রতুয়ায় আতঙ্কিত মানুষ গঙ্গার তীব্র ভাঙনে
আবার গঙ্গা ভাঙনের কবলে মালদার রতুয়া-১ নম্বর ব্লক। এই ব্লকের বিলাইমারি ও মহানন্দাটোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা গঙ্গা ভাঙনে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত। উল্লেখ্য বিগত কয়েকদিন ধরেই ওই দুই পঞ্চায়েতের নয়া বিলাইমারি, খাকচাবনা, টিকলিচর ও জঞ্জালিটোলা গ্রামগুলিতে গঙ্গা ভাঙন শুরু হয়েছে। গত রবিবার থেকে ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেড়েছে। স্থানীয় একটি আইসিডিএস সেন্টার গঙ্গার ভাঙনে যে-কোনো মুহূর্তে তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনো মানুষের প্রাণহানি হয়নি তবে, বেশ কিছু গবাদি পশু গঙ্গায় ভেসে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে রতুয়া-১ ব্লকের মহানন্দাটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা গঙ্গা ও ফুলহর নদী দিয়ে ঘেরা। এই দুই পঞ্চায়েত এলাকার পূর্ব দিকে ফুলহর নদী ও পশ্চিমদিকে গঙ্গা নদী। আর স্বাভাবিক নিয়মে বর্ষায় নদীতে জল বেড়ে গেলে এই এলাকাগুলি বন্যা অথবা ভাঙনের মুখে পড়ে। কিন্তু এই দুই নদীর মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে উর্বর কৃষিভূমি ও বিশাল গো চারণ এলাকা। তাই জীবন জীবিকা নির্বাহে গঙ্গা অববাহিকার উৎকৃষ্ট আবহাওয়া যুক্ত এই জায়গা ছেড়ে কেউ যেতে চান না। যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব কষ্টসাধ্য, কিন্তু তা সত্ত্বেও স্থানীয় বাসিন্দারা বংশানুক্রমে এখানেই থাকতে চান।
সেচ দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী গঙ্গার জলস্তর এখনও বিপদসীমার ধারে কাছে নেই। কিন্তু, তা সত্ত্বেও তার ধ্বংসলীলা দিনরাত চলছে। জঞ্জালিটোলার বাসিন্দা অলকা মণ্ডল জানান, দিন দশেক আগে তাঁর বাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বিঘা দশেক জমিও গঙ্গার গর্ভে চলে গেছে। বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় তিনি বর্তমানে ঠিক মতো খেতে পাচ্ছেন না। বিপদে তাঁর পাশে সাহায্য করার কেউ নেই বলে তিনি জানান।
নয়া বিলাইমারির বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে গঙ্গা ও ফুলহরের ভাঙনে তাঁদের প্রচুর জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। এবার পুনরায় শুরু হয়েছে গঙ্গার তীব্র ভাঙন। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আশপাশে কোনো কলেজ বা স্কুল নেই আশ্রয় নেওয়ার জন্য। ব্যক্তিগত জায়গায় কেউ ভাঙন উদ্বাস্তুদের থাকতে দিচ্ছে না। ইতিমধ্যে আতঙ্কে এক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে স্থানীয়দের বক্তব্য। এই অবস্থায় কী করবেন, তাঁরা জানেন না। কোনো সরকার তাঁদের জন্য কিছু ভাবে না বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা অনিল মণ্ডল বলেন, নদীর পাড় যেভাবে ভাঙছে, তার ভয়েই তাঁরা নিজেদের বাড়ি খুলে সরিয়ে নিয়েছেন। গ্রামের পানীয় জলের নলকূপও ভাঙনে তলিয়ে গেছে। অনেকটা বাধ্য হয়ে তাঁরা গঙ্গার জল পান করছেন। খাবার, পানীয় জল নেই, এমনকি মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। অথচ বিধায়ক, সাংসদ কিংবা সরকারি কর্তারা তাঁদের খোঁজ নিতে আসেন নি। প্রশাসনের কাছে তাঁদের আর্জি যে, তাঁদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করা হোক প্রশাসনের উদ্যোগে।
রতুয়া- ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অর্জুন পাল অবশ্য গঙ্গা ভাঙনের পরিস্থিতি যে ভালো নয়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, রবিবার জেলাশাসক, জেলা গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক ও তিনি ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গঙ্গার ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি। স্থানীয় একটি আইসিডিএস সেন্টার যে-কোনো মুহূর্তে গঙ্গার গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। সেটিকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। বিপন্ন মানুষজনের জন্য বিলাইমারিতে একটি ত্রাণ শিবিরে শুধুমাত্র শুকনো খাবার আর পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে।
মূলত: ভাঙন এলাকার মানুষজনের মুখ্য জীবিকা হল পশুপালন। ফলে গবাদি পশুদের ছেড়ে তাঁরা ত্রাণ শিবিরে আসতে চাইছেন না। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে ওই শিবিরে সমস্ত ব্যবস্থা করা হবে বলে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ভাঙন রোধের জন্য সেচ দপ্তর থেকে দু'জন আধিকারিককে এখানে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন বলে জানিয়েছেন ব্লক প্রশাসন।
ভিডিয়োঃ কৃতাঙ্ক