রথবাড়ি মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৪টে গোরুকে পিষে দিল ট্রাক
গতকাল রাতে একটি ১০ চাকার মালবাহী ট্রাক মালদা শহরের রথবাড়ি মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাঁচটি গোরুকে পিষে দিল। শহরের প্রাণকেন্দ্র রথবাড়ি মোড়ে কী করে চালকেরা গাড়ি এত জোরে চালানোর অনুমতি পায় তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন জেলার পশুপ্রেমীরা।
মালদা জেলা অ্যানিম্যাল কেয়ার ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ স্বরূপ চ্যাটার্জি জানালেন, গতকাল রাত পৌনে দুটো নাগাদ তিনি রথবাড়ির ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের ফোন মারফত এই ঘটনাটি জানতে পারেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান চারটে গোরু এই অ্যাকসিডেন্টে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। একটি গোরু আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলে পড়ে আছে। আহত গোরুটির পা ভেঙ্গে গেছে, পায়ের ক্ষুর থেকে অনর্গল রক্ত ঝরছে। প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয় গোরুটির। অ্যাকসিডেন্টের পর ট্রাকের ড্রাইভার পালিয়ে গেলেও পুলিশ গাড়ির খালাসিকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রথবাড়ি ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি রাস্তার রেলিং ভেঙে শুয়ে থাকা গোরুগুলিকে পিষে দেয়
স্বরুপবাবু আরও জানান, ঘটনার সময়ই কোন গোরুই রাস্তার উপরে শুয়ে ছিল না। গোরুগুলি রাস্তার পাশে শুয়ে ছিল। এব্যাপারে তিনি কর্তব্যরত পুলিশদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন। দশ চাকার ট্রাকটি প্রবল গতিতে সেসময় মালদার দিকে আসছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি রাস্তার রেলিং ভেঙে শুয়ে থাকা গোরুগুলিকে পিষে দেয়। এটি অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা বলে তিনি ব্যক্ত করেন। ঘাতক ট্রাকটি যে গতিতে চালান হচ্ছিল তাতে চারটি গোরুকে না মেরে চারটে মানুষকেও মারতে পারত, কারণ ঘটনাস্থলটি সবসময় জনবহুল। তিনি ঘটনায় আইনের কড়া পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের চিকিৎসক ডাঃ সমীর ছেত্রি বলেন, তাঁদের চিকিৎসা কেন্দ্রে আহত গোরুগুলোকে নিয়ে আসা হলে তিনি দেখেন গোরুগুলির শরীরের বিভিন্ন অংশে ভারী বস্তুর দ্বারা আঘাতের চিহ্ন। চারটি গোরু মারা গেলেও একটি গুরুতর আহত অবস্থায় ছিল। মৃত গোরুগুলি মূলত ষাঁড় প্রজাতির। মৃত ষাঁড়গুলির শব ব্যবচ্ছেদ করেন ডক্টর ছেত্রি।
যদিও এই বিষয়ে ইংরেজবাজার থানা বা ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকরা সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাননি। ইংরেজবাজার থানার আইসি শান্তনু মিত্র জানিয়েছেন, ঘাতক ট্রাকটির চালক পলাতক। এখনো পর্যন্ত তাঁদের কাছে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি, তবে তাঁরা এই ঘটনার জন্য নির্দিষ্ট আইনে একটি মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হল এই দুর্ঘটনার জন্য কে বা কারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী?
প্রথমত: শহরের অন্যতম ব্যস্ত ও জনবহুল এলাকা রথবাড়ি মোড়। যেখানে জাতীয় সড়কের অবস্থান এবং ঘটনাস্থলে ট্রাফিক পুলিশের দপ্তর থাকা সত্ত্বেও ঘটনার সময় পুলিশের নজরদারি কি সেখানে একদমই ছিল না?
দ্বিতীয়ত: রাতে জোরে চালানো গাড়িগুলিকে শহরে ঢোকার সময় কেন নিয়ন্ত্রণ করা হয় না?
তৃতীয়ত: যাঁরা গোপালন সংক্রান্ত ব্যবসা করেন তাঁরা গোরুগুলিকে নিজ ব্যবসায়িক স্বার্থে কাজে লাগিয়ে পরে গোরুগুলোকে বাড়িতে না রেখে রাস্তায় কেন ছেড়ে দেন? জনবহুল রাস্তাতে যে কোনও সময় বড়ো কোনও দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
চতুর্থত: রথবাড়ি এলাকায় রাতের দিকে জাতীয় সড়ক ধরে প্রচুর গোরু ও ষাঁড় রাস্তার উপরে শুয়ে থাকে বা ঘুরে বেড়ায়। এক্ষেত্রে এই গোরু এবং ষাঁড়গুলিকে রাস্তা থেকে সরানোর জন্য প্রশাসন কেন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করে না?
পঞ্চমত: এই দুর্ঘটনার বিষয়টিকে পুলিশের পক্ষ থেকে অনেকটা হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে। কারণ, এখানে যেহেতু কয়েকটি নিরীহ পশু মারা গেছে, তাই পুলিশের দায়িত্বটা যেন অনেকটাই কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। যদিও তারা নিজেরা একটি মামলা করবে কিন্তু তা কেবল গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে একটি গতি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত মামলা। আর যদি এই দুর্ঘটনার বলি হতেন কোনও সাধারণ মানুষজন তাহলে কিন্তু এক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতা অনেক বেড়ে যেত।
Commentaires