বাধাই হো: ফিল্ম যদি ঠিকঠাক হয়, সুপারস্টার লাগেনা, অভিনেতা দিয়ে দিব্যি
top of page

বাধাই হো: ফিল্ম যদি ঠিকঠাক হয়, সুপারস্টার লাগেনা, অভিনেতা দিয়ে দিব্যি চলে!

বড়ো বাজেটের গ্ল্যামারের হাইওয়েতে না গিয়ে নতুন প্রজন্মের পরিচালকেরা মধ্যবিত্তের চেনা গল্পে 'সস্তায় পুষ্টিকর', বুদ্ধিদীপ্ত এবং রসবোধ সম্পন্ন ছবি বানাচ্ছেন। এই নয়া বলিউডের অনেকেই আবার, যে বিষয়গুলো সামাজিক 'ট্যাবু', যা নিয়ে মধ্যবিত্তের ছুঁৎমার্গ এখনো কাটেনি সেগুলো নিয়ে ছবি করছেন, যেমন 'লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা', 'শুভ মঙ্গল সাবধান', 'তুমহারি সুলু', 'টয়লেট এক প্রেমকথা' ইত্যাদি। এই তালিকায় নতুন সংযোজন 'বাধাই হো'। আশার কথা দর্শক এই ছবিগুলো পছন্দ করছেন।


এক প্রৌঢ় দম্পতি, তাদের দুই সন্তান যার মধ্যে একজন বিবাহযোগ্য এবং তাদের খিটখিটে দাদি- এই হল দিল্লীর মধ্যবিত্ত কৌশিক পরিবার। হঠাৎ করে এই দম্পতি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিড়ম্বনার এক শেষ! আত্মীয়স্বজন কি বলবে, সমাজ কি বলবে, বাড়ির সদস্যরাই বা কীরকম প্রতিক্রিয়া দেবে এবং সময়ের ঝড় কাটিয়ে কি করে উত্তরণ ঘটবে- এই নিয়েই অমিত রবিন্দর শর্মার দ্বিতীয় ছবি 'বাধাই হো'। পুরো ছবিটি মজার এবং মজা করতে করতে পরিচালক প্রশ্ন তুলেছেন আমাদের 'সংস্কারের টিকটিকি'টিকে নিয়ে যে অকারণেই মাঝেমধ্যে টিকটিক করে ওঠে!


বাধাই হো: ফিল্ম যদি ঠিকঠাক হয়, সুপারস্টার লাগেনা, অভিনেতা দিয়ে দিব্যি চলে!
বাধাই হো:

পুরো ছবিটি মজার এবং মজা করতে করতে পরিচালক প্রশ্ন তুলেছেন আমাদের 'সংস্কারের টিকটিকি'টিকে নিয়ে যে অকারণেই মাঝেমধ্যে টিকটিক করে ওঠে!

গল্প দু'লাইনের এবং সহজ, কিন্তু কে না জানে সহজ গল্প বলাটা সহজ নয়। ছবি শুরু হয় সাবলীল ভাবে। প্রতিটি চরিত্র এবং তাদের নিজস্ব রসায়ন সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়। দিল্লী নিজেও এই ছবির অন্যতম চরিত্র- দিল্লীর লোকজন, দিল্লীর পড়শি, দিল্লীর এলিট কালচারের সঙ্গে মধ্যবিত্তের ক্লাস কনফ্লিক্ট এবং দিল্লীর ঠাণ্ডা! ছবির যা গল্প তাতে এই ছবি ওভার দ্য টপ কমেডি হতেই পারত কিন্তু পরিচালক কমেডিতে ভেসে যাননি, শেকড়টা বাস্তবের মাটিতেই গাঁথা ছিল। ইনডোরে করা ক্যামেরার কাজের ডিটেলিং খুব ভাল- লোদি কলোনির সরকারি আবাসন থেকে রান্নাঘর- ভীষণ বিশ্বস্ত। ছবির সেট একেবারে মধ্যবিত্তের বাড়ি থেকে নিয়ে পর্দায় বসিয়ে দেওয়া। শীতের সকালে লেপের আরামে অর্ধেক শরীর ডুবিয়ে বসে থাকার দৃশ্য আমাদের খুব পরিচিত কিন্তু এর আগে কটা হিন্দি ছবিতে আমরা এই দৃশ্য দেখেছি!

