আগুনে ধস্ত এশিয়ার সর্ববৃহৎ মিষ্টি জলের বাদাবন। লাগাল কে, উঠছে প্রশ্ন
সারাদেশে একমাত্র মালদায় রয়েছে মিষ্টি জলের বাদাবন। হবিবপুর ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত এই বাদাবনের বেশিরভাগ অংশ এখন বাংলাদেশে। জেলাবাসীর কাছে এই বন হিজল বন নামে পরিচিত। গতকাল এই হিজল বনে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। দমকল কর্তৃপক্ষ কিছুটা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও বনের ভেতরে দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতে না পারায় পুরো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বলে খবর। এই ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন বন দফতর ও পরিবেশ প্রেমীরা।
![60-acres-of-Malda-Hijal-forest-got-burnt](https://static.wixstatic.com/media/73f23a_2b00ca71c9b041b782db67edeae7ae3f~mv2.jpg/v1/fill/w_137,h_99,al_c,q_80,usm_0.66_1.00_0.01,blur_2,enc_auto/73f23a_2b00ca71c9b041b782db67edeae7ae3f~mv2.jpg)
হবিবপুর ব্লকের তিলাশন গ্রামে রয়েছে এই হিজল বন৷ জানা গিয়েছে, গতকাল বিকেল নাগাদ বিএসএফের ৪৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা হঠাৎ বাদাবনের একটি অংশে আগুন জ্বলতে দেখেন। তড়িঘড়ি বিএসএফ কর্তৃপক্ষ দমকলের পাশাপাশি ব্লক প্রশাসনকে খবর দেয়। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন কয়েক ঘণ্টায় চেষ্টায় বনের কিছুটা অংশের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে বনের ভেতরে ইঞ্জিন ঢুকতে না পারায় ভেতরের পরিস্থিতি কি তা নিয়ে নিশ্চিত নন কেউই। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বনের একদম ভেতর থেকে আজও ধোঁয়া উঠতে দেখা গিয়েছে। বর্তমান সময়ে এই বনভূমির আয়তন ২০০-২৫০ হেক্টর৷ গতকালের আগুনে প্রায় ৬০ একর বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে৷
বন দফতরের গাজোল রেঞ্জের আধিকারিক সুদর্শন সরকার জানান, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, গতকাল বাংলাদেশের দিক থেকেই হিজল বনে আগুন লেগেছিল৷ কোনও দুর্ঘটনা নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ওই আগুন লাগানো হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ দলকর্মীদের তৎপরতায় আগুন খুব বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারেনি৷
![60-acres-of-Malda-Hijal-forest-got-burnt](https://static.wixstatic.com/media/73f23a_55ca7a715d964047a06c79131283e603~mv2.jpg/v1/fill/w_137,h_97,al_c,q_80,usm_0.66_1.00_0.01,blur_2,enc_auto/73f23a_55ca7a715d964047a06c79131283e603~mv2.jpg)
এক পরিবেশপ্রেমী জগন্নাথ সরকার জানান,
এশিয়ার সবচেয়ে বড়ো মিষ্টি জলের বাদাবন এই হিজল বন৷ শুনতে পেয়েছি, গতকাল এই বনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। দমকলকর্মীরা খুব দক্ষতার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তাঁদের দক্ষতার জন্যই জেলার একটা ঐতিহ্য রক্ষা পেয়েছে৷ এই বনাঞ্চল সংরক্ষণ করতে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত।
জানা গিয়েছে, ১৮১০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সার্ভেয়ার ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিল্টন তাঁর সমীক্ষায় তিলাশনের বাদাবনের কথা তুলে ধরেন। টাঙন ও পুনর্ভবা নদীর দক্ষিণ অংশে ১০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে এই বনের পরিধি ছিল, এমনটাই তাঁর সমীক্ষায় উঠে এসেছিল৷ এই বনে মূলত হিজল গাছ জন্মাত৷ মালদা জেলার সমীক্ষা করতে গিয়ে ১৮৭৬ সালে হান্টারও এই বনের সন্ধান পান৷ ১৯১৪ সালের মালদা জেলার গেজেটেও এই বনের উল্লেখ রয়েছে৷ ১৯৫৬ এবং ১৯৫৯ সালে দুটি আদেশনামায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই এলাকাকে বনাঞ্চল হিসাবে স্বীকৃতি দেয়৷ তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বনের আয়তন অনেকটাই কমে গিয়েছে।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন