বৃদ্ধ চামরু পারিবারিক হিংসার বিচার চান
সকাল ১০টা৷ সবেমাত্র কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজে৷ হাসপাতাল চত্বরে থাকা একটি বটগাছের নীচে বসেছিলেন এক বৃদ্ধ৷ একাকী৷ মাথায় ব্যান্ডেজ৷ হাতে স্যালাইনের চ্যানেল৷ মাঝেমধ্যেই চোখ মুছছেন৷ কারণ জানতেই উঠে এল বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়ের এক করুণ কাহিনি৷ মাত্র আড়াই কাঠা সম্পত্তির লোভে মারধর করে, মাথা ফাটিয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ছেলেমেয়ে৷ শুধু সেটাই নয়, সন্তানদের কুকর্মে সঙ্গী হয়েছেন তাঁর স্ত্রীও৷
বৃদ্ধের নাম চামরু সাহানি৷ বয়স ৬১৷ বাড়ি মালদা শহরের কুলিপাড়ায়৷ বয়সকালে মালদা স্টেশনে কুলির কাজ করতেন তিনি৷ শরীর সঙ্গ না দেওয়ায় সেই কাজ থেকে হাত গোটাতে হয়েছে তাঁকে৷ এখন একটি প্লাইউড কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন৷ তাঁর দুই ছেলে, এক মেয়ে৷ এক ছেলে বাইরে থাকেন৷ বাড়িতে থাকেন স্ত্রী সুশীলা সাহানি, ছেলে অমরজিত ও মেয়ে নিজলা৷ মূলত তাঁর উপার্জনেই সংসার চলে৷ তবে ছেলেও সংসার প্রতিপালনে কখনও কখনও হাত বাড়ায়৷
বৃদ্ধের বক্তব্য, শহরের বুকে তাঁর আড়াই কাঠা জমির উপর বাড়ি৷ সেই সম্পত্তি গ্রাস করতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে তাঁর ছেলেমেয়ে৷ তাদের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর স্ত্রীও৷ এর আগেও একাধিকবার জোর করে স্ট্যাম্প পেপারে তাঁর সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা৷ তাঁকে ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হয় না৷ গতকাল রাতে বাড়িতে চপ ভাজা হয়েছিল৷ কিন্তু তাঁর জন্য তা রাখা হয়নি৷ কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পর তিনি বসেছিলেন৷ তাঁর সামনেই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী চপ খায়৷ তিনি শুধু জিজ্ঞেস করেন, তিনিও তো একই পরিবারের সদস্য৷ তাঁর জন্য চপ ভাজা হল না কেন৷ সেই প্রশ্ন করতেই ছেলেমেয়ে সহ তাঁর স্ত্রী তাঁকে বেধড়ক মারধর করে৷ অন্যান্যবারের মতো গতকালও তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তারা৷ রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি নিজেই মালদা মেডিকেল কলেজে আসেন৷ সেখানে তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হয়৷
বৃদ্ধ চামরু সাহানি তাঁর উপর পারিবারিক হিংসার বিচার চান৷ কিন্তু পরিবারের সঙ্গ ত্যাগ করতে চান না৷ চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘এই বৃদ্ধ বয়সে আর কোথায় যাব? পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাই৷ কিন্তু এর বিচারও চাই আমি৷ কেন বারবার আমার উপর এমন অত্যাচার হবে?’
কেউ জানে না, বৃদ্ধ চামরু সাহানি তাঁর উপর পারিবারিক হিংসার বিচার পাবেন কিনা৷ তাঁর মতো বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সংখ্যা এই সমাজে নেহাত কম নয়৷ সেই বিচারের আশাতেই এখন মালদা মেডিকেল কলেজে দিন কাটাচ্ছেন তিনি৷
প্রতীকী ছবি সৌজন্যে পিক্স অ্যাবে।