চরিত্রগুলো স্বাভাবিক এবং স্বচ্ছন্দ। বড় ছেলে নকুলের চরিত্রে আয়ুষ্মান খুরানা এত সহজ, সাধারণ 'দিল্লী কা লোন্ডা' যে ভুলে যাই মাত্র দশদিন আগে আমরা অন্য আয়ুষ্মান খুরানাকে 'অন্ধাধুন' ছবিতে দেখেছি। আয়ুষ্মান এই ছবির নায়কোচিত ত্রাতা নন, অনেক দোষ-দ্বন্দ্ব নিয়ে একটা মানুষ। সান্য মালহোত্রাকে দেখে ভাল লাগে। কোনো চাবুক চেহারার সুন্দরী নায়িকা নয়, পরিচালক একটা মানবী চরিত্র উপহার দিয়েছেন।

তবে এই ছবির চুম্বক আকর্ষণ হল মাঝবয়সী দম্পতির চরিত্রে গজরাজ রাও - নীনা গুপ্তা এবং দাদির চরিত্রে সুরেখা সিক্রির অভিনয়। গজরাজ অভিনীত চরিত্রটি আমাদের চেনা চরিত্র কিন্তু তাঁর শরীরী ভাষা এবং অভিব্যক্তি চেনা চরিত্রেও নতুন তাৎপর্য যোগ করেছে- যেভাবে তিনি তাঁর রোজকার ঘরকন্না করেন, তার স্ত্রীকে কবিতা পড়ে শোনান, তাঁর মা এবং স্ত্রী এই দুই সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেন, সর্বোপরি 'অসময়ের' পিতৃত্ব নিয়ে তাঁর অপ্রস্তুত বোধ এবং অসহায়তা- সুন্দর ফুটেছে তাঁর চোখেমুখে। বিয়ে বাড়িতে যে অনুরাগ নিয়ে তিনি তাঁর স্ত্রীকে দেখেন, কথার ফাঁকে বুনে দেন না বলা কথাকেও- অবাক করা অভিনয়! নীনা গুপ্তা মধ্যবিত্ত বাড়ির গৃহবধূ, স্বামী-সন্তানের পাশে দাঁড়ানো থেকে সামাজিকতা রক্ষা, শাশুড়ির দেখভাল করা থেকে শুরু করে ন'মাসের অন্তঃসত্ত্বা- অনবদ্য। দাদির চরিত্রটি পুরুষ তন্ত্রের আবহমান পরম্পরা এবং ঐতিহ্যে ধোঁয়া দেওয়া আমাদের পরিচিত নারী চরিত্র। আচরণে খিটখিটে, কিন্তু ভেতরে বুঝনদার, বাড়ির মেয়েটির অসহায়তার খবর রাখে আর জানে কখন মায়া আর ভালবাসা দিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে হবে। এই চরিত্রে তুমুল অভিনয় করেছেন সুরেখা সিক্রি। কখনো যদি গল্পে ধার কমেছে, তো এই চরিত্রগুলোর অভিনয় টেনে রেখেছে।

কিছু বিচ্যুতি আছে। ছবির প্রথমার্ধের প্রাণোচ্ছলটা, দ্বিতীয়ার্ধে ফ্যামিলি ড্রামা হতেই, ছবির সুর কিছুটা কেটে যায়। পরিবারের পাশে থাকার, বেঁধে থাকার মাখোমাখো গল্প হয়ে যায়। ছবির ফোকাস যায় সরে। মাত্রাতিরিক্ত আবেগে বিরক্তি আসে, গানগুলোকে মনে হয় ছক মেনে জোর করে ঠাসা। এরকম ছবিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গান এবং আবহ না থাকলেই ভাল হত। আবেগ এবং গানের ব্যবহারে মাত্রাজ্ঞানটা ঠিক থাকলে এটি একটি সংবেদনশীল কমেডি-ড্রামা হতে পারত।

এসব সত্ত্বেও ছবিটা একেবারে শেষ দৃশ্যে এসে খুঁজে পায় উত্তরণ। ভালবাসা-অনুরাগ-মায়া দিয়ে এক মন্তাজ তৈরি হয় যেন! নয়া বলিউডের ক্যানভাসে এমন সব সত্যিকারের বাঁচার গল্প আসুক- দর্শক সমৃদ্ধ হোক।


আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আমার রেটিং : পাঁচ এ তিন।

বিজ্ঞাপন

Malda-Guinea-House.jpg

আরও পড়ুন

bottom of page