর পেরিয়ে যাওয়ার পর এই দুটি স্কুলের ছেলেমেয়েদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষার জন্য জেলার বাইরে পাড়ি দেয়৷ তবে এখনও এই দুটি স্কুলে সেই পঠনপাঠন শুরু হয়নি৷ জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে বার্লো গার্লস হাইস্কুলে তা চালু হতে চলেছে৷ তবে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে এই ব্যবস্থা চালু হতে ২০২০ সাল লেগে যাবে। এই পরিস্থিতিতে জেলা শিক্ষাদপ্তর মালদার আরও কয়েকটি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালু করার উদ্যোগ নেয়৷ স্কুলগুলি হল মকদুমপুর গার্লস হাইস্কুল, শিবাণী অ্যাকাডেমি ও প্রান্তপল্লি গার্লস হাইস্কুল। এর মধ্যে শিবাণী অ্যাকাডেমি উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ইতিমধ্যেই উন্নীত৷ জেলা শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই তিনটি স্কুলে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কোনো স্কুলে বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০ জনের বেশি নয়৷ শিক্ষাদপ্তরের মতে, এমন হলে মৃতপ্রায় স্কুলগুলিতে আবার পড়ুয়াদের জোয়ার দেখা দেবে৷ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাও ইংরেজি ভাষায় উন্নত হতে পারবে৷ নিজেদের ভবিষ্যতের সঙ্গে পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থাও তারা সুরক্ষিত করতে পারবে৷


সরকারি স্তরে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাদান শুরু হলে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাঙালি পড়ুয়াদের প্রভাব ফের বাড়তে শুরু করবে৷

রাজ্য সরকারের এই ভাবনাকে স্বাগত জানাচ্ছেন বিদ্বজ্জনরা৷ তাঁদের মতে, বাঙালি পড়ুয়াদের মেধা যথেষ্ট ভালো৷ কিন্তু ইংরেজি শিক্ষার অভাবে তারা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে৷ এই অবস্থায় সরকারি স্তরে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাদান শুরু হলে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাঙালি পড়ুয়াদের প্রভাব ফের বাড়তে শুরু করবে৷ একসময় যে সব রাজ্যের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠত, শুধুমাত্র ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চালু করে সেইসব রাজ্যের পড়ুয়ারা এখন দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে৷ রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত ফের বাঙালি পড়ুয়াদের পুরোনো স্বর্ণযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে৷


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page