আমাদের মালদা ডিজিট্যাল

Apr 13

ভোটের দায়, এবং অনাদায়

আর হাতে গোনা ছ'দিন৷ দেশ জুড়ে আসরে নামবে জনতা জনার্দন৷ শুরু হবে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোটদান৷ প্রথম দুটি পর্বের নির্বাচনের প্রচারে ইতিমধ্যে কাঁপছে উত্তরের পাহাড়-জঙ্গল৷ ঢেউ আছড়ে পড়েছে মালদার সীমানায় দুই দিনাজপুরেও৷ দুই পর্বের প্রচারের ডঙ্কায় প্রমাণিত, এরপরেই মালদার পালা৷ দিদি-মোদির হাওয়া পাখি মাঝেমধ্যেই চক্কর খাবে আকাশে৷ দু’জনের সঙ্গীসাথীরাও খুব একটা পিছিয়ে থাকবেন বলে মনে হয় না৷ পাখির পেট থেকে বেরিয়েই এক আকাশ প্রতিশ্রুতি, আস্তিন গুটিয়ে একে অন্যকে আক্রমণ, ভোটের শেষে আবারও দু’বছরের প্রতীক্ষা, আরও একটি ভোটের, এসব মানুষের জানা৷ তাই ভোট নিয়ে এখন মানুষের সেই উৎসাহ নেই৷ দিতে হয় তাই দেওয়া৷ বক্তব্য অধিকাংশের৷

বস্তুত প্রতি ভোটে প্রতিশ্রুতির ধাক্কা খেতে খেতে মালদাবাসীর পিঠ আজ দেওয়ালে৷ সেই বহরে কী নেই! গঙ্গা সহ অন্যান্য নদী ভাঙন, কর্মসংস্থান, পরিযায়ী সমস্যা, আম-রেশমের সোনালি ভবিষ্যৎ, ফসলের সঠিক দাম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ, স্বচ্ছ প্রশাসন, আরও কত কী! কারও মুখে শোনা যায় না চোরাকারবার বন্ধে কী ভূমিকা নেওয়া যায়, শিশুশ্রম বন্ধে কী করা উচিত, নারী নির্যাতন কিংবা ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যধি দূর হবে কীভাবে, যেসব জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে তা আবার গরিবের নাগালে আসবে কীভাবে, নাহ! এসব সিলি পয়েন্ট নিয়ে ভাবার অবকাশ কারও নেই৷

যেসব জায়গায় রাজনীতির কোনও ভাবনা নেই, মানুষের ভাবনা শুরু হয় সেখান থেকেই৷ রোটি, কাপড়া, মকানের স্বপ্ন দেখা মানুষ কখনও মাসে এক হাজার, কখনও মাসে তিন হাজার ভিক্ষাদানের কথা শোনে৷ হাতেও পায়৷ তাতেই দিন বদলের স্বপ্ন দেখে৷ উন্নত রাজ্য কিংবা উন্নত দেশ গড়ার ভাবনা আর তাদের চিন্তায় থাকে না৷ আর সেটা বুঝেই এখন নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ চোরাকারবারী, অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে৷ বর্তমানে দেশ কিংবা রাজ্য, রাজনীতির নিয়ন্ত্রক তারাই৷

এই মুহূর্তে জেলা জুড়ে বড় চর্চা, কী হবে দুই কেন্দ্রে? কে জিতবে, কে হারবে? এক দশক আগেও এই সময় অর্থাৎ ভোটের মুখে গ্রামগঞ্জের চায়ের দোকানেও গভীর আলোচনা চলত৷ এখন চলে না৷ তবু বৈষ্ণবনগর, কালিয়াচক, হরিশ্চন্দ্রপুরের মতো সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, মাসল আর মানি যেদিকে, ভোট সেদিকে৷ তাতেই ভোটের আঁচ বোঝা আরও মুশকিল হয়ে পড়ছে৷ চোরাকারবারী, অসাধু ব্যবসায়ীরা বলছে, নিজেদের টিকিয়ে রাখতে গেলে বড় ফুলকে আপন করে নিতে হবে৷ জোড়া ফুলকেও সন্তুষ্ট রাখতে হবে৷ অর্থাৎ ধোঁয়াশা এখানেও৷

তৃতীয় পর্বের নির্বাচনে প্রচার পর্ব সবে গতি পেতে শুরু করেছে মালদার দুটি কেন্দ্রে৷ এবার দুটি কেন্দ্রই ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি৷ আবার একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে একই নিশানা করেছে তৃণমূলও৷ একুশের ফল যদি এই মুহূর্তে ভোটে হার-জিতের মাপদন্ড হয়, তবে উত্তর মালদায় এগিয়ে পদ্ম, দক্ষিণ মালদায় ঘাসফুল৷ কিন্তু পাটিগণিতের অংক কী সবসময় মেলে? এখনও অনেক পারমুটেশন, কম্বিনেশন বাকি৷ তারপরেই বোঝা যাবে ভোটের ছকে কে করবে চেক মেট৷ তবে যাই হোক, আমআদমি চাইছে, এবার অন্তত তাদের দিকেও নজর করুক নতুন সরকার৷

আমাদের মালদা এখন টেলিগ্রামেও। জেলার প্রতিদিনের নিউজ পড়ুন আমাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে। সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন