top of page

নানা সমস্যায় জেরবার জেলা স্কুল

এ যেন এক নৈরাজ্যের অন্যতম উদাহরণ৷ শিক্ষার্থী আছে কিন্তু শিক্ষক নেই৷ খেলাধুলোর সরঞ্জাম আছে অথচ ক্রীড়াশিক্ষক নেই৷ ছাত্রাবাস আছে কিন্তু অধ্যক্ষ নেই৷ এমনকি ছাত্রদের রান্নার রাঁধুনিও নেই৷ প্রধান শিক্ষকের আবাস যেন এক ভূতুড়ে হানাবাড়ি৷ বিদ্যালয় চত্বরে স্থানীয় বাসিন্দাদের অবাধ আনাগোনা৷ গোটা সীমানা প্রাচীর বরাবর রাজনৈতিক মদতে গজিয়ে ওঠা ফুটপাথ দখল করে বেআইনি দোকানপাঠ৷ সবচেয়ে মজার বিষয় নিজেদের খেলার মাঠ ব্যবহার করতে জেলাশাসকের অনুমতি প্রয়োজন৷ এই ধরনের বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত জেলার সার্ধশতাব্দী প্রাচীন ঐতিহাসিক মালদা জেলা স্কুল৷ কেন এই সমস্যা এই নিয়ে আমাদের মালদার বিশেষ অন্তর্তদন্ত প্রতিবেদন৷


Malda Zilla School

প্রথমে আলোচনা করা যাক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের অভাব নিয়ে৷ বিদ্যালয়ের প্রাতঃকালীন বিভাগের (প্রথম থেকে পঞ্চম) দশটি সেকশনে মোট ছাত্র সংখ্যা ৩৮০৷ অনুমোদিত শিক্ষক সংখ্যা ১১ হলেও বর্তমানে স্থায়ী শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ছয়৷ ফলে প্রতিটি শ্রেণির দুই সেকশনকে একত্রে মিলিয়ে ক্লাস নিতে হয়৷ দিবা বিভাগে (ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) প্রধান শিক্ষক সহ অনুমোদিত শিক্ষকের সংখ্যা ৩২ হলেও বর্তমানে সেই সংখ্যাটি ২৭৷ ইংরেজিতে এক, বায়োলজিতে দুই, ইতিহাসে এক, বাণিজ্য বিভাগে তিনজন শিক্ষকের অভাব আছে৷ উভয় বিভাগেই কোনো ক্রীড়াশিক্ষক নেই৷ জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যেখানে শিক্ষকের প্রতুলতা দেখা যায়, সেখানে কেন এই অবস্থা শতাব্দী প্রাচীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির? এর প্রধান কারণ হল যে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল আয়োগের দায়িত্বে আছে বিদ্যালয় শিক্ষার মহানির্দেশক৷

মূলত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আয়োগের মাধ্যমে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উভয় বিভাগের শিক্ষকরা নিযুক্ত হন৷ রাজ্য আয়োগের এই নিয়োগ পদ্ধতির বেশ কিছু ত্রুটিগত ও জটিলতার কারণে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ বিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ভরতি করা হলেও কোনো প্রশিক্ষিত স্পেশাল এডুকেটর নিয়োগ করা হয়নি এখনও পর্যন্ত৷

অন্যান্য নিয়োগের ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত অবহেলার শিকার এই শতাব্দী প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি৷ প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় থেকে বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক পদটি এখন শূন্য অবস্থায় আছে৷ তিনজন অনুমোদিত করণিকের মধ্যে একটি পদ এখন শূন্য৷ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের তিনটি পদ শূন্য অবস্থায় আছে৷ সমগ্র বিদ্যালয়ের জন্য মাত্র একজন সাফাই কর্মচারী ফলে একজনের পক্ষে অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ একদিনে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না৷ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের জন্য নেই কোনো অধ্যক্ষ ও রাঁধুনি৷ বর্তমান কম্পিউটারের যুগে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় প্রতি দুইজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ করা হলেও, মালদা জেলা স্কুল তা থেকে বঞ্চিত৷ একসময় কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন চালু করা হয়েছিল স্কুলে, শিক্ষকের অভাবে সেটাও শিক্ষাদপ্তরের নির্দেশে বন্ধ হয়ে গেছে৷

বিদ্যালয়ের ভবনগুলির হালও তথৈবচ৷ মূল প্রশাসনিক ভবনের (আচার্য বিনয় সরকার ভবন) এখানে ওখানে ফাটল, দেয়ালে উইপোকার বিস্তার৷ প্রধান শিক্ষকের আবাস যেন একটি ভূতুড়ে হানাবাড়ি৷ ঘরটি বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে থাকে৷ ইতি উতি ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়া প্রধান শিক্ষকের ঘরটি বর্তমানে বাসযোগ্য নয়৷ ২০১৪ সালে দ্বিতল ছয়কক্ষ বিশিষ্ট বিজ্ঞানাগারের নির্মাণকার্য শুরু হলেও পূর্তদপ্তরের ঢিলেমি কাজের ফলে তা এখনও পর্যন্ত বাস্তবে রূপায়িত হতে পারছে না৷ বিদ্যালয়ে কোনো জেনারেটর নেই৷

বিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য কোনো পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই৷ বিদ্যালয়ের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বিদ্যালয় চত্বরে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ চলে৷ রাত বাড়লে বিদ্যালয় চত্বরে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ৷ এক্ষেত্রে মূল গেট বন্ধ থাকলেও বহিরাগতরা প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করে৷ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর বরাবর, ফুটপাথ জুড়ে রাজনৈতিক দলগুলির সাহায্যপ্রাপ্ত বিভিন্ন দোকান, ফলে বিদ্যালয়ের বহিরঙ্গে দৃশ্যদূষণ বর্তমান৷ সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত বিদ্যালয়ের নিজস্ব খেলার মাঠ যা বৃন্দাবনী মাঠ নামে পরিচিত তা বর্তমানে কোনো কারণ ছাড়াই জেলাশাসকের অধীন এবং সেখানে জেলাশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে বিদ্যালয় নিজ মাঠ ব্যবহার করতে পারবে৷

বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার ফলে বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন ও শিক্ষার মান বর্তমানে যথেষ্ট নিম্নমুখী৷ রাজ্য সরকারের উচিত এই সমস্যাগুলির অবিলম্বে সমাধান করা৷ সমস্যাগুলির সমাধান হলেই তবে সার্ধশতাব্দী প্রাচীন এই বিদ্যালয়টি পূর্ণজীবন লাভ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে৷


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ছবিঃ মিসবাহুল হক

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page