ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কোর্ট স্টেশন
ব্রিটিশ আমলের স্মৃতি নিয়ে টিমটিম করে চলছিল পুরাতন মালদার কোর্ট স্টেশন৷ ট্রেন বলতে সীমান্তের সিঙ্গাবাদগামী একটি প্যাসেঞ্জার, যার কামরার সংখ্যা মাত্র এক৷ ওই একটি কামরা নিয়েই ইঞ্জিন ছুটত সিঙ্গাবাদে৷ তারপর আবার কোর্ট স্টেশনে ঘরবাপসি৷ তবে সেই ট্রেনও আজ ইতিহাস৷ আদ্যিকালের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আর নেই রাজ্যের আঙিনায়৷ কোর্ট স্টেশনের অবাধ বিচরণ একে ক্রমশ বিস্মৃতির অন্তরালে ঠেলে দিচ্ছিল।
এক সময়ে মালদা কোর্টে যাওয়ার পথ শুরু হত এই কোর্ট স্টেশন থেকেই৷ স্টেশনে নেমে হাঁটাপথে সদরঘাট৷ তারপর নৌকায় মহানন্দা পেরিয়ে ওপারের সদরঘাটে৷ সেখান থেকে হাঁটাপথে কোর্ট৷ কোর্ট স্টেশন হয়েই মালদার বুকে পদার্পণ করেছেন বহু মনীষী৷ অবশ্য ইতিহাসের এই অংশটা খুব একটা নাড়াচাড়া হয়নি৷
এবার সেই মৃতপ্রায় কোর্ট স্টেশনই নব কলেবরে সেজে উঠছে৷ ধীরে ধীরে ট্রেন বাড়ছে৷ বাড়ছে যাত্রীর সংখ্যাও৷ আর তার সঙ্গেই বাড়ছে স্টেশনের গুরত্বটাও৷
৪ জোড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন এখন পুরাতন মালদার কোর্ট স্টেশন হয়ে ছুটছে৷ এমনকি এই রুটে পণ্যবাহী মালগাড়ি সিঙ্গাবাদ হয়ে বাংলাদেশেও যায়
সম্প্রতি ডিজিট্যাল ইলেকট্রনিক ইনটারলকিং সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে মালদার এই ঐতিহ্যবাহী স্টেশনে৷ এর সঙ্গেই ব্রিটিশ যুগের সিগন্যালিং ব্যবস্থার অবসান হল৷ অত্যাধুনিক এই ব্যবস্থায় রেলকর্মীদের অনেক সুবিধা হবে বলে জানিয়েছেন কোর্ট স্টেশনের মাস্টার প্রদীপকুমার রায়৷ তিনি বলেন, ‘নতুন ব্যবস্থায় ট্রেন চলাচলে অনেক সুবিধা হবে’৷
বছর দু’য়েক আগে থেকে কোর্ট স্টেশনের গুরুত্ব ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে৷ সিঙ্গাবাদগামী এক কামরার প্যাসেঞ্জার ট্রেন ছাড়া হাতেগোনা কটা মালগাড়িই এই স্টেশনমুখো হত৷ কিন্তু দিন বদলেছে৷ নতুন সূর্যোদয় হয়েছে কোর্ট স্টেশনে৷ এক কামরায় ট্রেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে বটে, তবে ৪ জোড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন এখন পুরাতন মালদার কোর্ট স্টেশন হয়ে ছুটছে৷ এমনকি এই রুটে পণ্যবাহী মালগাড়ি সিঙ্গাবাদ হয়ে বাংলাদেশেও যায়৷ এখন হাজার কয়েক যাত্রীর দৈনিক আনাগোনা লেগে থাকে কোর্ট স্টেশনে৷ অর্থাৎ স্টেশনের গুরুত্ব যে বেড়েছে, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
কোর্ট স্টেশনের নতুন অফিস ভবনে বসানো হয়েছে ইলেকট্রনিক ইনটারলকিং সিগন্যালিং সিস্টেমের মনিটর৷ এই মনিটরে চোখ রাখলেই ট্রেনের অবস্থান বুঝতে পারবেন রেলকর্মীরা৷ শুধু তাই নয়, মনিটর থেকে সিগন্যালিং লাইটের গতিবিধি বোঝা যাবে৷ পশ্চিমদিকে মঙ্গলবাড়ি রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং থেকে শুরু করে পূর্বদিকে শান্তিপুর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনে কালার লাইট সিগন্যাল বসানো হয়েছে৷
আগে ব্রিটিশ যুগের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মাধ্যমে আপ ও ডাউন ট্রেনের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হত৷ প্রকাণ্ড বড়ো দুটি নন্ ইলেকট্রিক ইনটারলকিং মেশিনের মাধ্যমে ট্রেনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হত৷ ব্রিটিশ আমলের ওই মেশিনপত্র চালানো মোটেও সহজ ছিল না৷ প্রাচীন এই সিগন্যালিং ব্যবস্থায় বহু সময় নষ্ট হত৷ তবে এখন আধুনিকতায় ছোঁয়া লেগেছে সিগন্যালিং ব্যবস্থায়৷ বেড়েছে ট্রেন৷ বেড়েছে যাত্রীও৷ পরিকাঠামোগত অনেক কিছুর পরিবর্তন এখনও প্রয়োজন৷
এক সময় পুরাতন মালদা থেকে ট্রেন ধরতে টাউন স্টেশনে সকলকেই আসতে হত৷ এখন চাকা ঘুরেছে৷ ইংরেজবাজার থেকেও এখন কোর্ট স্টেশনে অনেককে যেতে হচ্ছে ট্রেন ধরার জন্য৷ বাঁধ রোডে এলেই বোঝা যাবে কোর্ট স্টেশনে যাত্রীদের পৌঁছে দিতে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে টোটো জানান দিচ্ছে, পুরাতন মালদার গুরুত্ব বাড়ছে৷
תגובות