বঙ্গবিদ্রুপ সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম
বিদ্রুপ বঙ্গজীবনের অঙ্গ। তার আকৃতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পালটায়, কিন্তু ফিকে হয়ে যায় না। সেই সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিমের মতন যার ছোঁয়া দশকের পর দশক বাংলার কালচারের সঙ্গে মিলেমিশে আছে। বঙ্গের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ তাই ঐতিহাসিক হোলসেল; ইয়ার এন্ডিং এর গুঁতোয় দমে যাওয়ার পাত্রটি সে নয়। বিদ্রুপের উৎস বোধহয় বঙ্গজ ফুলবাবুর ইংরেজ আদবকায়দায় চমকে গিয়ে তার ভাষায় ডুব দেওয়া, আর বাংলাকে দূরে ঠেলে দেওয়ায়। ক্রমে সেই হায়ারার্কি পালটে আজকের বকচ্ছপ রূপ নিল। বিদ্রুপের তেজ আরও বাড়ল। ট্যাঁশ বাঙালির ইংরেজি 'বং' এ যেমন ব্যঙ্গ বিদ্রুপ মিলেমিশে একাকার। তাই বং পুরুষ-মহিলাদের পয়লা বৈশাখই হয়তো একমাত্র 'বং কানেকশন'। বাঙালির ব্যঙ্গ আর বিদ্রুপের মধ্যেকার ফারাক কিন্তু এক চুলের। তার ফাঁকেই বঙ্গজনের প্রখর মেধা, বুদ্ধি আর পরিমিতিবোধ। ব্যঙ্গের সীমানা পার করলেই বিদ্রুপের প্রবল শ্লেষ, অনধিকার চর্চার গা-রিরি করা হাসি। টেনিদা, ঘনাদা বা এমনকি ফেলুদার অমর বচন ব্যঙ্গের সীমানা পেরিয়ে কখনো বিদ্রুপের কোর্টে এসে পড়েছে কি? যাক সে কথা। আজকের গ্লোবাল বাঙালির ব্যঙ্গ বিদ্রুপ বাছবিচারের ধার ধরে না। সীমানার ওপর দিয়েই হোক বা সীমানার নীচে দিয়ে সুড়ঙ্গপথে - বঙ্গের বিদ্রুপ সশব্দে বিরাজমান। সে শেয়ার হয়, লাইকপ্রাপ্ত হয় কপাল খারাপ থাকলে তার জেরে জেলের ঘানিও টানতে হয়। কিন্তু সে বিদ্যুৎ তরঙ্গের মতন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শুধু এই ছড়াছড়ি ভরকেন্দ্রটা সরে সরে মধ্যরাত পরবর্তী সময়ে এসে পড়েছে। সকালের ঢুলু ঢুলু চোখে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া ছেলেমেয়েরা যে বাপ-মা প্রদত্ত বায়োলজিক্যাল ক্লকটাকে উলটে দিয়ে পালটে দিয়ে মধ্যরাত টু ভোররাতে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ প্রেম বিরহ আদানপ্রদান করেছে, তা বলাই বাহুল্য।
অলংকরণঃ মৃণাল শীল