top of page

ভারতীয় সেনা তৈরি করতে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কম্যান্ডো

তিনি নিজে পেশায় একজন সেনা কর্মী। তাঁর ইচ্ছে, এলাকার পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের সেনাবাহিনীর কাজে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ করা। এই লক্ষ্যে বেকার ছেলেমেয়েদের ট্রেনিং দিতে শুরু করেন ওই সেনাকর্মী। প্রায় দুই বছর ধরে চলছে তাঁর সেই ট্রেনিং ক্যাম্প। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করেছেন সেনার ওই জওয়ান। এই মুহূর্তে সেখানে ট্রেনিং নিচ্ছেন এলাকার প্রায় দেড়শো জন। তার মধ্যে রয়েছেন পাঁচটি মেয়েও।


সেনা কর্মীর নাম সাজ্জাদ আলি। তিনি ভারতীয় সেনার একজন কম্যান্ডো। বর্তমানে মুম্বাইয়ে কর্মরত। ছুটি পেয়ে এখন তিনি বাড়িতে রয়েছেন। প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে চাঁচল হাটে শুরু হয় তাঁর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ক্লাস। প্রায় চার ঘণ্টা ক্লাস চলে। বছর দুয়েক আগে হাতে গোনা পাঁচ-ছয়টি ছেলেমেয়ে সেই ক্লাসে যোগ দিয়েছিলেন। এখন সংখ্যাটা প্রায় দেড়শো। শুধু ফিজিক্যাল ট্রেনিংই নয়। সেনায় চাকরিপ্রার্থী ছেলেমেয়েদের জন্য সাজ্জাদ সাহেব ও তাঁর তিন বন্ধু এক শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। তার জন্য তাঁরা ওই শিক্ষককে প্রতি মাসে আট হাজার টাকা সাম্মানিক দেন। সেই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অঙ্ক, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের ট্রেনিং দেন। প্রতিদিন ফিজিক্যাল ট্রেনিং শেষে ছেলেমেয়েদের সেই শিক্ষকের কাছে পড়াশোনাও করতে হয়।



সাজ্জাদ সাহেব জানান, “ছোটোতে খুব কষ্ট করে মানুষ হয়েছি। অনেক কষ্টে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছি। আমার এলাকায় গরিব মানুষের সংখ্যা বেশি। এলাকার অনেকেই সেনা কিংবা আধাসেনায় কাজ করতে চায়। কিন্তু ফিজিক্যাল টেস্টে উত্তীর্ণ হতে না পেরে ফিরে আসে। তাই তাদের জন্য আমি ফিজিক্যাল ট্রেনিং দিই। তাদের যেন আর ফিরে আসতে না হয়। শুধু চাকরিই নয়, এখানকার ছেলেমেয়েরা যাতে দেশের সেবা করতে পারে, সেটাও চাই আমি। ট্রেনিং-এর পরিকাঠামো এখানে কিছু নেই। যা করার আমরা নিজেই করি। বিষয়টি আমি চাঁচল থানার আইসিকে জানিয়েছি। তিনিও এতে খুব খুশি। তিনিও এই ছেলেমেয়েদের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি যখন এখানে থাকি না তখন আমার বন্ধু রবিউল হাসান, নাওয়াজ আর দিলওয়ার হোসেন বাচ্চাদের ট্রেনিং দেয়। এদেরও পিটি কোর্স করা আছে।”


বছর দেড়েক ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন নার্গিস পারভিন। তিনি জানান, “ছোটো থেকেই সেনায় চাকরি করার স্বপ্ন। দেশের সুরক্ষায় নিজেকে নিয়োগ করার স্বপ্ন চোখেই বড়ো হয়েছি। কিন্তু চাঁচলে ফিজিক্যাল ট্রেনিং দেওয়ার মতো কোচ ছিলেন না। অথচ বাইরে সেই সুযোগ রয়েছে। হঠাৎ জানতে পারি, সাজ্জাদ স্যার চাঁচলের ছেলেদের ট্রেনিং দিচ্ছেন। তখনই মাথায় আসে, স্যারকে গিয়ে বলব, ছেলেরা ট্রেনিং নিতে পারলে মেয়েরা পারবে না কেন? স্যারের কাছে এসে সেকথা বললাম। তিনি মেয়েদের ট্রেনিং দিতে রাজি হন। এই ট্রেনিং-এ আমিই প্রথম মেয়ে। পরে আরও অনেক মেয়ে এখানে ট্রেনিং নিচ্ছে। এখানে কোনও টাকাপয়সা লাগে না। স্যার আমাদের কাছে গর্বের।”



কলিগ্রামের মহবিল খান জানান, “অনেকদিন ধরেই শুনছিলাম, এখানে সেনায় চাকরির জন্য ট্রেনিং দেওয়া হয়। চাঁচলে এসবের সুযোগ ছিল না। শেষ পর্যন্ত সাজ্জাদ স্যার সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। অনেক ছেলেমেয়ে এখানে ট্রেনিং নিচ্ছে। আমাদেরও ভালো লাগছে।”


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Comentarios


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page