ডেঙ্গি নয়, রোগ সংক্রমণের আতঙ্কে ভুগছে মেডিক্যাল কলেজ
বিভিন্ন ধরনের জ্বরের প্রকোপ জেলায় সর্বত্র। এর মধ্যে আছে ডেঙ্গিও৷ মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য আসছেন৷ তাঁদের অধিকাংশই জ্বর সহ অন্যান্য উপসর্গে আক্রান্ত৷ শুধু আউটডোরে নয়, হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলিও রোগীতে ছয়লাপ৷ প্রতিটি ওয়ার্ডে উপচে পড়ছে রোগী৷ ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরের বারান্দা, এমনকি সিঁড়িঘরের নীচেও রাখা হয়েছে রোগী৷ এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে চিকিৎসকরা৷ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা জানা নেই কারোর৷

গ্রামীণ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে রেফার করার প্রবণতা ত্যাগ করার আবেদন জানিয়েছেন মালদা মেডিক্যালের সহকারী অধ্যক্ষ ও হাসপাতাল সুপার৷
মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মোট বেড রয়েছে ৭৫০টি৷ অথচ এই মুহূর্তে ১,২৮৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন৷ হাসপাতালের করিডর, বারান্দা, সিঁড়ি সহ সমস্ত জায়গায় রোগী রাখতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ৷ জানালেন সহকারী অধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার অমিত দাঁ৷ চিকিৎসকরাও তাঁর কাছে অভিযোগ করছেন এত রোগীকে চিকিৎসা করতে পারছেন না তাঁরা৷ সবচেয়ে বড়ো বিষয়, এই মুহূর্তে এই হাসপাতালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অনেক কম৷ হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ ১৯৮ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর মধ্যে রয়েছেন মাত্র ৭৩ জন৷ বরাদ্দ ৫৬ জন সাফাইকর্মীর মধ্যে রয়েছেন মাত্র ২৭ জন৷ অথচ যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে গেলে এই কর্মীদের উপরেই তাঁদের নির্ভর করতে হয়৷ তাই মালদা মেডিক্যালে রোগীদের যথাযথ পরিষেবা দিতে যে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ অমিতবাবু বলেন, বন্যার পর জেলা জুড়েই বিভিন্ন ধরনের জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে৷ প্রতিদিনই প্রচুর জ্বরের রোগী জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছেন৷ এই হাসপাতালে মেল ওয়ার্ডে ১১৯ জন রোগী রাখতে পারেন তাঁরা৷ সেখানে ভর্তি রয়েছেন ২৫০ জন৷ ১১০ জন রোগীধারণ ক্ষমতার ফিমেল ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ২৫০ জনের বেশি৷ সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, গ্রামগঞ্জে কারোর জ্বর দেখা দিলেই সেই রোগীকে মালদা মেডিক্যালে রেফার করে দেওয়া হচ্ছে৷ স্থানীয় হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এই মুহূর্তে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের দায়িত্ব নিতে চাইছে না৷ প্রাথমিক পরীক্ষায় রোগীর রক্তে এনএস ১ ধরা পড়লেই আতঙ্ক তৈরি হয়ে যাচ্ছে৷ অথচ এনএস ১ নিয়ে ভয়ের তেমন কারণই নেই৷ তাই তাঁরা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, অযথা যেন মেডিক্যালে রোগী রেফার না করা হয়৷ তা না হলে আরও বড়ো বিপদ দেখা দিতে পারে৷ এক রোগী থেকে রোগ আরেক রোগীর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না৷ কারণ, রোগীর চাপে এই মুহূর্তে কোনও ওয়ার্ডেই মশারি টাঙানোর জায়গা নেই৷ এই বিপদ নিয়ে সবাইকেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন৷