top of page

ব্যবসায়ীর বাড়িতে পুলিশের লুটপাটের অভিযোগ, উঠছে একাধিক প্রশ্ন

গভীর রাতে ব্যবসায়ীর বাড়িতে পুলিশের লুটপাটের খবর এখন ভাইরাল। কালিয়াচক থানার পুলিশের এহেন কাজ নিশ্চিতভাবে লজ্জায় ফেলেছে রাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীকে। তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করে ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। কিন্তু এই ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন উঠে আসতে শুরু করেছে। এমনকি যে ব্যবসায়ীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে, প্রশ্ন উঠেছে তাঁর কাজকর্ম নিয়েও।


মঙ্গলবার গভীর রাতে কালিয়াচক-১ নম্বর ব্লকের আলিপুর-২ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েতের বাহান্নবিঘি গ্রামের বাসিন্দা আশরাউল শেখের বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন কালিয়াচক থানার এএসআই পীযূষ মণ্ডল, দুই কনস্টেবল আশিস দে এবং রাজকুমার ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন জনা কয়েক সিভিক ভলান্টিয়ারও। আশরাউলের বক্তব্য, সেই সময় তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। মাঝরাতে ঘরের দরজায় ধাক্কা পড়তে থাকে। তিনি ঘুম থেকে উঠে দরজার কাছে গিয়ে বাইরে কে, তা জানতে চান। বাইরে থেকে বলা হয় কালিয়াচক থানার পুলিশ। পুলিশ আগেই বাড়ির মূল গেটের তালা ভেঙে ফেলেছিল। দরজা খুলতেই পুলিশকর্মীরা তাঁর উপর হামলা চালান। তাঁকে বন্দুকের বাঁট দিয়েও মারধর করা হয়। এরপর অন্তত এক ঘণ্টা ধরে বাড়িতে লুটপাট চালায় পুলিশ। তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ২৫ লক্ষ নগদ টাকা ও প্রায় ৩৫ ভরির সোনার গয়না নিয়ে নেয় তারা। সেসব ব্যাগে ভরে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশকর্মীরা। যদিও তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।


kaliachak-police-looted-businessman-house-multiple-questions-raised
বাহান্নবিঘি গ্রামে আশরাউল শেখের বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন কালিয়াচক থানার এএসআই ও দুই কনস্টেবল

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এএসআই সহ দুই কনস্টেবলকে গতকালই সাসপেন্ড করা হয়েছে। শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। গতকাল অতিরিক্ত পুলিশসুপার (গ্রামীণ) অনীশ সরকার জানিয়েছিলেন, সেদিন রাতে এএসআই পীযূষ মণ্ডল নিজস্ব সূত্রে খবর পান, একটি জায়গায় অস্ত্র মজুত করা হয়েছে। সেই খবর পেয়ে দুই কনস্টেবলকে নিয়ে তিনি সেখানে যান। কিন্তু তিনি এই অপারেশনের আগে ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের কোনও অনুমতি নেননি। বিনা অনুমতিতেই তিনি তল্লাশি চালান। যদিও তল্লাশিতে তিনি কোনও অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেননি। তিনি কিছু নগদ টাকা এবং সোনার অলঙ্কার পেয়েছিলেন। তার কোনও সিজার লিস্ট তৈরি না করেই তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে চলে আসছিলেন। যাঁর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছিল তাঁর নাম আশরাউল শেখ। পীযূষবাবু তাঁকেও সঙ্গে নিয়ে আসছিলেন। বাড়ি থেকে বেরোনোর পর আসরাউল শেখ পালিয়ে যান। যে ব্যাগে নগদ টাকা ও সোনার অলঙ্কার নিয়ে আসা হচ্ছিল সেটাও তিনি ছিনিয়ে নিয়ে পালান। তিনি নিজেই ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করেছেন। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই তিনজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।


আশরাউল সাহেব দাবি করেছেন, টাকা ও সোনার অলঙ্কার ভর্তি টাকার ব্যাগ পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছে। এদিকে পুলিশ দাবি করছে, সেই ব্যাগ আশরাউল নিজেই ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।

এরপরেই উঠতে শুরু করেছে একের পর এক প্রশ্ন। গতকাল অতিরিক্ত পুলিশসুপার সংবাদমাধ্যমকে পরিষ্কার জানান, তিনি ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করলেও আশরাউল শেখের বাড়িতে যাননি। কিন্তু পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, যে কোনও ঘটনার পুলিশি তদন্তে পিও অর্থাৎ প্লেস অফ অকারেন্স ভিজিট করা হল তদন্তের প্রথম ধাপ। একজন পুলিশকর্তা হয়েও অতিরিক্ত পুলিশসুপার তা করেননি কেন তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেছেন, আশরাউল পলাতক। অথচ গতকাল সারাদিন বাড়িতে বসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। আরও বড়ো প্রশ্ন, বাড়ি থেকে এত টাকা আর সোনার গয়না পুলিশকর্মীরা লুটপাট চালালেও গতকাল রাত পর্যন্ত আশরাউল শেখ কিংবা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য কেন কালিয়াচক থানা কিংবা পুলিশসুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালেন না। পুলিশের উপর ভরসা না থাকলে তিনি আদালতেও নিজের অভিযোগ জানাতে পারতেন। কিন্তু আজ দুপুর পর্যন্ত তিনি তা করেননি। আশরাউল সাহেব দাবি করেছেন, টাকা ও সোনার অলঙ্কার ভর্তি টাকার ব্যাগ পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছে। এদিকে পুলিশ দাবি করছে, সেই ব্যাগ আশরাউল নিজেই ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। জানা যাচ্ছে, এখনও সেই ব্যাগের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে ওই ব্যাগ এখন কোথায়? সেটা ভাবাচ্ছে সবাইকেই।




বাহান্নবিঘি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের মুখ থেকে আশরাউল শেখ সম্পর্কে যা জানা গিয়েছে, সেটাও চমকে দেওয়ার মতো। গোটা গ্রামের প্রত্যেকেই নিম্নবিত্ত পরিবারের। গ্রামে মূলত ভাঙন উদ্বাস্তুদের বসবাস। গ্রামের বাড়িঘরের ছবিও তার ইঙ্গিত দেয়। সেই গ্রামে একমাত্র রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি আসরাউলের। তিনি ভিনরাজ্যে শ্রমিক সরবরাহের ঠিকাদার। জানা যাচ্ছে, বছর দশেক ধরে তিনি এই কাজ করছেন। কিন্তু শুধু শ্রমিক সরবরাহ করে কত টাকা উপার্জন করা যায়! তাও আবার মাত্র এই ক’বছরে? এনিয়ে প্রশ্ন করলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে অনেকেই জানিয়েছেন, একসময় আশরাউল জাল নোটের কারবার করতেন। ভিনরাজ্যে শ্রমিক পাঠানোর সময় তাঁদের ঝুড়িতেও ভিনরাজ্যে জাল টাকা পাচার করেছেন। তিনি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। সেই তথ্য অবশ্য অতিরিক্ত পুলিশসুপারের মুখেও শোনা গিয়েছিল। তিনিও জানিয়েছিলেন, অস্ত্র মজুতের খবর পেয়েই দুই কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে পীযূষবাবু মঙ্গলবার রাতে সেখানে গিয়েছিলেন।


এমনই অনেক প্রশ্ন ভিড় করছে গোটা ঘটনা নিয়ে। এখন পুলিশি তদন্তে কী বেরিয়ে আসে, সেটাই দেখার।


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Comments


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page