তলিয়ে গেল গঙ্গা পাড়ের আস্ত গোটা গ্রাম
চরম বিপদসীমা ২৫.৩০ মিটার থেকে ৯ সেন্টিমিটার উচ্চতায় বইছে গঙ্গা। ইতিমধ্যে জল ঢুকতে শুরু করেছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলিতে। বিশেষত মানিকচক ব্লকের জোতপাট্টা গ্রামের পুরোটাই এখন গঙ্গার জলের তলায়। প্রাণ বাঁচাতে দুর্গত মানুষজন এখন ঘর ছেড়ে রাস্তায় উঠে আসছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে তাঁরা কোনও সাহায্য পাননি। এমনকি ভরা বর্ষায় খোলা আকাশের নীচে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। কারণ, তাঁরা এখনও সরকারি ত্রিপলও পাননি। এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভ জমছে দুর্গতদের মনে। যে কোনও সময় সেই ক্ষোভের বারুদে বিস্ফোরণ হতে পারে।
মানিকচক গ্রামপঞ্চায়েতের শুধু জোতপাট্টা গ্রাম নয়, গঙ্গার জল ঢুকছে রামনগর গ্রামেও। তবে পরিস্থিতি বেশি খারাপ জোতপাট্টায়। এই গ্রামে ৩০০টির বেশি বাড়িতে জল ঢুকে পড়েছে। জলবন্দি হয়ে রয়েছে আরও অন্তত ১০০ বাড়ি। গ্রামের সমস্ত কৃষিজমি এখন জলের নীচে। ধান ও পাটচাষের দফারফা। ইতিমধ্যে যাঁরা পাট কাটতে পেরেছেন, তাঁরা বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা পারেননি, তাঁদের কী হবে, কেউ জানে না। কারণ, এই মুহূর্তে জমি থেকে পাট কাটার কোনও সম্ভাবনাই নেই। সেখানে এখন এক মানুষের বেশি জল। এদিকে ঘরে জল বাড়তে থাকায় গৃহপালিত পশুর সঙ্গে গ্রামবাসীরাও উঁচু জায়গায় চলে যেতে শুরু করেছেন। তাঁরা মূলত ভিড় করছেন পাকা রাস্তায়। আজ থেকেই সেখানে ত্রিপল টাঙানো শুরু হয়েছে। আগামী কিছুদিন সেখানেই পশু-মানুষের সহাবস্থান চলবে। তবে আজ পঞ্চায়েতের তরফে দুর্গতদের জন্য একটি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গ্রামের হারান রবিদাস, সন্তোষ ঘোষরা বলছেন, দিন দশেক থেকেই গ্রামে অল্পবিস্তর জল ঢুকতে শুরু করেছিল। কিন্তু গত ৩-৪ দিন ধরে গঙ্গা ফুঁসতে শুরু করেছে। প্রবল বেগে জল বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকতে আর কয়েকদিনের মধ্যে বাড়িতে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়বে। তাই সময় থাকতেই সবাই বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় সরে যাচ্ছে। তাছাড়া এলাকায় বিষাক্ত সাপের উপদ্রবও বেড়ে গিয়েছে। এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে। তবে যে কোনও মুহূর্তে তা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘরে থাকা কিছুতেই নিরাপদ নয়। সবচেয়ে বড়ো সমস্যা শৌচাগার ও পানীয় জল নিয়ে। কোনও বাড়ির শৌচাগার ব্যবহারের অবস্থায় নেই। গ্রামবাসীরা বুকজল ভেঙে কিংবা ডোঙায় চেপে পাকা রাস্তায় শৌচকর্ম করতে যাচ্ছেন। সেটাও সঠিক কাজ নয়। গ্রামের সব নলকূপ জলের তলায়। তাই তাঁরা প্রশাসনের কাছে দাবি করছেন, যেন পাকা রাস্তার ধারে অন্তত একটি নলকূপ ও কয়েকটি অস্থায়ী শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়।
দুর্গতদের অভিযোগ, তাঁদের জন্য ব্লক প্রশাসনের তরফে পঞ্চায়েতে ত্রিপল সহ ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা বিলি করা হচ্ছে না। যাদের ঘরে জল আসেনি, তারা ত্রিপল পাচ্ছে। যদিও পঞ্চায়েতের পক্ষে জানানো হয়েছে, ব্লক প্রশাসনের তরফে যে ত্রাণ সামগ্রী এসেছে তা পর্যাপ্ত নয়। হাতে গোনা কয়েকজনকে সেসব দেওয়া যেতে পারে। তাতে মানুষের ক্ষোভ সামাল দেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আজ রাতের মধ্যে আরও ত্রাণসামগ্রী আসছে। সেক্ষেত্রে রাতেই দুর্গতদের মধ্যে সেসব বিলি করা হবে।
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
Comments