শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণের সাক্ষী থাকবে মালদাও

এদিন মধ্যরাতে এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হবে পৃথিবী। একবিংশ শতাব্দীর দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ হবে আজ। এই গ্রহণ একটানা ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট দেখা যাবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে ভারতের প্রায় সর্বত্রই এই বিরল দৃশ্য দর্শনের সাক্ষী থাকবেন সমগ্র ভারতবাসী। ভারত ছাড়াও এশিয়ার অন্যান্য দেশ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার বিরাট অংশে দেখা যাবে এই চন্দ্রগ্রহণ। তবে বর্তমানে এ রাজ্যের আকাশে রয়েছে মেঘ। তাই রাতের বেলার এই বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য দেখা যাবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার উপর।
সারা বিশ্বে এই গ্রহণটি ঘিরে মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে। এই গ্রহণের বিশেষত্ব হল, পূর্ণগ্রাসের সময় অতিরিক্ত কৃষ্ণকায় রূপ। তাই একে বলা হচ্ছে ‘ব্লাড মুন’ বা ‘রক্তচন্দ্র’।
এমন নামকরণের কারণ হল পৃথিবীর ছায়ার কোন অংশের মধ্য দিয়ে চাঁদ আবর্তন করছে, তার উপর নির্ভর করেই চাঁদ তার রং পায়। এক্ষেত্রে উজ্জ্বল কমলা থেকে রক্ত লাল, কিংবা গাঢ় বাদামি থেকে গাঢ় ছাই বর্ণ ধারণ করতে পারে। এ বার গ্রহণের সময় চাঁদের রং রক্ত লাল হওয়ায় তাকে এমন নামে ডাকা হচ্ছে।
রাত ১০.৪৪ মিনিট থেকে শুরু হবে গ্রহণ। তবে সেটা আংশিক। ধীরে ধীরে পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়বে চাঁদ। রাত ১১ টা ৫৪ মিনিট থেকে শুরু হবে প্রচ্ছায়া গ্রহণ। এই সময় ক্রমশ রক্তবর্ণ ধারণ করবে চাঁদ। রাত ১.০০ থেকে শুরু হবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এই সময় ক্রমশ আঁধারে ঢাকবে চাঁদ। সেই সময় আকাশ পরিষ্কার থাকলে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে গ্রহ-নক্ষত্ররা। রাত ১.০০ থেকে রাত ২.৪৩ মিনিট পর্যন্ত চলবে পূর্ণগ্রাস গ্রহণ। গ্রহণ শেষ হবে রাত ৪.৫৮ মিনিটে। উপচ্ছায়া গ্রহণ বাদ দিলেও প্রায় ৩.৫৪ মিনিট ধরে চলবে সম্পূর্ণ গ্রহণ প্রক্রিয়াটি।
চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে সাধারণ মানুষের কিছু মিথ ও কুসংস্কার রয়েছে। এই সময়টা অনেকেই নানা আচার-রীতি মেনে চলেন। এমনকি এই সময়কালে অনেকেই অনেক খাবারে হাত দেন না। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এগুলি কুসংস্কার মাত্র। আসলে বাস্তবে এমন কোনও নিয়ম নেই। খাওয়া-দাওয়া না করা এবং বাধ্যতামূলকভাবে স্নান করার ধারণা একান্তই ভ্রান্ত। কিন্তু কেন এমন কুসংস্কারে বিশ্বাস মানুষের? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল, গ্রহণের সময় পৃথিবীর অনেক কাছে চলে আসে চাঁদ। এর ফলে জলে ইলেট্রো-ম্যাগনেটিক ওয়েভ বা তড়িৎ -চুম্বকীয় তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। আমাদের দেহের ৭২ শতাংশই জল। তাই শরীরেও নানা পরিবর্তন আসে। আর সেই সময় অতিরিক্ত খাবার খেলে পেট খারাপের সম্ভাবনা থাকে, তাই অনেকে খাবার খান না। তবে হালকা খাবার খেতে কোনও বাধা নেই বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা।
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সাধারণ মানুষের মন থেকে চন্দ্র গ্রহণ নিয়ে নানা কুসংস্কার দূর করতে মাঠে নেমেছেন। তাঁরা ভারতবাসীর কাছে গ্রহণ চলাকালীন গ্রহণের বিভিন্ন দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের আবেদন জানিয়েছেন। হ্যাশট্যাগ ‘এক্লিপ্সইটিং’ দিয়ে সে–ছবি পোস্টের কথা বলা হয়েছে। এই চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে কোনও রকম আশঙ্কার কারণ নেই। খালি চোখে দেখতেও কোনও সমস্যা নেই।
আপাতত তাই প্রার্থনা, ওই সময়টুকুর জন্য অন্তত আকাশের যেন মুখভার না থাকে।
ছবিঃ পিক্স অ্যাবে।