ঠাকরে: পক্ষপাতদুষ্ট আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক প্রচারধর্মী ছবি!
সম্প্রতি ভারতীয় চলচ্চিত্র, রাজনীতির আঙিনায় হাত রাঙাতে মাতোয়ারা। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এক বিশেষ রাজনীতি জনসম্মুখে আনার এক নতুন প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। এরকমই এক উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তি পেল অভিজিৎ পানসের ‘ঠাকরে’। ছবির নাম শুনেই বোঝা যায়, এটি একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ছবি। ছবিটির মাধ্যমে মারাঠি জনগোষ্ঠীর জনপ্রিয়, হিংসার পৃষ্ঠপোষক নেতা বালাসাহেব ঠাকরের, শিল্পী জীবন থেকে রাজনৈতিক আঙিনায় উত্তরণ ও তার প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। বালাসাহেব ঠাকরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রখ্যাত জনপ্রিয় অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি এবং তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমৃতা রাও।
ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিনেতাদের অভিনয় দেখে, বিশেষ করে প্রধান চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি যে দক্ষতার সাথে অভিনয় করেছেন তা দেখে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। তার চলাফেরা ও কথা বলার ধরণ দেখে দর্শকদের মনে হতে বাধ্য যে বালাসাহেব ঠাকরের চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির বিকল্প অন্য কেউ হতে পারতেন না।
ঠাকরের রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাংসারিক জীবন ও পারিবারিক জীবন খুব দক্ষতার সাথেই পরিচালক উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। মারাঠি গোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবন, মুম্বাই শহরে সমস্ত বিষয়ে তাদের অগ্রাধিকারকে সামনে রেখে জনমত তৈরির মাধ্যমে গঠন করেন শিব সেনা সংগঠন। মারাঠাদের অগ্রাধিকারের দাবিকে হাতিয়ার করে, বিভিন্ন দাঙ্গাতে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে শিবসেনা সংগঠন তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
‘ঠাকর’ বালাসাহেব ঠাকরের জীবনচরিত নিয়ে হলেও, পূর্ণ ছবিটিই রাজনৈতিক চাদরে মোড়া। ছবির প্রথম দৃশ্যে আমরা দেখতে পাই বাল ঠাকরেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, জনস্রোত উপচে পড়ছে তাঁকে দেখার জন্য। তাঁকে দেখে কোনোভাবেই মনে হওয়ার উপায় নেই যে বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রচ্ছন্ন মদত থাকার অভিযোগে তাঁকে লখনউ আদালতে পেশ করা হচ্ছে। কোর্ট চত্বর তাঁকে দেখে থমকে দাড়ায়, মনে হয় আসামী নয় কোনো রাজ অতিথি বিচারালয়ে প্রবেশ করছেন। যে আসামীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জবানবন্দি নেওয়া হবে তাঁকে দেখেই উপস্থিত কিছু উকিল উঠে দাঁড়ায় তাঁর প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে এবং বিচারপতিও তাই করতে যান। ভারতীয় সংবিধান কখনও কোনো আসামীর সামনে মাথা নীচু করতে শেখায়নি কিন্তু আমরা প্রথম দৃশ্যেই তা দেখতে পাই।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ভারতবর্ষের সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ একতার সাথে, সমান অধিকারে বসবাস করতে পারবে কিন্তু এই ছবিতে আমরা দেখতে পাই ঠাকরে স্বাধীন ভারতের সংবিধান মানেন না। তিনি মুম্বাইয়ে মারাঠি সাম্রাজ্য গঠন করার জন্য সংবিধান বিরোধী যা যা করার করেছেন। রাজনৈতিক মুনাফা লাভের জন্য, মারাঠাদের মনে একনায়কতন্ত্রের বীজ বপন করে তাদের দিয়ে বারবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটিয়েছেন। এসব কথা এছবিতে সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে উকিলের সাথে তিনি যে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে কথা বলেন, দর্শকদের ভাবায় ওটা আদালত না কোনো রাজনৈতিক নেতার বৈঠকশালা ? তিনি গর্বের সাথে জানান বাবরি মসজিদ দাঙ্গায় তিনি সক্রিয় ভাবে হাত নয় পা রেখেছেন। ছবির শেষ দৃশ্যে দেখতে পাই বালাসাহেব ঠাকরে যেহেতু সংবিধানের রচিত আইন মানেন না তাই বিচারালয় থেকে ক্যামেরা স্থানান্তরিত করা হয় জনগণের দিকে, যা নিঃসন্দেহে আমাদের প্রতিষ্ঠিত সংবিধানকে অবমাননা করা। পুরো ছবিটি তৈরি হয়েছে বালাসাহেবকে গৌরবান্বিত করতে। দুঃখের কথা এছবি নিরপেক্ষ হতে পারল না!
আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
ছবি সৌজন্যেঃ বলিউড হাঙ্গামা ডট কম।
תגובות