আবাস যোজনার তদন্তে গিয়ে চক্ষু চড়ক গাছ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের
top of page

আবাস যোজনার তদন্তে গিয়ে চক্ষু চড়ক গাছ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের

একবেলার তদন্ত৷ তাতেই কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় ‘দুর্নীতি’ চিচিংফাঁক৷ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সামনে মুখ পুড়েছে জেলা প্রশাসনের৷ তবে তদন্ত নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে টুঁ শব্দটি করেননি কেন্দ্রীয় কোনও প্রতিনিধি৷ তবে তাঁদের রিপোর্ট পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে নিশ্চিতভাবেই যে প্রশাসনের সঙ্গে শাসকদলকে বিড়ম্বনায় ফেলবে, তা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেই পরিষ্কার৷


আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মতো মালদা জেলাতেও তদন্ত করতে এসেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলটি৷ গতকাল রাতে তিনজনের ওই প্রতিনিধি দল মালদায় এসে পৌঁছেছে৷ দলে রয়েছেন ডেপুটি সেক্রেটারি শক্তিকান্ত সিং, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার চাহাত সিং ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেকশন অফিসার গৌরব আহুজা৷ রাতেই তাঁরা জেলাশাসক সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ আজ জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তাঁরা৷ কথা বলছেন এই প্রকল্পের তালিকায় নাম থাকা এবং নাম না থাকা গ্রামবাসীদের সঙ্গেও৷ সকালে প্রথম পর্যায়ের তদন্ত শেষ হয়েছে৷ বিকেলে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের তদন্ত৷


আজ সকালে প্রথমে কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের চরি অনন্তপুর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় তদন্তে যান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা৷ তাঁদের সঙ্গে পুরো সময় ধরে ছিলেন দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক বৈভব চৌধুরি ও জামিল ফতেমা জেবা৷ ছিলেন ওই ব্লকের বিডিও৷ কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের নজরে পড়ে, বিশাল পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও এক রেশন ডিলারের নাম উপভোক্তাদের তালিকায় রয়েছে৷ শুধু ওই ডিলারই নন, আরও অনেক পাকা বাড়ির মালিকের নামও সেই তালিকায় জ্বলজ্বল করছে৷ এদিকে অনেক গরিব মানুষের নাম তালিকায় নেই৷


কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লক থেকে দলটি কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের বাঙ্গীটোলা গ্রামপঞ্চায়েতে আসে৷ ওই পঞ্চায়েতের গোঁসাইহাটে প্রথমে তদন্ত চালায় কেন্দ্রীয় দলটি৷ তখনই ধরা পড়ে, ওই গ্রামের বাসিন্দা, কলেজকর্মী সাদ্দাম হোসেনের বড়োসড়ো পাকা বাড়ি থাকলেও তিনি কেন্দ্রীয় আবাসের ঘরের জন্য চিহ্নিত হয়েছেন৷ তদন্তকারীরা তাঁর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন৷ এরপর ওই পঞ্চায়েতেরই ফিল্ড কলোনি৷ সেখানে বসবাস বড়ো কাঠ ব্যবসায়ী জরিপ শেখের৷ প্রাসাদোপম বাড়ি তাঁর৷ কিন্তু প্রশাসনের নথি বলছে, তাঁর মাথার উপর কোনও ছাদ নেই৷ তাই তাঁকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাড়ি দিতে হবে৷ সব দেখেশুনে হতভম্ব কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য৷



কালিয়াচক থেকে এবার ইংরেজবাজার৷ ব্লক বদল হলেও ‘দুর্নীতির’ ছবির কোনও বদল হয়নি৷ অমৃতি গ্রামপঞ্চায়েতের কামাত গ্রামে আরও একবার সামনে চলে এল সেই ছবি৷ এই প্রকল্পে উপভোক্তাদের তালিকায় নাম কাশু ঘোষের৷ তিনি নাকি পেশায় শ্রমিক৷ ছ’ভাইয়ের সবাই নাকি শ্রমিক৷ কিন্তু বিশাল দোতলা বাড়ি৷ জানা যাচ্ছে, কাশু ঘোষ ও তাঁর পরিবার এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা৷ কাশুবাবুকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রী শ্যামা ঘোষের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা৷ যদিও শ্যামাদেবী দাবি করেছেন, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দল করেন না৷ তাঁর স্বামীরা ছ’ভাই মিলে মজুরির টাকা জমিয়ে এই বাড়ি তৈরি করেছেন৷




তদন্ত এখনও শেষ হয়নি৷ সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘দুর্নীতির’ ছবিটা আরও কতটা বড়ো আকার নেয় সেদিকে তাকিয়ে সবাই৷ কিন্তু এসব প্রমাণিত ‘দুর্নীতির’ পর কেন্দ্রের তরফে কী পদক্ষেপ করা হয়, তা নিয়েই সবচেয়ে বড়ো উদ্বেগ৷ সেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে উপভোক্তা, শাসকদল থেকে শুরু করে প্রশাসনের মধ্যেও৷


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page