top of page

লংকা ছাড়িয়ে মৃত্যুপথের আশঙ্কা মালদায়

রামায়ণ বলছে, হনুমানের লেজের আগুনে ছাড়খাড় হয়েছিল লংকা। যেদিন সেই ঘটনা ঘটে, সেদিন লংকা নগরীর তাপমাত্রা কত ছিল জানা নেই। জানা নেই, তখন গ্রীষ্মকাল ছিল কিনা। অথবা আগুন নেভানোর জন্য সেই নগরীতে জলের ব্যবস্থা কি ছিল। অগ্নিকাণ্ডে হতাহত কিংবা ক্ষতির পরিমাণ অবশ্য বাল্মীকি লিখে যাননি। কেউ বলতেই পারেন,যে দেশের চারদিকেই সমুদ্র, সেই দেশে আবার জলের অভাব! তাহলে আগুন নেভাতে সেই জল ব্যবহার করা হল না কেন? নাকি তখন লংকায় তেমন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি? উত্তর যদি না বাচক হয়, তবে ফের উঠতে পারে প্রশ্ন। যে দেশের রাজা সেই আমলেও বিমানে চাপিয়ে সীতাকে নিজের বাগানে এনে রেখেছিলেন, তিনি অবশ্যই বিজ্ঞানমনস্ক। কিন্তু সেই দশানন কি নিজের নগরীতে কখনও আগুন লাগার কথা কল্পনাতেও আনতে পারেননি?


প্রতীকী ছবি















মালদা জেলা প্রশাসনিক ভবনে বিদ্যুতের তারে যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। নেতাজি মার্কেটে কয়েকদিন আগেই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে একটি মোবাইলের দোকান। জল পরিকাঠামোর অভাবে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা চিত্তরঞ্জন পুরবাজার ও কাজি আজাহারউদ্দিন পুরবাজারেও।

ত্রেতা থেকে কলিযুগের মধ্যে কয়েক আলোকবর্ষ। তার উপর লংকা থেকে মালদা কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরত্ব। তাই প্রশ্ন থাকবে, উত্তর থাকবে না। এই মালদায় প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডে বিস্তর ক্ষয়ক্ষতির খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। কিন্তু মালদা শহরের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কি যথাযথ? তারই উত্তর খুঁজতে তত্ত্বতালাশ চলল শহরজুড়ে। কোনো জেলার সবচেয়ে বড়ো সরকারি কর্মকাণ্ডের জায়গা প্রশাসনিক ভবন। এই মুহূর্তে মালদা জেলা প্রশাসনিক ভবনে গেলেই দেখা যাবে প্রতিটি তলে মাকড়শার জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক তার। যে কোনো মুহূর্তে সেখান থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। এখানে সেখানে কয়েকটি ফায়ার এসটিঙ্গুইজার লাগানো রয়েছে বটে, তবে শেষ কবে সেগুলি পরীক্ষিত হয়েছিল কেউ বলতে পারে না। সেখানে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থাও চোখে পড়বে না। জলের অভাব রয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও। যদিও সেখানে আগের থেকে এখন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অনেকটাই উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু বড়োসড়ো আগুন লাগার ঘটনা ঘটলে নিশ্চিতভাবেই সমস্যায় পড়বে কর্তৃপক্ষ। অগ্নিনির্বাপণের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি শহরের বাজারগুলিতে। যে কোনো বাজারে গেলেই দেখা যাবে ঘিঞ্জি দোকানের সারি। ভিতরের রাস্তা অপরিসর। কখনও আগুন লাগলে হুড়োহুড়িতে ঘটে যেতে পারে অঘটন। দেয়ালগুলিতে খোলা বিদ্যুতের তার। যে কোনো মুহূর্তে শর্টসার্কিটের সম্ভাবনা। পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা কোনো বাজারেই নেই। দোকানি কিংবা ক্রেতা, প্রশ্ন করলেই জানা যাবে, কবে সেই বাজারে অগ্নিনির্বাপণ দপ্তর কিংবা প্রশাসনের নজরদারি চলেছে, তা কেউ জানেন না। ঠেকায় পড়ে কখনও কখনও পুরসভার পক্ষ থেকে নজরদারি হয়েছে বটে, তবে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। শহরের প্রবীণদের মুখে শোনা যায়, একসময় মালদা শহরের ভিতর একাধিক পুষ্করিণী ছিল। টলটল করত জল। সাধারণভাবে গভীরতা মাপা যেত না। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সেসবের বেশিরভাগই বিলুপ্ত হয়েছে। এখন সেখানে ফ্ল্যাটবাড়ি অথবা প্লট করে বিক্রি হওয়া জায়গায় গড়ে উঠেছে সুরম্য ভবন। সেই ধারা এখনও প্রবহমান। শহরের একদিকে চাতরার বিল। প্রতিদিন একটু একটু করে ভরাট করছে জমি হাঙররা। রাজনীতির কারবারিরাই সেসব কাজ করাচ্ছে বলে অভিযোগ। আরেকদিকে মহানন্দা নদী। গ্রীষ্মে অবশ্য তাকে নদী না বলে নর্দমা বলাই ভালো। গ্রীষ্মে নদীতে জল থাকে না বললেই চলে। ফলে বড়ো ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষতি দেখা ছাড়া শহরবাসীর কোন উপায় থাকবে না।

কলকাতার আমরির আগুন দেখেছে মালদা। দেখেছে বড়োবাজারের আগুন। একবার যদি বড়োবাজারের মতো মালদা শহরের কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, সামাল দেওয়া যাবে তো? প্রশ্ন উঠেছে মানুষের মধ্যে। শহরবাসী বলছে, জতুগৃহ হয়ে রয়েছে মালদা শহর। এদিকে এখনই নজর দেওয়া উচিত প্রশাসন ও পুরসভার। নইলে যে কোনো সময় মালদার সঙ্গে লংকা এক হয়ে যেতে পারে।


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Comments


বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page